বাবা ছেলের জীবন সংগ্রাম
বাজারে ভেজাল ও নিম্নমানের খাবারের ভিড়ে মানুষের হাতে ভেজালমুক্ত ভোজ্যতেল পৌঁছে দিতে গত ৫ বছর ধরে বিলুপ্ত প্রায় কাঠের ঘানিতে পিষে খাঁটি সরিষার তেল তৈরী করছেন রাজবাড়ী জেলার বাচ্চু ব্যাপারী (৫৫)। এ কাজে তাকে উৎসাহ ও সহযোগীতা করছেন তার ছেলে সবুজ ব্যাপারী (২৬)। বাচ্চু ব্যাপারী রাজবাড়ী জেলা সদরের চন্দনী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
গরু (বলদ) দিয়ে কাঠের ঘানি টানিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ কেজি সরিষা তেল উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন তিনি। তবে সরিষা দানা ও গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেমন একটা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না বাচ্চু ব্যাপারী। নিজেদের পরিবারে স্বচ্ছতা ফেরাতে দিন রাত বাবা ছেলের এ যেন এক জীবন সংগ্রাম।
স্বল্প পরিসরে মাত্র ২টা ঘানিতে তেল তৈরী করে ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক তেল দিতে পারছেন না তিনি। তার দাবি সরকারি সহায়তা পেলে বাড়াতে পারবেন তার কার্যক্রম। মেটাতে পারবেন খাঁটি সরিষা তেলের ক্রেতাদের চাহিদা। বর্তমানে ২৭০ টাকা প্রতি লিটার ও প্রতি কেজি ৩শ’ টাকা দরে সরিষা তেল বিক্রি করছেন বাচ্চু ব্যাপারী।
বাচ্চু ব্যাপারীর ছেলে সবুজ ব্যাপারী বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো চাকরী না হওয়ায় বাবার সঙ্গে কাঠের ঘানিতে তেল ভাঙ্গাচ্ছি। এতে আমার কর্মসংস্থান হয়েছে।
বাচ্চু ব্যাপারী বলেন, খাঁটি সরিষার তেল উৎপাদন ধরে রাখতে ও পরিবারের স্বচ্ছলতা আনতে দেশীয় প্রযুক্তিতে কাঠের ঘানি ও গরু দিয়ে তার এ ঘানিটি সচল রেখেছি। মাঝে মাঝে গরুর বদলে আমরাও ঘানি ঠেলে তেল উৎপাদন করি। রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, মাগুড়া, ফরিদপুর, ঢাকা থেকে তেলের চাহিদা আসছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে তেল উৎপাদন করতে পারছিনা। ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো ও ঘানির পরিসর বাড়াতে সরকারি সহায়তা চাই।
ঢাকা থেকে রাজবাড়ীতে বেড়াতে আসা জলিল মন্ডল জানান, রাজবাড়ীতে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। জানতে পারলাম চন্দনীতে কাঠের ঘানিতে সরিষার তেল ভাঙ্গানো হচ্ছে। নিজেই দেখতে আসলাম। ভালো লাগলো। ২ কেজি তেল কিনেছি।
কুষ্টিয়া থেকে তেল কিনতে আসা রমিজ মোল্লা বলেন, আমি এখান থেকে নিয়মিত সরিষার তেল কিনে খাই। কাঠের ঘানির তেলের মান ভালো।
চন্দনী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রব জানান, বাচ্চু ব্যাপারী তার পরিবারকে স্বচ্ছল রাখতে ও খাঁটি সরিষার তেল উৎপাদন ধরে রাখতে রাত দিন কষ্ট করে যাচ্ছেন। পরিধি ছোট হওয়ায় সে চাহিদা অনুযায়ী তেল উৎপাদান করতে পারছেনা।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মার্জিয়া সুলতানা জানান, ঘটনাটি শুনে বাচ্চু ব্যাপারীর ঘানিটি পরিদর্শন করেছি। তবে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে খাঁটি মানের সরিষার তেল উৎপাদন করতে তার কি ধরনের চাহিদা তার একটি কর্ম পরিকল্পনা উপজেলা প্রশাসনের কাছে দাখিল করলে তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে।