ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রকল্পে বাড়ছে মেয়াদ-ব্যয়

প্রকল্পে বাড়ছে মেয়াদ-ব্যয়

বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা ও সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে বেশ কয়েকবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সময়মতো কাজ শেষ করতে বেশ কয়েকবার কঠোর নির্দেশনাও দিয়েছেন। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশনার পরও প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে গিয়ে সরকারের ব্যয় বাড়ছে প্রতিনিয়ত। তবে এবার শুধু মেয়াদ বৃদ্ধি নয়, মেয়াদ শেষ হলেও মূল কাজই শুরু হয়নি ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের।

রাজধানী শহর ঢাকার সঙ্গে দেশের ৩০ জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা করিডোরে যানজট কমাতে ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে সরকার। এসব এলাকার চার কোটি মানুষের যাতায়াত সুবিধা ও শিল্পবিকাশে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মাধ্যমে প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং ২০১৬ সালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়।

পরবর্তীতে ২০১৭ সালের জুন শুরু হয়ে চলতি বছরের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন মেয়াদ বাড়ছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির কাজ এ বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ ৫ বছরেও নকশা চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সচিব (সদস্য) মো. মামুন-আল-রশীদ। আর নকশা চূড়ান্ত হয়নি বলে মেয়াদ বাড়ছে। আর মেয়াদ বাড়লে ব্যয়ও কিছুটা বাড়ে বলে মন্তব্য করেন এ সরকারি কর্মকর্তা।

আজ বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৪ বছর মেয়াদবৃদ্ধি ও ৬৫১ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবসহ প্রকল্পটি উত্থাপিত হবে। এতে প্রকল্প ব্যয় ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একনেক কর্মসূচি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে একনেকে প্রকল্প অনুমোদন পেলেও এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ১৪০৩ কোটি টাকার। সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএসসি)।

প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, জায়গা ভরাট, ১২০০ পয়েন্টে মাটি পরীক্ষার কাজ হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কাজ ৯০ শতাংশ হয়েছে। মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে তার বক্তব্য, ‍ঋণের ওপর ভিত্তি করে কাজটা হবে। ঋণচুক্তি না হওয়ার কারণে বিলম্ব হয়েছে। তবে গত ১০ মে ঋণ কার্যকর হয়েছে। তাই এখন কাজ হবে। গত ৫ বছরেও কেন নকশা চূড়ান্ত হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, নকশা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করবে। ওরা করলেও এটা আমাদের দেবে না। কারণ আমরা তো পয়সা দেই নাই তাদের।

সূত্রমতে, প্রথমে আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়টি ৩৫ কিলোমিটার করার চিন্তা করা হরেও পরে দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়। যার মধ্যে থাকবে ১০ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার র‌্যাম্প এবং ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটার সড়ক। ১ দশমিক ৯২ কিলোমিটার দু’লেনের নবীনগর ফ্লাইওভার, ২ দশমিক ৭২ কিলোমিটার দু’লেনের ব্রিজ। ১৮ কিলোমিটার ইউটিলিটির জন্য ড্রেন এবং ডাক্ট, ৪ টি টোলপ্লাজা ও ৫০০ মিটার ওভারপাস।

প্রকল্পের পটভূমিতে অনুযায়ী, এশিয়ান হাইওয়ের এলাইনমেন্টের মধ্যে অবস্থিত প্রস্তাবিত ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসটি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সাথে ৩০টি জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা করিডোরে যানজট অনেকাংশে হ্রাস পাবে। তাছাড়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নিকট প্রস্তাবিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (বিমান বন্দর থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ের কুতুবখালি পর্যন্ত) সাথে সংযোগ স্থাপন করবে। ফলে যানজট নিরসন ও দ্রুত, নিরাপদ এবং ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

বর্তমান প্রকল্প অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস/বৃদ্ধির কারণে মোট ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি ঢাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে সেপ্টেম্বর ২০১৭ হতে জুন ২০২৬ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রথম সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। যার মধ্যে সরকারি ব্যয় ৭ হাজার ৮৬০ কোটি এবং ঋণ ৯ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ওপর গত ৬ ফেব্রুয়ারি পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্তের আলোকে আরডিপিপি পুনর্গঠন করা। সেতু বিভাগ সূত্র বলছে, ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর ঋণচুক্তি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কর্তৃক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বর্তমানে চায়না এক্সিম ব্যাংক কর্তৃক স্বাক্ষরের জন্য অপেক্ষামাণ।

রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনন, সাভার উপজেলা ও আশুলিয়া থানায় বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পে সংশোধনীর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল ডিপিপি অনুযায়ী ১০০ ভাগ বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে সংস্থানের বিষয় নির্ধারিত ছিল। তবে চূড়ান্ত ঋণ চুক্তি অনুযায়ী ৮৫ ভাগ বৈদেশিক ঋণের বিষয় চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়া, ডিপিপি’র ৩টি আইটেম (নিয়োগদাতার সুবিধাদি, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ভবন, রুট ক্লিয়ারেন্স) প্রকল্প ঋণের পরিবর্তে জিওবি অর্থে সম্পাদনের বিষয়ে চূড়ান্ত ঋণ চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। ফলে চূড়ান্ত ঋণ চুক্তি অনুযায়ী অনুমোদিত ডিপিপি’র প্রকল্প ঋণ ও জিওবি বরাদের সমন্বয়ের প্রয়োজন। সে বিবেচনায় মূল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৬ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় যানজট নিরসন ও জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে সংশোধিত প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন মেয়াদে কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রকল্প পরিচালক।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন