ঢাকা | সোমবার
১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পঞ্চগড়ের সুপারি যাচ্ছে সারাদেশে

পঞ্চগড়ের সুপারি যাচ্ছে সারাদেশে

বাঙালির সুপ্রাচীনকালের ঐতিহ্য পান-সুপারি। অভ্যাসগত কারণে ভোজন শেষে কিংবা অতিথি আপ্যায়নে পান সুপারি যেন থাকতেই হবে। দেশের প্রায় সর্বত্রই সুপারি উৎপাদন হলেও উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সুপারি অন্যতম। দাম, ফলন এবং স্বাদে আলাদা হওয়ায় এ জেলার সুপারির সুনাম রয়েছে সারাদেশে। জেলার চাষিরা দিন দিন বাণিজ্যিকভাবে সুপারির বাগান গড়ে তুলে লাভবান হচ্ছেন। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে পঞ্চগড়ের সুপারি।

উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ে বহু প্রাচীনকাল থেকেই সুপারি পাওয়া যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাণিজ্যিকভাবে পানের আবাদও শুরু হয়েছে দুই দশক আগে। বর্তমানে পানের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে সুপারিরও চাষ শুরু হয়েছে এ জেলায়। দিন দিন বাড়ছে সুপারির বাগান। কৃষকরা স্বল্প খরচে সুপারির বাগান গড়ে তোলায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সুপারির উৎপাদন। বাড়ির আঙিনা বা বসবাসের আশেপাশেই এসব বাগান গড়ে উঠেছে। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এখন অন্যত্র বিক্রি করছেন তারা। কেউবা জমির সীমানা ঠিক রাখতে লাগিয়েছেন এ গাছ। আর কেউ বা শখের বসে, চা বাগানে সুপারির গাছ লাগিয়ে প্রতি বছর মোটা অঙ্কের টাকা পেয়ে এখন বাণিজ্যিকভাবে সুপারির বাগান করা শুরু করেছেন। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন কিছুটা কম হলেও দামের দিকে দিয়ে চলতি বছরেই সর্বোচ্চ দামে সুপারি বিক্রি করছে এ জেলার চাষিরা। চলতি বছরে প্রতি পন সুপারি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। চাষিরা বলছেন, একটি সুপারি গাছে ৪০০ থেকে ৫০০ সুপারি ধরে থাকে। পন আকারে বাজারে বিক্রি করেন তারা। ৮০টি সুপারিকে এক পন আকারে ধরা হয়। বর্তমান এক পন সুপারির দাম বড় ১৬০ টাকা, মিডিয়াম ১৪০ টাকা, ছোটো ১০০ টাকা দরে বাজারে বিক্রয় হচ্ছে। সুপারির গাছে তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। প্রয়োজন হয় না কোনো কীটনাশক কিংবা সেচের। প্রায় বিনা পুঁজিতেই সুপারি বিক্রি করে প্রতিবছর ভালো আয় করছেন কৃষকরা।

সদর উপজেলার টুনিরহাট এলাকার সপিকুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে সুপারির বাগান করছি। ৫০ শতক জমিতে প্রায় ৪০০ সুপারির গাছ আছে। প্রতিবছর এক লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করি। সংসারের নানা কাজে লাগে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পঞ্চগড়ের সুপারির আকার, স্বাদ ও রং তুলনামূলক ভাবে অনেক ভাল। সারা দেশে এ সুপারির চাহিদা রয়েছ। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে তাই রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে সুপারি কিনে নিয়ে যায়। সুপারিকে কেন্দ্র্র করে জেলার ৫ উপজেলায় জমে উঠেছে সুপারির বাজার। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাজার গুলোতে সুপারি কেনাবেচা করছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সুপারি উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে। টুনিরহাট এলাকার সুপারি ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম জানান, সুপারি কিনে মাটিতে পুঁতে রাখছি। এই সুপারিটা আরও পরে বিক্রি করবো। কিছু সুপারি দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছি। সুপারির ব্যবসায় লাভ বেশি। তাই এ ব্যবসা করেই সংসার চালাচ্ছি।

পঞ্চগড় কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামীম জানান, জেলা সদর, আটোয়ারী, তেঁতুলিয়া ও দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মোট ৪৪৫ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়েছে। সুপারি চাষে আগ্র্রহী করতে চাষিদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সকল প্রকার সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন