ঢাকা | শনিবার
৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৩শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মড়কে দিশেহারা চিংড়ি চাষি

মড়কে দিশেহারা চিংড়ি চাষি

সাদাসোনা খ্যাত বাগেরহাটের বাগদা চিংড়ি ঘেরে মড়ক লেগে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতিরমুখে পড়েছে চাষিরা। প্রচণ্ড তাপদাহ, অনাবৃষ্টি, ভাইরাস, অপরিকল্পিতভাবে মাছ চাষ ও হ্যাচারির অপুষ্ট পোনা ছাড়ার কারণে বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছে। তবে চিংড়ির এ মড়কে রপ্তানি আয়ে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছে মৎস্য বিভাগ। গত এক মাস ধরে এ জেলার বাগদা চিংড়ি ঘেরে চিংড়ি মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।

বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা চিংড়ির জন্য বিখ্যাত। এরমধ্যে বাগেরহাট জেলা অন্যতম। এ খ্যাতে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১২ থেকে ১৫ ভাগ আসে বাগেরহাট থেকে।

ঘেরে জাল ফেললে তাতে মরা বাগদা চিংড়ি উঠে আসছে। মরে যাওয়া চিংড়ি লাল বর্ণ ধারণ করছে।

জানা গেছে, বাগেরহাটের নয় উপজেলাতেই কমবেশি বাগদা চিংড়ি মারা যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি চিংড়ি মরছে জেলার রামপাল ও মোংলা উপজেলাতে। এ দুই উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ৯০ ভাগ ঘেরের বাগদা চিংড়ি মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে চাষি ও মৎস্য বিভাগ।

বাগেরহাট জেলার ৯ উপজেলাতেই কমবেশি চিংড়ি চাষ হয়। জেলায় ৬৬ হাজার একর জমিতে মাছের ঘের রয়েছে। ঘেরের সংখ্যা ৭৩ হাজার।

চাষি আদিল শেখ বলেন, তিন বিঘার দুটি ঘেরে তিন লাখ টাকা খরচ করে মাছ ছাড়ি। এপর্যন্ত আমি হাজার বিশেক টাকা মাছ ধরে বিক্রি করেছি। সম্প্রতি আমার ঘেরে ভাইরাস লেগে মাছ মরে গেছে। সময়মত পানি না পাওয়া ও পানিতে অতিরিক্ত লবন থাকার মাছ মারা গেছে। এছাড়া এবছর বৃষ্টিও নেই। এবছর আমার খরচের টাকাই উঠবে না।

রাখাল বিশ^াস বলেন, দেড় বিঘা জমিতে ৮০ হাজার টাকা খরচ করে চিংড়ি চাষ করেছিলাম। আমি এখনো এক টাকার মাছও ধরতে পারিনি। হ্যাচারির খারাপ পোনা ছাড়ার কারনেই মনে হয় সব মাছ মরে গেছে। বর্তমানে হ্যাচারির পোনার মান ভাল না। পোনার মান ঠিক রাখতে সরকারের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান এই চাষী।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) এ এস এম রাসেল বলেন, বাগেরহাট জেলার ৯ উপজেলাতেই চিংড়ি চাষ হয়। সম্প্রতি সময়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে জেলার মোংলা ও রামপাল উপজেলাতে অস্বাভাবিকহারে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। এরমধ্যে রামপাল উপজেলার চারটি ইউনিয়ন এবং মোংলার দুটি ইউনিয়নে বেশি আক্রান্ত হয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে গত এক মাস ধরে মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা বেড়েছে। তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রী পর্যন্ত ওঠানামা করছে। একারণে ঘেরের চিংড়ি অস্বাভাবিকহারে মারা যাচ্ছে। এছাড়া চাষিদের ঘেরে নিম্নমানের পোনা ছাড়া কারণেও মাছ মরে যাচ্ছে বলে ধারনা করছি। আমরা চাষির মারা যাওয়া চিংড়ি সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য গবেষণাগারে পাঠিয়েছি। তাদের প্রতিবেদন হাতে পেলে চিংড়ি মারা যাওয়ার সঠিক কারণ জানা যাবে। আমরা জেলা ও উপজেলার থেকে চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়ে আসছি। ঘেরের পানির তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে চাষিদের বলা হচ্ছে। তারা যখন ঘেরে পোনা ছাড়বে অবশ্যই যেন তা পকেট ঘেরে পরিচর্যা করে ছাড়ে সেই পরামর্শ তাদের দিচ্ছি। আগামীতে নতুন করে পোনা ছেড়ে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে করেন এই মৎস্য কর্মকর্তা।

সংবাদটি শেয়ার করুন