ঢাকা | শুক্রবার
২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাসা ভাড়া না দিলেও যাওয়া যাবে আদালতে

সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বৈষম্য নিরোধে নতুন একটি আইন করার প্রস্তাব সংসদে উঠেছে। সংবিধানের ২৭, ২৮ এবং ২৯ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী সব ধরনের বৈষম্য নিরোধে এ আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে বাসা ভাড়া না দিলেও আদালতে যাওয়া যাবে।

আজ মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘বৈষম্যবিরোধী বিল-২০২২’ সংসদে উত্থাপন করেন। এরপরে সেটি ৩০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। সংবিধানের ২৭, ২৮ এবং ২৯ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী সব ধরনের বৈষম্য নিরোধে এ আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়, বৈষম্য নিরোধে একটি মনিটরিং কমিটি থাকবে, যার সভাপতি হবেন আইনমন্ত্রী। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব বা তার মনোনীত অন্যূন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এর সদস্য হবেন।।

বিলে বলা হয়, কোনো ব্যক্তি ধর্ম, বর্ণ, গোত্র জাতি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, ভাষা, বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক, মানসিক বা তৃতীয় লিঙ্গ, জন্মস্থান, জন্ম, পেশা এবং অস্পৃশ্যতার অজুহাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিচের কাজগুলো করলে তা বৈষম্যমূলক কাজ বলে গণ্য হবে:

১. সরকারি আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি অফিসের সেবা থেকে বঞ্চিত করা।

২. কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সর্বসাধারণের স্থলে প্রবেশ বা উপস্থিতিতে বাধা প্রদান, নিয়ন্ত্রণ অথবা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা।

৩. কোনো পণ্য বা সেবা আইনানুগভাবে উৎপাদন, বিক্রি অথবা বিপণন করতে বাধা দেওয়া বা আইনে নির্ধারিত কোনো সুবিধা বা পণ্য বা সেবা গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ ও সীমাবদ্ধতা আরোপ করা।

৪. প্রতিবন্ধী বা তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ার কারণে কোনো শিশুকে পরিবারে প্রতিপালন না করে বিশেষ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা বা প্রতিবন্ধিতার অজুহাতে পরিবারে বসবাসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা।

৫. উপযুক্ত কারণ ছাড়া বাবা-মায়ের পরিচয় দিতে অসমর্থতার কারণে কোনো শিশুকে ‍শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি বা অমত বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা বাধা দেওয়া বা সমান সুযোগ-সুবিধা বা অবস্থানের ক্ষেত্রে পার্থক্য, বঞ্চনা, বিধি-নিষেধ আরোপ, সীমাবদ্ধকরণ, শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার বা অন্য যে কোনো ধরনের বৈমষ্য করা।

৬. সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ, ছুটি, পদোন্নতি, বদলি, বেতন-ভাত-মজুরি বা সুযোগ-সুবিধাদি প্রাপ্তিতে পার্থক্য, বঞ্চনা, বিধি-নিষেধ আরোপ, সীমাবদ্ধকরণ বা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা বা চাকরিচ্যুত করা।

৭. কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানের আয়োজন, তাতে প্রবেশ ও অংশ নেওয়ার বা নিজস্ব ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রবেশ ও অংশগ্রহণ বা নিজ ধর্ম অনুযায়ী দাফন বা শেষকৃত্য বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বা সৎকার সম্পাদন ও যোগদানে বাধা দেওয়া।

৮. কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো বৈধ পেশা বা চাকরি গ্রহণ বা বৈধ ব্যবসা পরিচালনা থেকে নিষিদ্ধ করা।

৯. কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বাড়িভাড়া না দেওয়া বা বসবাসের স্থান দিতে অস্বীকৃতি জানানো বা অমত করা বা আবেদন অনুমোদন না করা বা কঠিন শর্ত আরোপ করা।

১০. কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে তার বা তাদের বাসস্থানের অভ্যন্তরে প্রবেশে বাধা দেওয়া, বাসস্থান বা এলাকা থেকে উচ্ছেদ বা এলাকা বা বাসস্থান ত্যাগে বাধ্য করা।

১১. গ্রাম্য সালিশ বা সামাজিকভাবে বা ধর্মীয়ভাবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে একঘরে করা, সামাজিকভাবে বয়কট করা বা হয়রানি করা।

১২. তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা অথবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে বৈষম্যমূলক আচরণ করা।

১৩. কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বা রীতিনীতি পালন করা থেকে বিরত রাখা বা তাদের অন্য কোনো ধর্মগ্রহণ ও পালন বা ত্যাগ করতে বাধ্য করা।

১৪. স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সামাজিক, রাজনৈতিক, ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা।

১৫. কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে আইনানুগভাবে সম্পত্তি অর্জনে ও হস্তান্তরে বাধা দেওয়া এবং সম্পত্তিতে অধিকার বা উত্তরাধিকার লাভে বঞ্চিত করা।

আনন্দবাজার/টি এস পি

সংবাদটি শেয়ার করুন