শব্দদূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এমন কোন মানুষ নাই মন্তব্য করে তা নিয়ন্ত্রণে প্রতিমাসে মেহেরপুর জেলায় অভিযান চলানোর কথা জানিয়েছেন, জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হুদা। এ সময় হাইড্রোলিক হর্ণ নিষিদ্ধ জানার পরও তা ব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে প্রয়োজনে এসবের বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলানোর হুশিয়ারি দেন তিনি।
বুধবার (১৮ মে) দুপুরে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে পরিবেশ অধিদফতরের ‘শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প’এর আওতায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির লেকচারার আব্দুল্লাহ আল নাঈম এর সঞ্চালনায় এই মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির ছিলেন মেহেরপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হুদা। এছাড়া অটোমালিক সমিতির সদস্য, সাংবাদিক, পুলিশ, ও সামাজিক ও পরিবেশবাদি বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক)নাজমুল হুদা বলেন, সরকারের ২০০৬ সালের শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। তবে এতো বছর পরেও অনেকে এটা ভালো করে জানে না। তাই মেহেরপুরে প্রতি মাসে অন্তত একটি অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন। এক্ষেত্রে ডিভাইসের মাধ্যমে সহায়তা করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ও ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের সহায়তা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক আতাউর রহমান বলেন, আমাদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা আছে, তাই সবাই আগে যেতে চায়। গাড়িতে বসলে চালক যত জোরেই হর্ণ দিক না কেন সেটা আমাদের ভালো লাগে। তাছাড়া আইন ভাঙ্গতে পারলেও নিজেকে বড় মনে করা হয়। এসব মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান জানান তিনি। নিজ অবস্থানে সচেতন হলে গাড়িতে ওঠলেও শব্দ দূষণরোধে ভূমিকা রাখা যাবে বলে মন্তব্য করেন। গাড়িতে সিগারেট খাওয়া কমেছে উল্লেখ করে একইভাবে শব্দ দূষণ কমবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এ সরকারি কর্মকর্তা।
এ সময় স্থানীয় সাংবাদিক রফিকুল আমিন বলেন, থাইল্যান্ডে হাতিকে রাস্তা থেকে সরাতে হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার করা হলেও এখানে মানুষও তা শুনে না। জেলা প্রশাসনের গাড়িতে ভিআইপি হর্ণে দূষণ হয় জানিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আগে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, স্কুলে অহরহ্ পটকা বাজানো হয়। ফেয়ার ওয়েল অনুষ্ঠানে ২০টি সাইন্ড বক্স এনে প্রচণ্ড শব্দে তা বাজানো হয়। শিক্ষক প্রতিনিধির পক্ষ থেকে কঠোর আইন ও তার বাস্তবায়ন দাবি করা হয়। এক পুলিশ সদস্য শব্দ দূষণের কারণে এখন কম শুনতে পান বলেও জানান। তাছাড়া জেলায় দ্রুত পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিস করার দাবি ওঠে আসে আলোচনায়। স্কুলে, সামাজিক প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাও আলোচনায় ওঠে আসে।
পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালিত শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের শব্দ দূষণের ওপর জরিপ করছে ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেড এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ণ কেন্দ্র (ক্যাপস)। তারই অংশ হিসেবে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারের নেতৃত্বে পরিচালিত টিম মেহেরপুর শহরে শব্দদূষণের মাত্রা জানতে ৫ স্থানের সাউন্ড লেভেল মিটার স্থাপন করে। এ মেশিনটি প্রতি এক মিনিট পরপর তথ্য দেবে। যার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার শব্দদূষণের মাত্রা জানা যাবে।
আনন্দবাজার/টি এস পি