সুলতানি আমলের স্থাপত্যরীতি, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা রোয়াইলবাড়ির প্রাচীন দূর্গ। নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার বেতাই নদীর তীরে রোয়াইলবাড়ি নামক স্থানে এ দূর্গের অবস্থান। রোয়াইলবাড়ি দূর্গটি নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না বলে স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিকবিদগণের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, এটি সুলতানি আমলের স্থাপনাও হতে পারে বা মুঘল জেনারেলের স্থাপনাও হতে পারে।
৮০’র দশকের আবিষ্কৃত এ স্থানটি ১৯৮৭ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসাবে নথিভূক্ত করেন। রোয়াইলবাড়ি এ প্রাচীন দূর্গটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করার পর ১৯৯১-৯৩ সালে এখানে খনন কাজ পরিচালনা করলে দূর্গের ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও দুটি ঢিবি আবিষ্কার করেন।
প্রাচীন দূর্গটির পূর্ব-পশ্চিম দিকে লম্বা ও প্রাচীর দ্বারা বিভক্ত এবং দূর্গের প্রাচীর নির্মাণে ইট ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন এটি একটি ১২ দুয়ারি মসজিদ ছিল হয়তো। নান্দনিক কারুকার্জসম্পন্ন দেয়াল এবং এক একটা পিলার। পিলারগুলো পাথরের তৈরি। তার পাশে রয়েছে প্রাসাদের চিহ্ন, একটি সুরঙ্গপথ এবং পাশেই একটি বট গাছের নিচে কথিত নিয়ামত বিবির মাজার, প্রায় ১২ হাত লম্বা ডেঙ্গু মালের কবরস্থানসহ সামনে দু’টি পুকুর।
তারা আরও বলেন, ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি প্রাচীন দূর্গটি এখন শুধুই কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে কালের বিবর্তণে অনেক কিছুর পরিবর্তন হলেও রোয়াইলবাড়ির প্রাচীন দূর্গটির রূপ খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। চারদিক যেন নীরব, নিস্তব্ধ, শুধু ধ্বংস্তুপ পড়ে আছে অযত্নে অবহেলায়। চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। দূর্গটির সামনে রাস্তায় একটি গেইট এবং ৩ দিকে দেয়াল নির্মাণ হলেও সামনের অংশে দেয়াল না থাকায় গরু-ছাগল ঢুকে প্রাচীন দূর্গটির সৌন্দর্য নষ্ট করছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন এ প্রাচীন দূর্গটি একনজর দেখার জন্য ঘুরতে আসেন ভ্রমণ পিপাসুরা। দূর্গটি দেখতে যাওয়ার রাস্তাটি খুবই বেহাল দশা, শুকনো মৌসুমে বালু আর বর্ষাকালের কাঁদায় যানবাহন নিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর হয়। তারা মনে করেন, দূর্গটির রক্ষণাবেক্ষণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং এটিকে পর্যটন এলাকা হিসাবে ঘোষণা করলে সরকার যেমন রাজস্ব পাবে পাশাপাশি এলাকাবাসীরও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে।
সরেজমিনে গেলে বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘুরতে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমরা জানতে পারি কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি এ প্রাচীন দূর্গটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। তাই আমরা এই দূর্গটি দেখতে এসেছি। কিন্তু এখানের রাস্তার যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিশ্রামাগার, খাবারের ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি হচ্ছে। তাই আমরা পর্যটক হিসেবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।