ঢাকা | রবিবার
২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন স্বপ্ন কাঠশিল্পে

নতুন স্বপ্ন কাঠশিল্পে
  • চরিয়াকোনায় প্রতিমাসে বিক্রি ১০ কোটি টাকার ফার্নিচার

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌরসভার চরিয়াকোনা এলাকাটি কাঠশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ। এখানে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া প্রায় সহস্রাধিক শ্রমিক এ পেশায় নিয়োজিত থেকে বেকারত্ব ঘুচিয়ে এখন স্বাবলম্বী। দেশের বিভিন্ন স্থানে এখানকার কাঠশিল্পের বেশ কদর রয়েছে। কাঠশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ হওয়ায় চরিয়াকোনা এলাকাটি ‘কাঠের গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি। কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার দূরে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব সড়কের পাশেই ‘কাঠের গ্রাম’ চরিয়াকোনা এলাকাটির অবস্থান। বাজারে প¬াস্টিক জাতীয় ফার্নিচারের প্রভাব থাকলেও এখানকার কাঠশিল্পের কদর কমেনি, বরং দিন দিনই কদর বাড়ছে পরিবেশ বান্ধব এ শিল্পের।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি কর্মমুখর থাকে পুরো গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে গেলেই শোনা যায় কাঠের খট খট শব্দ। এখানে ঢুকলেই চোখে পড়বে কাঠমিস্ত্রীদের কর্মব্যস্ততা। কেউ করাত দিয়ে কাঠ কাটছেন, কেউ হাতুড়ি দিয়ে কাঠে লোহা লাগাচ্ছেন, কেউবা রামদা দিয়ে কাঠ সমান করছেন, কেউ জোড়া দিচ্ছেন, কেউবা এগুলোতে ফুটিয়ে তুলছেন দৃষ্টিনন্দন নকশা। কোথাও আবার চলছে বার্নিশের কাজ। কটিয়াদী উপজেলা সদরের চরিয়াকোনা গ্রামের প্রতিদিনের চিত্র এটি। ঘরের গৃহিণী থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া শিশুটি পর্যন্ত পারদর্শী এসব কাজে। এ পেশায় স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অনেকের ভাগ্যবদল হয়েছে। কেউ দীর্ঘদিন শ্রমিকের কাজ করে এখন নিজেই মালিক হয়েছেন। ফার্নিচার কেনাবেচা বাবদ মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা লেনদেন হয় চরিয়াকোনা গ্রামে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

ফার্নিচার কারিগর নাসির মিয়া বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এ পেশায় জড়িত ছিলেন। এখন আমরাও এই কাজ করি। দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা এখানে এসে ফার্নিচার অর্ডার করেন। কম দামে ভালো মানের খাট-সোফা, চেয়ার-টেবিল ও আলনা থেকে শুরু করে সব ধরনের ফার্নিচার তৈরি হয় এখানে। তাই দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা ভিড় করেন চরিয়াকোনা গ্রামে। এ জেলা ছাড়াও ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এসব ফার্নিচারের ক্রেতা। চাহিদা মতো অর্ডার দিয়ে এগুলো বানিয়ে নিয়ে যান তারা। সব মিলিয়ে মাসে ১০ কোটি টাকার ফার্নিচার কেনাবেচা হয়। তবে করোনার কারণে মেলা বন্ধ থাকায় বর্তমানে বেকায়দায় রয়েছেন কারিগররা। অনেক পাইকার কাজের অর্ডার দিয়েও বাতিল দিচ্ছেন। করোনার কারণে এখন এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছি। সরকার সুদ ছাড়া আমাদের যদি ঋণের সুযোগ করে দিতো অনেক ভালো থাকতাম।

ফার্নিচারের কারিগর দয়াল মিয়া জানান, এই কাজ করে গ্রামের কয়েকশ’ পরিবারের জীবন-জীবিকা চলছে। এ পেশা ছাড়া গ্রামের মানুষ অন্য পেশায় যায় না। করোনায় ব্যবসা এ ভালো এ খারাপ। কয়েক মাস ভালো যায়, আবার করোনা বাড়লেই পুঁজি ভেঙে আমাদের খেতে হয়। এ ধরনের সমস্যায় আমাদের আগে পড়তে হয়নি। আমাদের কাজের সারা দেশে সুনাম আছে।

কুমিল্লা থেকে আসা ফার্নিচার ব্যবসায়ী মো. অসিম বেপারি বলেন, এখানকার কাঠের আসবাবপত্র সাশ্রয়ে কিনতে পারায় বেশি দামে বিক্রি করতে পারি এবং লাভও বেশি হয়। তাই আমাদের এলকার প্রায় ব্যবসায়ীরা কটিয়াদী থেকে কিনতে আসি।

কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতিশ্বর পাল বলেন, বংশ পরম্পরায় এতগুলো পরিবার এ পেশায় জড়িত। পুরো গ্রামটিকে একটি কারখানা মনে হয়। বর্তমানে করোনার জন্য তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারের কাছ থেকে তারা যেন সার্বিক সহযোগিতা পায় এ বিষয়ে আমি চেষ্টা করবো।

সংবাদটি শেয়ার করুন