অতঃপর দুর্গম পাহাড়ি নদী পার
- নড়বড়ে সাঁকোতে ভোগান্তি ৯ গ্রামের মানুষ
নদীর পুরোপুরি সাঁকো নেই। অধেক পর্যন্ত সাঁকো আছে। বাকিটা নেই। আবার সাঁকোতে উঠতে মই লাগে। কলার কাদি, হলুদের বস্তা, ঝারুফুলসহ ভারি মালামাল বয়ে নড়বড়ে সাঁকো পার হতে পারে না। তাই অনেকে নদীর পানিতে নেমে নদী পার হয়। প্রায় মানুষ সাঁকো দিয়ে পার হতে পারে না বলে গামছা পড়ে নদী পার হয়।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৪ কিমি. উত্তরে পাহাড়ি চেঙ্গি নদীর তীরে পল্টনজয়পাড়া। নদীর ওপর নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হয় ৯ গ্রামের মানুষ। দুর্গম হাজাপাড়া, কাপতলা, ভাঙ্গামুড়া-১, ভাঙ্গামুড়া-২, শঙ্কমোহনপাড়া, লারমাপাড়া, খামারপাড়া, বেলতলীপাড়া, পল্টনজয়পাড়াসহ ৯ গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এ সাঁকো পার হয়। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপারে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হাতিমাথা সিঁড়ি এখানকার কাপতলা এলাকায় অবস্থিত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পল্টনজয়পাড়ায় সরেজমিনে দেখা যায়, সাঁকো থেকে পাঁচ কিলোমিটারের বেশি দুর্গম এলাকার মানুষরা এমনিতে পাহাড়ে উঠে-নেমে ভারি মালামাল বয়ে রাস্তা পর্যন্ত আসে কষ্ট করে। এর উপর ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো মাঝখানে বাঁধা হয়ে পড়ে দুর্গম ৯ গ্রামের মানুষদের। সাঁকোর বাঁশ কোলে পড়ে যাচ্ছে। নদীর পুরোপুরি সাঁকো নেই। নদীর অধেক পর্যন্ত সাঁকো আছে। বাকিটা নেই। আবার সাঁকোতে উঠতে মই ব্যবহার করতে হয়। কলার কাদি, হলুদের বস্তা, ঝারুফুলসহ ভারি মালামাল বয়ে নড়বড়ে সাঁকো পার হতে পারে না। তাই অনেকে নদীর পানিতে নেমে নদী পার হয়। প্রায় মানুষ সাঁকো দিয়ে পার হতে পারে না বলে গামছা পড়ে নদী পার হয়। পাহাড়ি মানুষগুলোর দুর্ভোগের কোনো শেষ নেই।
ভাঙ্গামুড়ার বাসিন্দা সুমেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, ভাঙ্গামুড়া, হাজাপাড়াসহ পাঁচ গ্রামের মানুষরা খাগড়াছড়ি শহরের গিয়ে সপ্তাহে একবার বাজার করতে যায়। আমাদের জুমের কলা ও বিভিন্ন ফল, ছাগল ও মুরগী, ঝারু ফুলসহ সমস্ত ভারি মালামাল কাদে ও মাথার উপর বয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার করে বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে হয়। একটি ব্রিজ হলে পাড়া পর্যন্ত গাড়ি চলে আসত। একটি ব্রিজের অভাবে সারাজীবন কষ্টে জীবনযাপন করছি।
কাপতলা কাব্বারী ( পাড়া প্রধান ) ত্রিজগৎ ত্রিপুরা বলেন, ভারি মালামাল সাঁকো দিয়ে যাওয়া যায় না। মনে ভয় লাগে কবে ভেঙ্গে পড়ে যায়। বয়স্ক মানুষরা পার হতে গিয়ে নদীতে পড়ে যায়। বর্ষাকালে নদীতে পানি বেড়ে গেলে আর পার হওয়া যায় না। বিকল্প কোনো রাস্ত নেই। বর্ষাকালে যাতায়াত করতে পারি না।
হাজাপাড়ার শিক্ষার্থী লংবতী ত্রিপুরা ও কুমুতুং ত্রিপুরা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে পার হতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। বাঁশে পা রাখতে পা পিছলে নদীতে পড়ে যায়। বই খাতা পানি ভিজে যায়। অনেকে আহত পর্যন্ত হয়। ভয়ে অনেকে শিক্ষার্থী নদীতে নেমে স্কুলে যায়।
পল্টনজয়পাড়ার বাসিন্দা শফিক রোয়াজা বলেন, বাড়ি থেকে বের হয় সুন্দর পোশাক পড়ে। সাঁকো পার হতে হয় জুতা হাতে নিয়ে। পিচ সড়কে উঠে তার পর জুতা পায়ে দিতে হয়। যুগযুগ ধরে আমরা দুর্ভোগে আছি। একটি সেতু নির্মাণ হলে মানুষ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।
পেরাছড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার নিলাঙ্কুর ত্রিপুরা বলেন, জনগণ নিয়ে বিভিন্ন কার্যালয়ে গিয়েছি। কিন্তু কিছু হচ্ছে না। বর্ষাকালে নদীতে প্রচুর পানি হয়। পারাপার করতে অসুবিধা হয়। প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে অনেক কষ্ট হয়। যার কারণে স্কুলে পৌঁছায় দেরিতে। এখানে একটা ব্রিজ প্রয়োজন। একটি ব্রিজ হলে ৯ গ্রামের মানুষরা উপকৃত হবে।
পল্টনজয়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্র বিকাশ চাকমা বলেন, এখন যে সাঁকো দিয়ে আমরা পারাপার করি এ সাঁকো ঝুঁকিপূর্ণ। সাঁকো ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যাবে এমন অবস্থা। নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে পারাপর করতে শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যা হয়। বড়রা পার হয় ভয় নিয়ে। ছোটরা পার হতে গিয়ে অনেক সময় নদীতে পড়ে যায়। অল্প বৃষ্টি হলে নদীতে পানি ভেড়ে গেলে সাঁকো ভেঙে ভেসে নিয়ে যায়। তখন নদী পার হওয়া যায় না। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী স্কুলের আসতে পারে না।
সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রতন ত্রিপুরা বলেন, উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা পরিষদে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু একটাও হয়নি। সামনে অর্থ বছরে চেঙ্গি নদীর উপর সেতু নির্মাণ করে দেবে বলেছে উপজাতীয় শরনার্থী বিষয় টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা (এমপি)।
খাগড়াছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শানে আলম বলেন, এখানে একটা ব্রিজ করার চেষ্টা করছি। ব্রিজ করার বিষয় নিয়ে পেরাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান রতন ত্রিপুরাসহ দুই তিন জন নিয়ে বসেছি। উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। এটি এমপি মহোদয় দায়িত্ব নিয়ে ব্রিজ করবেন বলে শুনেছি।




