অসময়ে ভারত গজলডোবা ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে তিস্তার বুকে উজান ও ভাটিতে কৃষকের লাগানো মরিচ-পেঁয়াজ, রশুন, মিষ্টি কুমড়া খেত। ব্যারাজের ৭টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে উজানের প্রচুর পরিমাণ পানি ধেয়ে আসছে। গত ৩ এপ্রিল বিকেল ৩টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ৫১ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার যাহা বিপৎসীমার ১৫০ সেন্টিমিটার নিচে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যা স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার।
তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিন হাজার কিউসেক পানি ছিল তা বেড়ে বর্তমানে রয়েছে ছয় হাজার কিউসেক পানি বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এর আগে (২৮ মার্চ) হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তার বুকে লাগানো বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়।
চৈত্রের হঠাৎ পানি বৃদ্ধির পর মাত্র দুদিনে কমে গেছে তিস্তার পানি। আবারও তিন দিন পর তিস্তা পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তিস্তার বুকে চাষাবাদ করা ফসল ডুবে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্বপ্ন বোনা কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, প্রতিবছরই তিস্তার পানি কমে যাওয়ার পর তারা তিস্তার বালুকাময় প্রান্তরে নানারকম ফসল চাষ করেন। এবারে চৈত্র মাসে তিস্তার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকদের স্বপ্নের মুখে ছাই পড়েছে।
তিস্তার ব্যারাজ এলাকার পিঁয়াজ চাষী দেলোয়ার হোসেন বলেন, জীবনেও দেখি নাই চৈত্র বৈশাখ মাসে তিস্তার পানি বাড়ে। পানি বাড়ার কারনে ৬ বিঘা পিঁয়াজ খেত পানিতে ডুবে গিয়ে নষ্ট হয়েছে। এতে আমার ৩০ হাজার টাকা লোকশান হয়েছে। আমি অভাবেই মানুষ জায়গা জমি নাই তাই তিস্তার বুকে চাষাবাদ করে জীবন যাপন করি। এখন আমার অনেক ক্ষতি হল।
তিস্তাপারের কদম আলী জানান, সকাল থেকে তিস্তার উজানের প্রচুর পরিমাণে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে । গত সাত দিনের চেয়ে প্রচুর পরিমাণে পানি বেড়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের কৃষক আব্দুল জলিল জানান, তিস্তারচরের প্রায় ছয় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি নদীর পানি বৃদ্ধিতে পিঁয়াজ পঁচে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এখন আমরা নিরুপায় হয়ে পড়ছি।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, সকাল থেকে উজানে বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি আরও জানান, তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় বর্তমানে ছয় হাজার কিউসেক পানি রয়েছে। তবে পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তার বুকে চাষ করা কিছু ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, তিস্তায় পানি আবারো বৃদ্ধি পেয়ে ফসলের ক্ষতি হয়েছে বিষয়টি জেনেছি। রংপুরে মিটিংয়ে আছি আগামীকাল কৃষকদের খোঁজখবর নেওয়া হবে। তবে জেলায় এখনো ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।