এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় মুণ্ডুমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমানের ভাবনা প্রকাশ
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশের মোট ১১ জেলায় ৭ লাখ হেক্টর জমিজুড়ে রয়েছে বরেন্দ্র এলাকা। বরেন্দ্র ভূমির মধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর উপজেলার আবহাওয়া আরো বেশি রুক্ষ্ম। উঁচু-নিচু মাঠ প্রান্তর। লাল মাটির এ ভূমি বেশিরভাগ সময় থাকে তৃষ্ণাক্ত। তানোর উপজেলার ৩১.৭২ বর্গ কিলোমিটার এমন মাটির বুকে বসবাস করা জনপদ ঘিরে ২০০২ সালে গড়ে উঠেছিল মুণ্ডুমালা পৌরসভা। খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলা বরেন্দ্রের এ পৌরসভাটি ২০১১ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিকে উন্নতি হয়। এরপরে উন্নয়ন হয়েছে। তবে ধীর গতির উন্নয়নে মানুষের মধ্যে ছিল হতাশা। পাশাপাশি তপ্ত আবহাওয়া, পানি সংকটসব মিলিয়ে হতাশার পারদ যেন একটু বেড়েছিল। এমন জায়গায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিও বেশ চিন্তার বিষয়। তবে বর্তমান মেয়র সাইদুর রহমানের মাত্র ১৪ মাসের সেবায় ছোট্ট পৌরসভাটিতে এসেছে অনেক পরিবর্তন। চাকুরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে যুব সমাজের মধ্যে গ্রাম পর্যায়ে চালাচ্ছেন প্রচারণা। পৌর এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য শিল্প উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করছেন। একজন পৌর মেয়র হিসেবে নিজ এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিজের ভাবনা দৈনিক আনন্দবাজারে তুলে ধরেছেন রাজশাহী তানোর উপজেলার মুণ্ডমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমান।
দৈনিক আনন্দবাজার প্রতিবেদক: এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে আপনার ভাবনা কি?
মেয়র সাইদুর রহমান: দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকাকে অনেক ধন্যবাদ। দেখুন, যে কোন এলাকার উন্নয়ন করতে গেলে উদ্যোক্তা তৈরি’র কোন বিকল্প নেই। মানুষকে শিল্পমুখি করতে হবে। হোক সেটা বড় কিংবা কুঠির শিল্প। উদ্যোক্তা ছাড়া কোন এলাকার উন্নয়ন সম্ভব নয়।
দৈনিক আনন্দবাজার প্রতিবেদক: জন প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে আপনি কি কি উদ্যোগ নিয়েছেন?

মেয়র সাইদুর রহমান: মেয়র নির্বাচত হওয়ার পরেই আমার কাছে এটা মনে হয়েছে যে এলাকার উন্নয়ন করতে গেলে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। সেজন্য আমি আমার নির্বাচিত এলাকার প্রতিটি জায়গায় গিয়ে যুব সমাজের মধ্যে প্রচারণা করতে শুরু করি। আমার নির্বাচিত হওয়ার বয়স ১৪ মাস পেরিয়েছে। এরমধ্যেই আমার ছোট্ট এলাকায় আমি ১০০ জনের বেশি উদ্যোক্তা তৈরি করেছি। ওইসব যুবকরা আগে বেকার ছিল। এখন তাদের কেউ গরু মোটাতাজাকরণ, কেউ গাভী পালন, কেউ মোরগি পালন করে স্ববলম্বি। শুধু তাই না, এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি খাবার আছে সেগুলোতে ৩ থেকে ৪ জন করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
দৈনিক আনন্দবাজার প্রতিবেদক: আর কিভাবে আপনি কর্মসংস্থানের চিন্তা করছেন?
মেয়র সাইদুর রহমান: নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আমি পৌর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি মনোযোগ দেই। কারণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলেই স্থানীয় বা বাইরের উদ্যোক্তারা আগ্রহী হয়ে উঠবে। পৌর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সংঙ্কার না হওয়া রাস্তাগুলো মেরামতে মন দিয়েছি। ইতোমধ্যে পৌর এলাকার ৫ কিলোমিটারের বেশি রাস্তার প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে কার্পেটিং ও ঢালায়ের কাজ সম্পন্ন করেছি। এ কাজে পৌরসভার ১০টি গ্রাম এখন আধুনিক যোগাযোগের সুফল ভোগ করছে। ওইসব সুফলভোগি গ্রাম থেকে মুণ্ডুমালা বাজারের যোগাযোগ এখন সহজ হয়ে গেছে। আমরা শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।
দৈনিক আনন্দবাজার প্রতিবেদক: এ পর্যন্ত কোন শিল্প উদ্যোক্তাকে আগ্রহী করে গড়ে তুলতে পেরেছেন?
মেয়র সাইদুর রহমান: অবশ্যই। আমাদের এলাকার একজন শিল্প উদ্যোক্তা যিনি অন্য এলাকায় একটি পোল্টি ফিড কারখানা করার জন্য আগ্রহী ছিলেন। আমি ওই শিল্প উদ্যোক্তা’র সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছি। শেষে ওই পোল্ট্রি ফিড কারখানাটি আমার পৌর এলাকায় স্থাপন হয়েছে। এতে আমার এলাকার ১০০ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। আরো কয়েকটি শিল্প উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা হচ্ছে। আশা করছি সফল হবো।

দৈনিক আনন্দবাজার প্রতিবেদক: যুব সমাজের প্রতি আপনার বার্তা কি?
মেয়র সাইদুর রহমান: আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যুব সমাজ লেখাপড়া শেষ করেই চাকুরি’র পেছনে ছুটছেন। এমন কাজটি করতে গিয়ে দেশের সিংহভাগ যুব সমাজ উৎপাদন বয়সটাই হারিয়ে ফেলছেন। তাই চাকুরি’র পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয়ে নিজে স্বাবলম্বি হতে। তাহলে নিজে যেমন সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে অন্যদিকে সমাজ ও দেশের সেবার হবে।
দৈনিক আনন্দবাজার প্রতিবেদক: পৌর উন্নয়নের জন্য আর কি কি করছেন?
মেয়র সাইদুর রহমান: রাস্তাঘাট উন্নয়নে আরো পাঁচ কোটি টাকা কাজ টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন আছে। এলাকার মসজিদ, মন্দির গোরস্থানসহ অবকাঠামো উন্্নয়নে কাজ শেষ হয়েছে। এসব উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। টেন্ডরের অপেক্ষায় আরো ৫০ লাখ টাকার কাজ। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে রাস্তা-ঘাট আলোকায়ন করা হয়েছে। নাগরিক সুবিধার জন্য প্রায় দুই হাজার রোড লাইট আছে। এখানের শেষ নয়, নগর উন্নয়নের জন্য ইতি মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকার প্রস্তাবনা পাঠানো রয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে। এ প্রকল্প পাওয়া গেলে পাল্টে যাবে মুন্ডুমালা পৌরসভার চেহেরা। জেলার ১৪টি পৌরসভার মধ্যে মুন্ডুমালা পৌর সভা হবে জেলার আধুনিক ও শ্রেষ্ঠ পৌরসভা।
দৈনিক আনন্দবাজার প্রতিবেদক: পৌরসভা ঘিরে আপনার স্বপ্ন কি?
মেয়র সাইদুর রহমান: ২০২১ সাল থেকে পৌরসভাটি ২য় শ্রেণির পৌরসভা রয়ে গেছে। আমার স্বপ্ন নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধিসহ প্রথম শ্রেণির পৌরসভার গড়ার। প্রথম শ্রেণি করতে অনেক শর্ত ছিল। সেগুলো মধ্যে পৌরকর বৃদ্ধি। আমি পৌর নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে তাদের মতামতের ভিত্তিতে পৌরসভার উন্নয়নের জন্য তা বৃদ্ধি করেছি। এতে সফল হয়েছি। অল্প কিছুদিনের মধ্যে হয়তো আমরা প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নতি করতে সক্ষম হব। আশা রাখছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে গ্রামকে শহর রূপান্তর করতে পারবো ইনশাল্লাহ।
আনন্দবাজার/শহক