ঢাকা | মঙ্গলবার
১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভুট্টা পাতা বেচে চাল-ডাল

ভুট্টা পাতা বেচে চাল-ডাল
  • ভুট্টা পাতায় বাড়তি আয়

লালমনিরহাটের প্রধান অর্থকরি ফসল ভুট্টা। ভুট্টা চাষে বদলে গেছে লালমনিরহাট জেলার অর্থনীতি। ২৫ বছর ধরে ভুট্টা চাষ করে বদলে গেছে এখানকার মানুষের জীবনমান। এ বছর ভূট্টা চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। ভুট্টা রোপণের পর কয়েকবার বৃষ্টির ফলে কৃষকদের খরচও কমে গেছে। ইতিমধ্যে তিস্তা ও ধরলা নদীর চর এলাকাগুলোতে ভুট্টা তোলার ধুম পড়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ভুট্টা তোলা শুরু হবে।

তাই কৃষকরা এখন তাদের ভুট্টা ক্ষেতের গাছের পাতা ছিঁড়ে ফেলছেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চর অঞ্চলের নিম্নআয়ের মানুষ ভুট্টার পাতা বিক্রি করে কিছুদিন ভালোভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন।

প্রতিবিঘা ভুট্টা ক্ষেতের পাতা ও গাছের মাথা কাটতে ২ জন করে শ্রমিক লাগে। এখন আর তা লাগছে না। নিম্নআয়ের লোকজন বিনামূল্যে পাতা ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে। এতে কোনো ভুট্টার ক্ষতি হচ্ছে না।

ভুট্টা তোলার ১৫ থেকে ২০ বছর আগে গাছের পাতা ও মাথা কেটে দিতে হয়। এতে ভুট্টায় সূর্যের আলো পড়লে ভুট্টার রং ভালো হয়।

দিনমজুর শ্রেণির লোকজন পরিবারের সবাই মিলে ভুট্টা পাতা ছিঁড়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছে। দামে কম হওয়ায় অনেকেই গো-খাদ্য হিসেবে তা কিনছেন অনেকে। এতে একদিকে নিম্নআয়ের লোকজনের যে আয় করছে। অন্যদিকে কম দামে বিভিন্ন গরুর খামারিরা কম দামে কিনে পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার ভুল্লারহাট, ভোটমারী, হাতীবান্ধা উপজেলার ঘুন্টি, পারুলিয়া, হাতীবান্ধাহাটসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ভুট্টা পাতার হাট বসছে। এতে কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ভুট্টা পাতা বিক্রি করে আয় করছেন। এতে প্রতি ভুট্টার পাতার আটি বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা দরে। দামে কম তাই গরুর খামারিরা প্রায় ৩০ থেকে ৫০টি আটি কিনছেন তাদের কাছ থেকে। দেখা গেছে, তিস্তারচর থেকে কেউ মাথায়, কেউবা ঘাড়ে কেউ সাইকেলে করে ভুট্টার পাতা নিয়ে বাজারে ঢুকছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী এলাকার ভুট্টা চাষ আলাউদ্দিন (৫০) বলেন, বর্তমানে কোনো কাজ কাম হাতে নাই। তাই তিস্তার চরে গিয়ে ভুট্টার পাতা সংগ্রহ করে এ ভোটমারি রেলস্টেশনে বিক্রি করতে আসছি। এতে একশ থেকে দেড়শ টাকা আয় হচ্ছে। তা দিয়ে বাজার খরচ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।

হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব ডাউয়া বাড়ি আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র অনন্ত বলেন, সকাল বেলায় স্কুলে যাই বিকেল বেলায় চরে গিয়ে পাতা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করি যে টাকা পাই তা দিয়ে বই খাতা কলম কিনি।

কালীগঞ্জ উপজেলার ভুল্লারহাট এর ইউনুস আলী জানান, বর্তমানে জিনিসপত্রের যা দাম হামার গরিব মানুষের অবস্থা খারাপ। তাই প্রতিদিন তিস্তার চরে গিয়ে ভুট্টার পাতা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে যে টাকা হয় তা দিয়ে চাল-ডাল কিনে পরিবার নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছি।

লালমনিরহাট জেলার প্রাণিসম্পদ অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান, পশুখাদ্য হিসেবে ভুট্টার পাতা উত্তম খাবার। ভুট্টার পাতা গবাদি পশুদের খাওয়ালে কোনো ক্ষতি হয় না। খামারিরা ভুট্টার পাতা সংগ্রহ করে গরু খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করলে লাভবান হবেন।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, তিস্তা ও ধরলা নদীর চরে এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হওয়ার আশা প্রকাশ করছি। কৃষকরা ভুট্টা চাষে লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে কৃষকরা ভুট্টার পাতা বিক্রি করেও স্বাবলম্বী হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন