রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যার ক্ষয়ক্ষতিতে স্তম্ভিত মানুষ

বন্যার ক্ষয়ক্ষতিতে স্তম্ভিত মানুষ

ভয়াবহ ক্ষত

  • করোনার পর বন্যার ধাক্কা
  • বিধ্বস্ত কয়েক হাজার ঘরবাড়ি
  • হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

প্রাণনাশী করোনা সিলেটে পুরো দুটি বছর তাণ্ডব চালিয়েছে। এরপর ভাইরাসটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে নিস্তেজ হতে শুরু করে। করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সিলেটের মানুষ যখন কোমর সোজা করে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন, ঠিক তখনই প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা। ভয়াল বন্যায় সিলেটের জনপদ ফের লণ্ডভণ্ড। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষ এখন চরম বিপাকে। বিধ্বস্ত বাড়ি-ঘর সংস্কারের সামর্থ নেই, নেই একবেলা খেলে আরেক বেলা খাবারের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে বন্যার কারণে সিলেটে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এটি প্রাথমিক তথ্য। পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ার সমূহ আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সিলেট জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সূত্রমতে, সিলেট নগর এবং জেলার ১৩টি উপজেলার সড়ক ও রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ খাতে প্রায় ৪০৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৎস্যখাতে ২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ও কৃষিখাতে ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গবাদিপশু-পাখি, খড়-ঘাসসহ এ খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ এক কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৭০ টাকা। এছাড়াও জেলার প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডুবে এক কোটি ৫১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা এবং মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কলেজ ডুবে ৩ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয় সূত্রমতে, জেলায় এক হাজার ৭০৪ হেক্টর বোরো জমি, এক হাজার ৬৬০ হেক্টর আউশ বীজতলা ও এক হাজার ৫৩৮ হেক্টর সবজিখেত নিমজ্জিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট কার্যালয় মতে, জেলায় এলজিইডির আওতাধীন ১২০টি রাস্তার ২৭৭ কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ২৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সিলেট কার্যালয় জানিয়েছে, এ দপ্তরের আওতাধীন ৭২ কিলোমিটার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। এর বাইরে আরও ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৭৫ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  চরফ্যাশনে রহস্যজনক দুই শিশুর মৃত্যু, অসুস্থ আরও দুই শিশু

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রমতে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার তিন উপজেলায় এক হাজার দুইশ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ১৩০টি ঘর। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তিনটি উপজেলার মধ্যে কানাইঘাটে বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে ৩৫১টি ঘর। এর মধ্যে ২৮৯টি আংশিক ও ৬২টি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৮৩টি বাড়িঘর। এর মধ্যে ৬৮টি পুরোপুরি ও ৪১৫টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৩৬৫টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বাড়ি-ঘর ও বিভিন্ন খাতে বন্যায় সিলেট নগর এবং জেলায় অন্তত হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এখনই পুরোপুরি হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ হিসাব মিলবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে।

প্রসঙ্গত, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেটে গত ১১ মে থেকে বন্যার সৃষ্ট হয়। শহর থেকে গ্রামাঞ্চল- সবখানেই হানা দেয় বন্যা। ১০-১২ দিন তাণ্ডব চালিয়ে গত ২০ মে থেকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে। সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে। ফলে বন্যার্তদের দুর্ভোগ রয়েই গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলাতেও। পাউবো সিলেট জানিয়েছে, সিলেটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমা অব্যাহত রয়েছে। তবে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর দুটি পয়েন্টে এখনো পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  শরীয়তপুরে করোনায় আক্রান্ত ৮ বছরের শিশু

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন