ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উৎফুল্ল সবাই, প্রস্তুতিও শেষের দিকে

মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৪২৯

মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৪২৯

২০২০ সালে এই ধরায় নেমে এসেছিল করোনার থাবা। সারা বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছিল চরম সংকট। এই সংকট আঘাত হেনেছিল চির সবুজের বাংলাতেও, বাঙালির সংস্কৃতি চর্চায়ও। যে কারণে ২০২০ এ লকডাউন থাকার ফলে  বাঙালির শেখড়ের পরিচয় বহনকারী ‘পহেলা বৈশাখ’ উদযাপন করা হয় নি, বের হয় নি মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০২১ সালেও মহামারীর কারণে পালন করা  হয়েছিল স্বল্প পরিসরে। যা বাঙালি মনে প্রশান্তির বাতাস পৌঁছে দিতে পারে নাই। তবে এবছর করোনা সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ থাকার ফলে গতবছরগুলোর ন্যায় পূর্নাঙ্গ আকাড়ে পালন করা হবে পহেলা বৈশাখ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা। যার ফলে আয়োজন সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে বিরাজ করছে উৎফুল্লতা।

আগামীকাল বাংলা ১৪২৯ বর্ষের  পহেলা বৈশাখ কে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে বিরাজ করছে আমেজের পরিবেশ। সরেজমিনে দেখা যায় চারুকলা অনুষদের শিক্ষক,শিক্ষার্থীদের কর্মব্যস্ততার চিত্র। ব্যস্ত সবার মধ্যে কেউ কেউ আঁকছেন জলরঙের ছবি, কেউ বিভিন্ন ধরনের নকশা করছেন মাটির সরায়, আবার কেউ কেউ বানাচ্ছেন বাহারি বঙের মুখোশ। অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে বিক্রয়ের জন্য সাজানো হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আঁকানো বিখ্যাত বিখ্যাত ছবি এবং শিক্ষার্থীদের আঁকা টেঁপা পুতুল, ঘোড়া ফুল, পেঁচা,মাছ,পাখা সহ নানান ধরনের শিল্পকর্ম। এসব বিক্রির অর্থ খরচ করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য। যে কারণে আগ্রহের সহিত এগুলো কিনছেনও শোভাযাত্রার প্রস্তুতিকে দেখতে আসা মানুষজন।

পহেলা বৈশাখ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা কে ঘিরে গত ১লা এপ্রিল থেকেই কাজ করছেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আয়োজনের  মূল দায়িত্বে আছেন ওই অনুষদের ২২ ও ২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এর পাশাপাশি আছেন একদম শুরু থেকে বর্তমান ২৯ ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীরাও। ক্যাম্পাসে ২৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এটাই  প্রথম পহেলা বৈশাখ । এ জন্য এই নবীন শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে আলাদা আনন্দ।

 ‘ মঙ্গল শোভাযাত্রা গবেষণা ও প্রসার কেন্দ্র’ থেকে  প্রতিবছর আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একটা পোস্টার বের করা হয়। এই পোস্টার প্রণয়ন কর্মশালার মাধ্যমে আজ চারুকলায় পোস্টার প্রদর্শনীতে ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সৌহাত রাশেদিন সৌখিনের তৈরী পোস্টারটিও জায়গা পেয়েছে। তিনি জানান এই অর্জন ও ক্যাম্পাসে প্রথম পহেলা বৈশাখ উদযাপন করার অনুভূতি। ওই শিক্ষার্থী বলেন, এর আগে জেলা এবং বিভাগীয় শহরে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেছি। যেটা এখানখার তুলনায় ছিল স্বল্প পরিসরে।জাতীয় পর্যায়ের এই আয়োজনে একজন স্বেচ্ছাসেবী এবং আমার অনুষদের সকলকে একই সাথে কাজ করতে দেখতে পারায় খুবই লাগা কাজ করছে,একটা পরিবারের মতো লাগছে।

প্রথমবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের সুখকর অনুভূতিও জানান ওই শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, এর আগে পত্রিকায়,টেলিভিশনে মঙ্গল শোভাযাত্রার ছবি দেখতাম। এবার সেটা নিজ চোখে এবং নিজ হাতে তৈরি করার কাজে অংশগ্রহণ করতে পারছি। এটা খুবই আনন্দদায়ক আমার জন্য।

এদিকে প্রস্তুতির কাজও প্রায় শেষে দিকে। আয়োজক সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন সবকিছু সময়মতো শেষ হবে। এ বিষয়ে কথা বলেন দায়িত্বে থাকা ২২ ব্যাচের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী প্লাবন চৌধুরী। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ। যে কাজগুলো সম্পূর্ণ শেষ হয় নি ওগুলোর কাজ চলমান আছে।যেহুতু শোভাযাত্রা আগামীকাল সকাল নয়টায় বের হবে, সেকারণে আজ রাতের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করছি।

শিল্পকলা ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান সঞ্চয় চক্রবর্তী বলেন, আমাদের এই প্রস্তুতি টা বরাবরই আগের দিন রাতে সমাপ্ত হয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে না। আজকে রাতের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষ্যে বিশেষ সতকর্তা নির্দেশনা দিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। সেকারণে আজ সন্ধ্যা ৭ টার পর কোনো যানবাহন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না এবং নববর্ষের দিন সকল ধরনের অনুষ্ঠান বিকেল পাঁচটার মধ্যে শেষ করতে হবে। এ দিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন