ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মধুমাসে প্রাণ জুড়ানো ‘তালকুর’

মধুমাসে প্রাণ জুড়ানো ‘তালকুর’
  • গ্রাম থেকে শহরে তালের শাঁসের বেচাকেনা

চলছে মধুমাস। এই মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হরেক রকমের সুস্বাদু ফল। ফলের তালিকায় রয়েছে, আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু। এছাড়া অন্যতম আরেকটি ভিন্নধর্মী ফল তালের শাঁস। তবে সারি সারি তাল গাছ রাস্তার দু’ধারে আর চোখে না পড়লেও তালের শাঁস বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে বগুড়ার সান্তাহারে। গ্রাম্য ভাষায় এটি ‘তালকুর’ নামে বেশি পরিচিত। তাল ফলের নরম অংশটি খুবই সুস্বাদু। প্রচন্ড গরমে তালের এই শাঁসটি শহর ও গ্রামের মানুষের কাছে খুবই প্রিয়।

বর্তমানে শহর থেকে শুরু করে গ্রামের বিভিন্ন অলিগলিতে এই মৌসুমী ফল তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে। অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ীরা তাল গাছ থেকে অপরিপক্ক তাল ফল পাইকারী কিনে এনে কেটে কেটে বিভিন্ন দামে বিক্রয় করে। তবে নরম অবস্থায় তাল শাঁসের দাম অনেক বেশি। কিন্তু, দিন যতই যেতে থাকে এই তাল শাঁস ততই শক্ত হতে থাকে। তখন শাঁসের দাম কমতে থাকে এবং এক সময় তাল পরিপক্ক হয়ে গেলে তখন আর এই শাঁস খাওয়া সম্ভব হয় না।

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার প্রতিটি এলাকার তালগাছগুলোতে কিন্তু কচি তালে ভরে গেছে। মধুমাসের এ ফলকে কেউ বলে তালের শাঁস, কেউ বলে তালকুর, কেউ বলে তালের আটি। গরমের মধ্যে তৈলাক্ত খাবারের চেয়ে তালের শাঁস অনেক উপকারী। এর রয়েছে অনেক গুণাগুণ। তাই জৈষ্ঠ্যের এ মধুমাসে বাজারে নানা ফল ওঠলেও উপজেলার সান্তাহারে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে তালের শাঁস।

সান্তাহার রেলগেট এলাকায়  গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে তালের শাঁসের চাহিদা অনেক বেড়েছে। বিক্রেতা শাঁস কেটে সারতে পারছে না, ক্রেতারা দাঁড়িয়ে রয়েছে শাঁস নিতে। শিশু সহ সকল বয়সী লোকের মধ্যে এই তালের শাঁসের কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই তাল গাছ রয়েছে।

বিক্রেতারা জানান, অন্য মৌসুমি ফলের ক্ষেত্রে রাসায়নিক ব্যবহারের আশঙ্কা থাকলেও এই ফলের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয় না। তালশাঁস দীর্ঘ সময় তরতাজা রাখতে এসবের প্রয়োজন হয় না। ফলে গরমে তৃষ্ণা মেটাতে ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে সচেতন মানুষ নিজে খাওয়ার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের জন্য ভেজালমুক্ত তালশাঁস কিনছেন।

সান্তাহার রেলগেট এলাকার মালেক মিয়া প্রতি বছরই এ সময়ে তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালান। গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল ক্রয় করে গাছ থেকে পেরে এনে শাঁস বিক্রি করেন। তবে গাছে ওঠে, বাঁধা ধরে পাড়া সবচেয়ে কষ্টকর। বৈশাখ থেকে জৈষ্ঠ্যের অর্ধেক পর্যন্ত এ দেড় মাস চলবে তালের শাঁস বিক্রির কাজ। প্রতিদিন প্রায় ২শ থেকে ৩শ শাঁস বিক্রি করা যায়। একটি তালের ৩টি শাঁস আকার ভেদে ১০ থেকে ১২ টাকা দরে বিক্রি করছে। এতে তার প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা বিক্রি হয় ও প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা লাভ হয়।

রোকনুজ্জামান সরদার বলেন, তালের শাঁস একটি সুস্বাদু ফল অনেকগুনে গুনানীত। এই ফল অল্প সময় পাওয়া যায়। আমি এই ফল কিছু দিন পরপরই খাই। রেলগেট তাঁলের শাঁস খেতে আসা এক ক্রেতা রাহুল পারভেজ জানান, গরম থেকে এসে তালের শাঁস খেতে ভালই লাগে, মনটা জুড়ে যায়। ফলে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাঁড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে, কবির সে কবিতার মতো সারি সারি তাল গাছ রাস্তার দু’ধারে এমন দৃশ্য আর চোখে পড়েনা।

কালের বিবর্তনে আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার তাল গাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় মানুষ সখ করে বাড়ির পাশে কিংবা রাস্তার ধারে তালের বীজ বপন করতো। কিন্তু এখন আর তা চোখে পড়ে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন