ঢাকা | রবিবার
১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাহাড়িপণ্যের বাণিজ্যে সংকট

পাহাড়িপণ্যের বাণিজ্যে সংকট

পাহাড়ে এখনও টিকে আছে আদি কৃষি পদ্ধতি। সমতলের চেয়ে পাহাড়ে কৃষিপণ্যে সনাতনী ধারা দেখা যায়। বহুমুখী কৃষিপণ্য উৎপাদনেও ব্যাপক আগ্রহী পাহাড়ের চাষিরা। উৎপাদিত পণ্য বেচাকেনা আর আদান প্রদান ছাড়াও কৃষিতে ঐতিহ্যবাহী ধারা এখনও বিদ্যমান।

পাহাড়ের বহুমুখী কৃষিপণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে আদা, হলুদ, মরিচ থেকে শুরু করে নানা রকমের শাকসবজি অন্যতম কৃষিপণ্য। তবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপন্ন করা পণ্যের সঠিক দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। সেই সঙ্গে সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় বেশিরভাগ সময়ই পচে নষ্ট হয়ে যায় বেশিরভাগ পণ্য।

এসব বহুমুখী সংকটের কারণে পাহাড়ি উদ্যোক্তারা সামনে এগুতে পারছে না। তারা কৃষিসহ নানা পণ্য ও কাঁচা মালামাল এবং নিত্যদিনের পণ্য কেনাবেচায় ছয়টি সংকট বা বাধাকে চিহ্নিত করেছেন। যেসব বাধার কারণে পাহাড়ের চাষিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এসব বাধা দূর হলেও পাহাড়ও হয়ে উঠতে পারে কৃষিপণ্যের অপার সম্ভাবনার ক্ষেত্র।

পুঁজি সংকট: মূলত, পাহাড়ে উদ্যোক্তাদের প্রধান সমস্যা পুঁজি। কোনো কিছু করতে গেলে পুঁজির জন্য বড় সমস্যায় পড়েতে হয় উদ্যোক্তাদের। খামার, পশু পালন ও বাগান চাষাবাদ ও ব্যবসা ও নানা কারণে পণ্য কেনাবেচার আগ্রহ থাকলেও তারা করতে পরছেন না একমাত্র পুঁজির জন্য। বেশিরভাগ মানুষের রেজিস্ট্রিকৃত জমি না থাকার কারণেও ব্যাংক থেকে বড় ধরনের ঋণের সুবিধা পাচ্ছেন না বলেও জানা যায়।

প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা: কিছু উদ্যোক্তার কিছু অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ থাকলেও বেশিরভাগ উদ্যোক্তার কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ নেই। সবক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব হচ্ছে না। কীভাবে মালামাল কেনাবেচা করা হবে, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও পরিচর্চা করবেন সে ব্যাপারে বেশিরভাগের নেই অভিজ্ঞতা কিংবা দক্ষতা। ভালো প্রশিক্ষণ পেলে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে সুফল মিলবে।

পরিকল্পনা: স্থান কাল পাত্র ভেদে কোথায় কী করবেন, কোন সময়ে কী করলে, কবে করলে ভালো হয় বা না হয় সে সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে যে যথাযথ পরিকল্পনা করতে হয় সে ব্যাপারে তেমন আগ্রহ থাকে না চাষিদের। কোথায় কি ঘাটতি রয়েছে সেসব ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য সঠিক পরিকল্পনার দরকার পড়ে। তবে পাহাড়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে আগ্রহ খুবই কম।

যোগাযোগ: পাহাড়ের ভূমির বৈচিত্রের কারণেই সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে মালামাল ও নিত্যপণ্য কেনাবেচা করতে প্রধান সমস্যাই হয়ে দাঁড়িয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। অনেক এলাকায় যোগাযোগের সুব্যবস্থা না থাকার কারণে পরিবহন ক্ষেত্রে জটিল ধরনের অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে পণ্যের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের।

বাজারজাতকরণ: যে কোনো ধরনের পণ্য, বিশেষ করে কাঁচামাল বা অন্য কোনো মালামালের ক্ষেত্রে পাহাড়ে প্রধান সমস্যা বাজারজাতকরণ। কোনোরকমে কাঁধে করে, শ্রমিক বা ছোট নৌকায় করে বেচার জন্য গ্রামের বাজারে নিয়ে পণ্য নিয়ে এলেও বিভিন্ন কারণে অনেক সময় বেচাকেনা হয় না। বাজারে চাহিদা সৃষ্টি আর সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য বাজারজাত কিংবা সঠিক বাজার পদ্ধতির দরকার পড়ে। তবে পাহাড়ে পণ্যের বাজার তৈরিতে সমস্যা বেশি। কাঁচামালের ক্ষেত্রে কাপ্তাই বা রাঙামাটির আড়তে নিয়ে যাওয়ার মতো ব্যবস্থা না থাকায় কম দামেই বিক্রি করে দিতে হয়।

সংরক্ষণ ব্যবস্থা: কাঁচা মালামালের বেলায় স্থানীয়ভাবে বাজারজাত বা বিক্রি করতে না পারলে সংরক্ষণের জন্য ভাবতে হয়। তবে পাহাড়ের ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায় এমনকি জেলা পর্যায় পর্যন্ত কোনো কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার নাই। তাই সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় স্থানীয়ভাবে পানির দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়। কাঁচামালের বেলায় এমনিতেই জুমে ও পাহাড়ে পণ্য পচে যায়।

মূলত পাহাড়ের দুর্গম এলাকা বা কোনো কোনো এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধাজনক না হওয়া এবং পরিবহন, জ্বালানি ও শ্রমিক খরচ বেশি হওয়ার কারণে শহর থেকে ব্যবসায়ী বা ক্রেতারা আসেন না। এতে পণ্য বেচাকেনায় চরম অসুবিধায় পড়তে হয়। অনেক ক্ষেত্রে লোকসান বুঝেও পনির দামেই বিক্রি করা হয় পণ্য।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন