চৈত্রের অনেক আগে থেকেই পানিশূন্য হয়ে পড়ে তিস্তা। শুষ্ক মৌসুমে পানি না পেয়ে অনেক সময় আবাদ করতে পারেন না তিস্তাপাড়ের চাষিরা। ভারত গজলডোবা ব্যারাজ বন্ধ রাখায় শুষ্ক মৌসুমে দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে এবার চৈত্র মাসের অসময়ে হঠাৎ করেই ভারত গজলডোবা ব্যারাজ খুলে দিয়েছে। এতে পানি হঠাৎ করেই পানি বেড়েছে তিস্তায়। অসময়ে তিস্তা ভরে উঠায় বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে পানিতে সয়লাব হয়েছে। তলিয়ে গেছে মরিচ-পেঁয়াজ, আলু, মিষ্টি কুমড়া, গম, তামাক, ভুট্টাসহ অন্যান্য আবাদ।
স্থানীয়রা বলছেন, গত পাঁচ দিন ধরেই তিস্তার পানি দিনে কমে গেলেও বিকেল থেকে বাড়ছে। সেই পানিতে ভেসে যাচ্ছে চরের আবাদ। অতীতের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তারা বলছেন, চৈত্র মাসে তিস্তা নদীতে সাধারণত পানি থাকে কম। অনেক সময় থাকেই না। তবে কয়েক দিনে হঠাৎ তিস্তায় পানি আসতে শুরু করে। বেড়ে গিয়ে চরাঞ্চল ভাসিয়ে দিচ্ছে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী জেলায় তিস্তারচর বা তীরবর্তী এলাকার ফসল পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে।
দেশের উত্তরাঞ্চলে বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার থাকে। বোরো আবাদ ফেটে চৌচির হয়ে যায়। কোনোরকমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে জমিতে সেচের মাধ্যমে ফসল রক্ষা করা হয়। তবে চলতি শুষ্ক মৌসুমে আকস্মিকভাবে তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বিশেষ করে চর এলাকার চাষিরা তাদের বিভিন্ন ফসলি ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন।
তিস্তা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রমতে, চলতি শুষ্ক মৌসুমে ভারত পানি দিয়েছে সাড়ে তিন হাজার কিউসেক। সেচ কাজে ব্যবহার হয়েছে মাত্র ১১০০ কিউসেক। ভারত থেকে অতিরিক্ত পানি পাওয়ার আশায় তিস্তার দুটি গেট খুলে দেওয়া হয়। কয়েকদিন ধরে হঠাৎ পানি আসা শুরু করে। এতে চরাঞ্চলে কৃষকদের হাজার হাজার একর ফসলি জমিতে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ফসল নষ্ট হয়েছে।
তিস্তার চরের পেঁয়াজ চাষি ফজর আলী জানান, হঠাৎ এ চৈত্র মাসে তিস্তার পানি কেন বেড়ে গেল তা আমরা জানি না। তবে আমার প্রায় এক একর আবাদি পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। চরের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত। আগে কখনই চৈত্র মাসে হঠাৎ এমন পানির তোড় দেখিনি। তবে এবার কেন যে এভাবে অসময়ের বন্যা হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বাইস পুকুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন জানান, তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় জেগে ওঠা চরের প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে গম ও পেঁয়াজ রোপণ করেছি। তবে ৫ দিনের পানি উঠানামায় গম, পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, জায়গা জমি নাই তাই এ জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন ফসল আবাদ করে আমরা জীবিকা নির্ভর করি। চলতি বছর হাজার হাজার কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা আবারও ক্ষতিগ্রস্ত।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদিন ইসলাম জানান, গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ায় গত ৭২ ঘণ্টায় সাড়ে তিন হাজার কিউসেক তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু ফসলের ক্ষতি হয়েছে আবার কিছু ফসলের উপকার হয়েছে। তবে জেলার এখনো ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে।
আনন্দবাজার/শহক