ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাবির সাইবার সেন্টারে নেই সেবাগ্রহীতা

দৈনিক আনন্দবাজার
ঢাবির সাইবার সেন্টারে নেই সেবাগ্রহীতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাশে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট সুবিধাসহ নানা ধরনের ডিজিটাল সুযোগ- সুবিধা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঢাবি সাইবার সেন্টার। কিন্তু বর্তমানে সাইবার সেন্টারটির অবস্থা বেহাল। বছরে কয়েক লাখ টাকা বরাদ্দের এ সাইবার সেন্টারটির সুফল পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। নেই কাঠামোগত উন্নয়ন, সঠিক পরিচর্যা ও সেবা। যার ফলে বিলুপ্তির পথে সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা।

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে সেবা নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ থাকলেও ১৪ বছর পর বর্তমানে সঙ্কটের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাইবার সেন্টার। সাইবার সেন্টার সংশ্লিষ্ট থেকে জানা যায়, শুরুতে প্রত্যেক সেবাগ্রহণকারীর কাছ থেকে প্রতি ১ ঘন্টায় ১২ টাকা হারে ফি নেওয়া হলেও গত দেড় বছর যাবৎ এ ফি নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, শিক্ষার্থীদের বহুদিনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই ফি নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

তবে ফি নেওয়া বন্ধ করলেও বাড়েনি সেবাগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। সেবা গ্রহণকারী বইয়ের স্বাক্ষর অনুযায়ী গত ৬ মাসে সাইবার সেন্টার থেকে সেবা নিয়েছে মাত্র ১০২ জন। যা মোট শিক্ষার্থীর  ০.০০২৮ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি – ফেব্রুয়ারি মাসে সেবা নিয়েছে ৩৪ জন শিক্ষার্থী। যথাক্রমে মার্চ -এপ্রিল এবং মে-জুন মাসে সেবা নিয়েছে ৩৬ ও ৩২ জন শিক্ষার্থী।

এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল একটু উদ্বেগ প্রকাশ করলেও শিক্ষার্থীদের মাঝে নেই কোনো উদ্বেগ। তারা বলছেন কর্তৃপক্ষ সঠিক সেবা নিশ্চত করতে পারছেন না বলে শিক্ষার্থীরা সেবা নিতে আসছেন না। শিক্ষার্থীরা প্রিন্ট করার সুযোগ নেই, ইন্টারনেট এক্সেসের গতি নেই সহ নানা ধরনের অভিযোগ জানিয়েছেন।

সাইবার সেন্টারের প্রতি অনাগ্রহের বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী আছে যারা ঢাবি সাইবার সেন্টার সম্পর্কে অবগত নন। তাহলে বুঝে নিন আমাদের সাইবার সেন্টার কতটা অগ্রসর? সারা বিশ্ব যেভাবে ইন্টারনেট ব্যাবহারে এগিয়ে গেছে সাইবার সেন্টার তার অনেকগুন পিছিয়ে আছে। যে কারণে আমাদের আগ্রহ কম।

সরেজমিনেও দেখা যায় সাইবার সেন্টারের বেহাল অবস্থার দৃশ্য। দেখা যায়, চেয়ারগুলো যত্রতত্র পরে আছে, ময়লার আস্তরণ লেগে আছে চেয়ার – টেবিলগুলোতে, ল্যাপটপ গুলো নির্দিষ্ট সারিতে না রেখে এদিক সেদিকে রাখা হয়েছে, ল্যাপটপ এবং পিসিগুলোর (পারসোনাল কম্পিউটার) গায়ে দেখা যায় ধুলোবালির আবরণ, মেঝেতে নেই কার্পেট। এ অবস্থায় প্রথম দর্শনে কেউ এটাকে একটা সাইবার সেন্টার হিসেবে মেনে নিতে পারবে না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাইবার সেন্টারটির বিষয়ে আমি অবগত নই। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

বিস্তারিত কথা হয় বিশ্বিবদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির উপ- গ্রন্থাগারিক মো. নাজমুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, আমাদের এখানে (সাইবার সেন্টার) বর্তমানে ১০ টি কম্পিউটার আছে। আগে এখানে পেমেন্টের ( প্রতি ঘন্টা ১২ টাকা)  একটা বিষয় ছিল এখন সেটা লাগে না।

ফি বন্ধ করে দেওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা সেবা নিতে আসতেছে না কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে স্মার্ট ফোনে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ফোনের মাধ্যমেই তাদের অধিকাংশ কাজ করেন বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান ব্যাবস্থায় একজন শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যাবহার করে আমাদের লাইব্রেরির অনলাইন রিসোর্সগুলো দেখতে পারবে, ডাউনলোড করতে পারবে এবং প্রিন্ট করলে চাইলে নির্দিষ্ট একটা পেমেন্ট করে প্রিন্ট করে নিতে পারবে৷ এ ব্যাবস্থা কে তিনি ই – সার্ভিস বলে উল্লেখ করেন।

সাইবার রুমের অব্যাবস্থাপনা সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকারি কাজ করতে হলে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেদিক লক্ষ্য রেখে আমরা সামনের বাজেট থেকে মেঝেতে কার্পেটের ব্যাবস্থা করবো। এ সময় তাকে কম্পিউটারের গাত্রে ধুলোবালির আস্তরণ নিয়ে অবগত করলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলেন নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন