- রাস্তায় বসে পত্রিকা পড়ছেন চালক
গত দুই দিন ধরে রাজবাড়ী জেলার কল্যাণপুর এলাকায় পাটের সুতা বোঝাই ট্রাক নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য সিরিয়ালে আটকা পড়েন ট্রাক চালক মো. আক্কাস মিয়া। তার গন্তব্য চট্টগ্রাম জেলায়। কল্যাণপুর থেকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার। গত দুই দিন ধরে তার ট্রাকটি ২ কিলোমিটারও এগিয়ে যেতে পারেনি। ট্রাক চালক মো. আক্কাস মিয়ার মত শত শত ট্রাকের চালক তাদের ট্রাক নিয়ে আটকে আছে সিরিয়ালে। দিনের পর দিন সিরিয়ালে আটকে থেকে অলস সময় পার করছেন তারা। তাই চালক ও সহকারিরা পিচঢালা রাস্তায় বসেই পড়ছেন পত্রিকা।
রাজবাড়ী থেকে গোয়ালন্দ সড়কের কল্যাণপুরে দিনের পর দিন সিরিয়ালে বসে থেকে বেশির ভাগ ট্রাক চালকদের খোরাকির টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে। সড়কে নেই কোনো খাবারের দোকান। নেই কোনো গোসল বা টয়লেটের ব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতে চরম বিপাকে পড়েছেন দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ফেরি পার হতে আসা যানবাহনের চালক ও সহকারীরা।
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। এ ঘাট দিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীবাহি বাস, পণ্যবোঝাই ট্রাক ও যাত্রীরা পদ্মা নদী পার হয়ে মানিকগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছে সেখান থেকে ঢাকাসহ যে যার গন্তব্যে রওনা দেয়।
তবে গত মাস খানেক ধরেই দৌলতদিয়া পাটুরিয়া এ নৌরুটের দুই প্রান্তে ফেরিতে উঠার সিরিয়ালে আটকে থাকছে শত শত যানবাহন। যার অধিকাংশই পণ্যবাহি ট্রাক।
রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট এলাকায় যানবাহনের সিরিয়ালের চাপ কমাতে দৌলতদিয়া থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড় হতে রাজবাড়ী শহরের দিকে কল্যানপুর পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার ট্রাকগুলোকে সিরিয়ালে আটকে রাখা হয়।
পন্যবাহি ট্রাকের চালক ও হেলপারদের ভোগান্তির পাশাপাশি এই রুটে বিভিন্ন জেলা থেকে ফেরী পার হতে আসা যাত্রীবাহি বাসের যাত্রীদের ভোগান্তিও চরমে। দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীব্র গরমে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। বেশি বিপাকে পড়েছেন নারী ও শিশুরা। দিনের ভোগান্তি শেষে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের চিত্র যেন আরো ভিন্ন হয়ে ওঠে। রাতের অন্ধকারে সময় যেন কিছুতেই পার হতে চায়না তাদের। নিরাপত্তার হুমকিতে চালক ও যাত্রীদের জীবন দূর্বিসহ হয়ে পড়ে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজবাড়ীর কল্যানপুর থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহকালে দেখা যায়, চালক ও যাত্রীদের এমন ভোগান্তির দৃশ্য।
রাজবাড়ী থেকে চট্টগ্রামগামী সুতা বোঝাই ট্রাক (ঢাকা মেট্টো-ট-১৩-৪১৬২) চালক মো. আক্কাস মিয়া বলেন, গত দুই দিন ধরে রাস্তাতেই বসে আছি। ট্রাকের চাকা ঘুরছে না। ঘুরবে কি সিরিয়াল থেকে তো একটা গাড়ীও চলছেনা। কবে যে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছে ফেরিতে উঠবো জানি না।
হেলপার মো. তাজমুল শেখ বলেন, রাস্তায় বসে বসে কি আর সময় কাটে। কল্যানপুর এলাকায় বসায় রাখছে। রাস্তায় কোনো খাবারের দোকান নেই। গোসল বা টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা বড় অসহায়। সরকারের কাছে আমরা সাহায্য চাই দৌলতদিয়া ঘাটে ভোগান্তি কমাতে হবে।
বগুড়া থেকে কলা বোঝাই ট্রাক চালক আকবার বলেন, মাগুরা থেকে কলা বোঝাই ট্রাক নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পৌঁছে ১০ ঘণ্টার মত অপেক্ষায় বসে থেকে ফেরির কাছাকাছি আসতে পেরেছি। দৌলতদিয়া ঘাটে ভোগান্তির শেষ নেই।
যানজটের কারণ হিসেবে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, পদ্মায় পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় নৌ চ্যানেলের বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। নাব্যসংকট নিরসনে ড্রেজিং করে বালু অপসারণ করা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফেরিগুলোকে অনেকটা পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে সময় বেশি লাগছে। পানির স্তর কমে যাওয়ায় পন্টুন নিচু হয়ে গেছে। এতে ঘাট থেকে সড়ক উঁচু হওয়ায় ফেরিতে গাড়ি ওঠানামায়ও সময় বেশি লাগছে। সেই সঙ্গে রয়েছে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। এসব কারণে বেশ কিছুদিন ধরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে যানজট লেগেই থাকছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের সহকারি ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। যাত্রীবাহী যানবাহন ও পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার চলমান রয়েছে। বর্তমানে এ নৌপথে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। পণ্যবাহী ট্রাকের বাড়তি চাপ থাকায় ঘাটে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।