ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদ বাজারের আতঙ্ক অটোরিকশা

ঈদ বাজারের আতঙ্ক অটোরিকশা
  • নরসিংদী পৌরসভায় অসহনীয় যানজট

নরসিংদীর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা লোকজনকে যানজটে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে নিজেদের পছন্দের কাপড় কিনতে অনেকেই ছুটে আসেন শহরের প্রাণকেন্দ্রের নামীদামী মার্কেট কিংবা শপিংমলে কেনাকাটা করতে। ঈদের কেনাকাটা করতে ক্রেতাদের উপচে পড়ার ভিড়ের কারণে সড়কে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। তবে নরসিংদী ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) শাখাওয়াত আলম জানান, নরসিংদী শহরে কোন যানজট নেই, মোড়গুলোতে সাময়িক সময় যানজটে পড়তে হয়। আমরা শহরের চেয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উপরে জোর দিচ্ছি যাতে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে যাত্রীরা যাতে দুর্ভোগে না পড়তে হয়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পৌর শহরের বিভিন্ন সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত মিসুকের আধিক্য দেখা দেয়। যানজট তীব্র আকার ধারণ করলে সড়ক পারাপার হওয়াও কষ্টকর হয়ে ওঠে ঈদ মার্কেট করতে আসা ক্রেতাদের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌর শহরের বড় বাজারের গেঞ্জিপট্টি, সূতাপট্টি, সিএন্ডবি রোড়, পৌরসভার সামনে, হেমেন্দ্র সাহার মোড়, আরশীনগর, খালপাড়ে থেমে থেমে যানজট চোখে পড়ার মতো। ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি যানজটে ভুগতে হয় আরশিনগর রেলক্রসিং এলাকায়, ইনডেক্স প্লাজা ও পৌরসভার গেইটের সামনে। ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা যানজট।

সরেজমিনে আরশিনগর রেলক্রসিং এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, নরসিংদী শহরকে দুভাগে বিভক্ত করেছে আরশীনগর রেলক্রসিং। রেলের উত্তর পাশে সরকারি অফিস-আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দক্ষিণ দিকে রয়েছে ব্যবসায়ীক এলাকায়, বাজার, শপিংমল ও গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট। এরই পূর্ব দিকের রাস্তাটি চলে গেছে নরসিংদীর বৃহত্তর উপজেলা রায়পুরার দিকে। এই চার রাস্তার মিলনের ফলে যানবাহন চলাচলের সময় নিয়মকানুন না মানার করনে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এখানেও দেখা যায় সড়কের মধ্যে অটোরিকশার স্ট্যান্ড। এর অদূরে রয়েছে সিএনজি স্ট্যান্ড। আর ঘন্টায় ঘন্টায় ট্রেনের চলাচলের ফলে রেলক্রসিং গেইট বন্ধ থাকায় আরো যানজট সৃষ্টি হয়। আরশীনগর রেললাইনের নিচ দিয়ে একটি অভারপাস থাকলেও কোন ভাবেই যানজট মুক্ত হতে পারছেননা পৌরবাসি। যানজট সৃষ্টি হলে ট্রাফিক পুলিশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। এসব মিলে মানুষজনকে চরম দুর্ভোগে পড়তে দেখা যায়।

নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন ঢাকা, চট্রগ্রাম, কিশোরগঞ্জ ও সিলেটসহ ৫২টি ট্রেন চলাচল করে। এরমধ্যে নরসিংদী রেল স্টেশনে যাত্রাবিরতি রয়েছে মাত্র ২৮টির। এসব ট্রেনের সিগনালের জন্য যানজটের প্রধান কারন হিসেবে দেখছেন পৌরবাসি। এই যানজট শেষ করে গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

এদিকে পৌরসভা ও স্বাধীনতা চত্বরের সামনে সড়কের মধ্যেই ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো এলোমেলো ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। দেখলে মনে হবে এটি একটি অঘোষিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড। যার যেমন মন চাচ্ছে তেমন করে অটোরিকশা থামিয়ে যাত্রী উঠাচ্ছেন। ট্রাফিকের কথাও তারা কর্ণপাত করছেন না। পৌরসভার গেইট থেকে সিএন্ডবি রোড হয়ে সূতাপট্টি মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।

হেমেন্দ্র সাহার মোড়ের সামনে কথা হয় বাবুল মিয়া নামের অটোরিকশা চালকের সাথে তিনি বলেন, ‘আমরা কি গাড়ি চলাবে? ভেলানগর হতে বাজার যেতে হলে, উপজেলা মোড়, খালপাড়, আরশীনগর, ইনডেক্স প্লাজা ও হেমেন্দ্রসাহার মোড়ে যানজটে পড়তেই হয়। এভাবে দীর্ঘক্ষণ আটকা থাকলে আমাদেরও আয় রোজগার কমে যায়।’ যদি রোজগার কমে যায় সামনে ঈদে ছেলে-মেয়ে ও পরিবারকে কিভাবে ঈদের জামাকাপড় দিবো। মনের কষ্টে বলেন গরীবের ঈদ নাই রে ভাই, ঈদ পয়সা ওলাদের।

রায়পুরা থেকে আসা ঈদের মার্কেটিং করতে এসেছেন রানী বেগম তিনি বলেন, দুই মেয়েকে নিয়ে ঈদের মার্কেটিং করতে এসেছি। কেনাকাটার থেকে রাস্তায় চলাচল করার ভোগান্তি অনেক বেশি। গরমে মেয়ে দুটি অস্থির হয়ে উঠছে। আরশীনগরে যানজটে আটকা পড়ে বাড়ি ফিরে যেতে চাইছে তারা। মার্কেটিং করার থেকে বেশি ভোগান্তি হয়ে রাস্তায় আটকে থাকা।’

পৌরসভার সামনে একাধিক অটোরিকশার চালকদের সাথে কথা হয় তারা জানান, রাস্তা বড় হলে কি হবে? সবাই চায় যাত্রী নিয়ে কয়েকটি টাকা আয় করতে। তাইতো একজন আরোক জনকে বেড়িকেট দিয়ে রাস্তা যানজট সৃষ্টি করে। এইটা উচিত না, তারপরও আমরা এমন বে-উচিত কাজটি করি। সবাই যদি নিয়ম কানুন মেনে চলে তাহলে যানজট সৃষ্টি হতো না।

নরসিংদী ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) শাখাওয়াত আলম জানান, নরসিংদী শহরে কোন যানজট নেই, তবে মোড়গুলোতে সাময়িক সময় যানজটে পড়তে হয়। সেজন্য আমরা শহরের চেয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উপরে জোর দিচ্ছি যাতে ঈদের সময় মানুষরা নিজ বাড়িতে পরিবারের সাথে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারে। যাত্রীরা যাতে দুর্ভোগে পড়তে না হয় সেজন্য আমরা বাস মালিক সমিতির নেতাদের সাথে কথা বলেছি, তারাও আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন। যানজটমুক্ত রাখতে নরসিংদীতে ৮৮জন পুলিশ সদস্য মাঠে কাজ করছেন।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণে না থাকায় প্রধান সড়কে যানজটের কারণ বলে জানান পৌর কতৃপক্ষ। এ সম্পর্কে পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন বাচ্চু বলেন, ঈদের বাজারে ক্রেতারা যাতে নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারেন, এ জন্য শহরের রাস্তা যানজটমুক্ত রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশও চেষ্টা করছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন