ঢাকা | মঙ্গলবার
১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লম্বা ছুটির খুশিতে শ্রমিকরা

লম্বা ছুটির খুশিতে শ্রমিকরা

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ধরে ঝিমিয়ে পড়েছিল পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পখাত। কাজ হারিয়েছিলেন বহু শ্রমিক। অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন। তবে গত বছরের শেষ দিকে করোনার দাপট কমে আসায় শিল্পখাত আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। গ্রামে ফেরা শ্রমিকরা আবার কারাখানায় যোগ দেয়া শুরু করে। কলকারখানার চাকাও সচল হয় পুরোদমে। এর মধ্যেই আবার চলে আসে রমজান মাস। ঈদুল ফিতর ঘিরে শিল্পকারখানায় উৎপাদন বাড়াতে উদ্যমী হয়ে ওঠেন শিল্পমালিক থেকে শুরু করে শ্রমিকরাও। টানা এক মাস অতিরিক্ত পরিশ্রম আর ব্যস্ততার পর চলে আসে ঈদের ছুটি।

শ্রমিকরা বলছেন, অন্যবারের চেয়ে এবার ঈদে ছুটি অনেক বেশি ছিল। এই লম্বা ছুটি তাদের কর্মক্ষমতা না কমিয়ে বরং বাড়িয়ে দিয়েছে। তার ওপর ছিল ঈদের পুরো পারিশ্রমিকের সঙ্গে বাড়তি বোনাস। যে বোনাস তাদের ঈদের খুশিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই খুশি নিয়েই তারা ফিরেছেন কর্মক্ষেত্রে। গত মঙ্গলবার থেকে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের সব কারখানার দরজা খুলে গেছে। কাজে যোগ দেয়া শ্রমিকরা বলেন, এর আগে কোনো ঈদেই এত ছুটি পাওয়া যায়নি। লম্বা ছুটিতে গ্রামে গিয়ে অনেক ভালো লেগেছে। মন ভালো নিয়েই তারা ফিরেছেন।

দেশের অন্যান্য শিল্পনগরীর চেয়ে কর্মচঞ্চলতা খানিকটা বেশিই দেখা গেছে শিল্প অধ্যুষিত জেলা গাজীপুর। বিশেষ করে ঈদ উল ফিতর উদযাপন শেষে পোশাক শ্রমিকরা ফিরে এসেছে নিজ নিজ কর্মস্থলে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী ছুটি পেয়ে সন্তুষ্ট তারা। ছুটি বেশি থাকায় কোনো উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছাড়াই তারা ঈদ উদযাপন করতে পেরেছেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৮০০ শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এবারের ঈদে প্রতিটি কারখানায় ৮ থেকে ১০ দিনের ছুটি দেয়া হয়েছিল। নাড়ির টানে গ্রামে স্বজন-প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে শ্রমিকরা খুশি মনে ফিরেছেন নিজ নিজ কর্মস্থলে। দীর্ঘ ১০ দিনের ছুটি কাটিয়ে শ্রমিকরা গত মঙ্গলবার কাজে যোগ দিয়েছেন। কাজে ফিরেই তারা উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছেন। তবে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার উদ্যম বেশি দেখা গেছে শ্রমিকদের মধ্যে। তারা বলছেন, কম ছুটি থাকলে ভালোভাবে ঈদ করা যায় না। ফেরার যেমন তাড়া থাকে তেমনি যানবাহনেও থাকে প্রচণ্ড ভোগান্তি। যে কারণে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সঙ্গী করেই আসতে হয়। তবে এবার তেমনটা ঘটেনি।

গত মঙ্গলবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গাজীপুর সদরের স্প্যারো অ্যাপারেল্স লিমিটেডে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। সকাল থেকেই নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন তারা। কারখানার পাশাপাশি আশপাশের মুদি দোকান, চা স্টলসহ বিভিন্ন দোকানপাটেও ফিরেছে চাঞ্চ্যলতা ভাব। জানতে চাইলে চা দোকানি মনির হোসেন বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের কেন্দ্র করেই মূলত আমাদের দোকান গড়ে উঠা। বেচাকেনাও শ্রমিকনির্ভর। তাদের যেদিন ছুটি ঘোষণা করা হয়, সেদিন থেকে আমরাও দোকান বন্ধ করেছি। তারাও কাজে ফিরেছে আবার আমরাও দোকানপাট খুলেছি।

স্প্যারো অ্যাপারেল্সের কাজে যোগ দেয়া একাধিক শ্রমিক দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, আমরা ১০ দিনের ছুটি পেয়ে ভীষণ আনন্দিত ছিলাম। ভালো ভাবেই আমরা ঈদের আনন্দ উদযাপন করেছি। আগেরদিন গ্রামের বাড়ি থেকে এসে পরদিনই (মঙ্গলবার) কাজে যোগ দিলাম। একসঙ্গে ফিরে কাজ শুরু করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।

নিট এশিয়া নামের কারখানার শ্রমিকরা বলেন, এ পর্যন্ত ঈদে যতদিন ছুটি পাই তারচেয়ে এবার বেশি ছুটি পেয়েছিলাম। নিজেদের পরিবারও গ্রামের মানুষের সঙ্গে ঈদের সময়টা দারুণ কেটেছে। এবার রাস্তায় যানজট না থাকায় যাতায়াতে কোনো ধরনের অসুবিধা হয়নি। একদিন আগেই এসেছি।

স্প্যারো অ্যাপারেল্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাজী শরিফুল ইসলাম রেজা দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, দশদিনের ঈদের ছুটি শেষে মঙ্গলবার আমাদের প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। ছুটি শেষে শ্রমিকরা নির্বিঘ্নে কাজে যোগ দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। সকাল থেকেই কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম চালু হয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন