নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে এক তরুণীকে হেনস্তার ঘটনায় আদালতের নির্দেশে মামলার পর ইসমাইল মিয়া নামে (৩৮) এক অভিযুক্তকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। সোমবার (২৩ মে) দুপুরে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ সিদ্দিকীর আদালতে এই আদেশ দেয়া হয়। ৩ দিনের রিমান্ডের সত্যতা নিশ্চিত করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুজ্জামান রুমেল।
এর আগে, গত শনিবার দিবাগত রাত ১১ টায় নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী বাদী হয়ে ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে এক নারীসহ ২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আরও একজন নারী ও ১০ জন পুরুষকে আসামী করা হয়েছে। মামলা হওয়ার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেন ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদাউস আহমেদ বিশ্বাস।
মামলার আসামীরা হলেন, নরসিংদী সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের বুদিয়ামারা এলাকার মৃত বাদল মিয়ার ছেলে মো. ইসমাইল (৩৮) ও নরসিংদী শহরের উপজেলা মোড় এলাকার ফয়েজ আহমেদের স্ত্রী শিলা আক্তার। এরমধ্যে মো. ইসমাইলকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয় । ঘটনাস্থলের সিসি টিভির ফুটেজ ও মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওতে অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর মামলায় তাদের আসামী করা হয়।
নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, বুধবার ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে আসেন ওই তরুণী ও দুই তরুণ। সকাল পৌনে ছয়টা পর্যন্ত স্টেশনটির ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে তাঁরা ঢাকাগামী ঢাকা মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় স্টেশনে মধ্যবয়সী এক নারী ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘এটা কী পোশাক পরেছো তুমি’। তরুণীও পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনার তাতে কী সমস্যা হচ্ছে?’ এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। এর মধ্যে সেই বিতর্কে যোগ দেন স্টেশনে অবস্থানরত অন্য কয়েকজন ব্যক্তি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেদিনের একটি ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওই তরুণীকে ঘিরে রেখেছে একদল ব্যক্তি। এর মধ্যেই এক নারী উত্তেজিত অবস্থায় তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী সেখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হলে ওই নারী দৌড়ে তাঁকে ধরে ফেলেন। এ সময় অশ্লীল গালিগালাজ করতে করতে তাঁর পোশাক ধরে টান দেন ওই নারী। কোনোরকমে নিজেকে সামলে দৌড়ে স্টেশনমাস্টারের কক্ষে চলে যান তরুণী। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা দুই তরুণকেও মারধর করতে দেখা যায় ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন ব্যক্তিকে। পরে তাঁরাও দৌড়ে স্টেশনমাস্টারের কক্ষে চলে যান। পরে ভুক্তভোগী তরুণী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিলে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ রেলস্টেশনে এসে তাঁদের ঢাকার ট্রেনে উঠিয়ে দেয়।
ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। হেনস্তাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত শুক্রবার রাত ৯ টার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে মো. ইসমাইল নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশ। তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন শনিবার বিকেলে নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ সিদ্দিকীর আদালতে তোলা হয়। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠান এবং এই ঘটনায় তদন্ত করে মামলা করার নির্দেশ দেন। পরে ওই রাতেই ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করেন ইমায়েদুল জাহেদী। সবশেষ , সোমবার দুপুরে নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ সিদ্দিকীর আদালতেই আসামি ইসমাইলের তিন দিনের রিমান্ড আদেশ দেয়া হয়।
ভৈরব রেলওয়ে থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুজ্জামান রুমেল জানান , মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আমি সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করি। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ড কার্যক্রম আজ থেকে শুরু হবে। এছড়া বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।




