- জনবসতিতে বিপজ্জনক শিল্পের তালিকা তৈরি শুরু
বিপদে বন্দর
- বন্দরে ২০৯ কনটেইনার বিপজ্জনক পণ্য
- ৩০ বছরের পরিত্যক্ত এক টন নাইট্রিক অ্যাসিড
ভৌগোলিক দিক থেকে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের কারণে চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লাইফলাইন বলা হয়। ইতোমধ্যে লোকালয়ের আশেপাশে গড়ে ওঠা বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন। আগামী সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা প্রস্তুত করা হবে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে প্রশাসন থেকে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেছেন, যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান বিপজ্জনক, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য-জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে এ রকম একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তালিকাটি তৈরি হবে। যদি এ রকম কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়, তবে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসকের মতে, বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। তার মধ্যে চট্টগ্রাম সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ। দেশের যত রকম ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে তার সিংহভাগ পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে। এখানে আগে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেই শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আশপাশে জনবসতিগুলো গড়ে উঠেছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো যখন গড়ে উঠে তখন তারা সরকারের অনুমতি নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে কাজ করছে প্রশাসন। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের তালিকা ইতোমধ্যে প্রশাসনের হাতে গেছে। জনবসতি এলাকায় গড়ে ওঠা বিপজ্জনক কলকারখানা বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হচ্ছে।
এদিকে, চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, গত তিন দশক আগে ১৯৯২ সালে আনা বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্যের চালান এখনও পড়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে মাঝে মাঝে কিছু রাসায়নিক পণ্য ধ্বংস বা নিলামে বিক্রি করা হলেও এখনও পড়ে আছে ২০৯ কনটেইনার বিপজ্জনক পণ্য। প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো কনটেইনারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও সরানো হচ্ছে না রাসায়নিকসহ বিপজ্জনক পণ্যগুলো। কিছু চালানে মামলা সংক্রান্ত বিষয় থাকায় সরানো বা ধ্বংস অথবা নিলাম করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের তৈরি করা তালিকায় পি-শেডের ২৮টি লট করা হয়। ওই তালিকায় একটি লটে রয়েছে ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা নাইট্রিক এসিড। এ নাইট্রিক এসিড খুবই বিপজ্জনক রাসায়নিক। এক কনটেইনারে এক হাজার কেজি বা এক টন ওজনের নাইট্রিক এসিডের চালানটি বন্দরে পড়ে আছে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯৯২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বড় জাহাজ এমভি অফটিমা জাহাজে করে আনা নাইট্রিক এসিডের চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরের রিসিভ করা হয়। চালানটি ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় হিসাব করলে দেখা যায় প্রায় ৩০ বছর ৫ মাস ধরে বন্দরের পি শেডে রয়েছে। এ চালানটি গত ২০১৮ সালে একবার নিলামে তোলার জন্য ইনভেন্ট্রি করা হয়েছিল। কিন্তু নিলামে সেটি বিক্রি হয়নি। রাসায়নিক এ পণ্যটি বর্তমানে ধ্বংসযোগ্য হিসেবে ‘রিমার্ক’ করা রয়েছে।
আনন্দবাজার/শহক