ঢাকা | বুধবার
১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভিসা জটিলতায় মার্চে বাংলাদেশ- ভারত যাত্রীবাহী রেল চলাচল নিয়ে সংশয়

ভিসা জটিলতায় মার্চে বাংলাদেশ- ভারত যাত্রীবাহী রেল চলাচল নিয়ে সংশয়

অতিমারী করোনাভাইরাসের সংক্রমন রোধে প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ বাংলাদেশ- ভারতের মধ্যে যাত্রীবাহী রেল যোগাযোগ।বর্তমানে করোনার প্রাদুর্ভাব কমে আসায় পূনরায় সেই পরিষেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।বাংলাদেশ রেলওয়ে সুত্র বলছে, এরই মধ্যে প্রক্রিয়া শেষের পথে কিন্তু স্থল বন্দর দিয়ে ভারতের ভ্রমণ ভিসা বন্ধের কারণে মার্চেই রেল চালু হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। এখন ভারতীয় হাইকমিশন ভিসা প্রদান শুরু করলেই রেল চলাচল শুরু করা যাবে। সে লক্ষ্যে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনে শিগগিরই চিঠি পাঠাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

রোববার (২০ মার্চ) রেলপথ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্ত: মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ভারতে ভ্রমনের ক্ষেত্রে সড়ক ও বিমান পথে যাতায়াতের জন্য ভিসা প্রাপ্তদের রেলপথে ভ্রমনের অনুমতি দেওয়া এবং ভবিষ্যতে ইস্যুকৃত ভিসায় রেলপথ অন্তর্ভূক্ত করে ভিসা ইস্যুর বিষয়ে অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনকে চিঠি পাঠাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। আরো সিদ্ধান্ত হয়, বাংলাদেশ ভারত দুই দেশের কোভিড-১৯ প্রোটোকল পর্যালোচনা পূর্বক ট্রেন পরিচালনায় নিযুক্ত কর্মীদের এবং ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী যাত্রীদের চলাচলের বিষয়ে কর্ম পদ্ধতি নির্ধারনে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভারতের রেলওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জানান, আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো স্বাধীনতা দিবসে অর্থাৎ ২৬ মার্চ থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে তিনটি রেল রয়েছে সেগুলো পূনরায় চলাচলের। কিন্তু ভারতীয় হাই কমিশন সড়ক পথে ভিসা প্রক্রিয়া চালু না করায় হয়তো সময় পেছাতে হবে।

এ বিষয়ে খোঁজ নিতে যমুনা ফিউচার পার্কে ভারতীয় হাই কমিশনের ভিসা সেন্টারে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সড়ক পথে ভ্রমনের জন্য তাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। যদি চিঠি আসে তবে দ্রুতই ভিসা আবেদন নেওয়া শুরু করা হবে।

বাংলাদেশ- ভারতের মধ্যে তিনটি রুটে ট্রেন চলাচল করে। এরমধ্যে ঢাকা- কোলকাতা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং খুলনা- কোলকাতা রুটে বন্ধন এক্সপ্রেস আগে থেকে চলমান ছিলো। গত বছরের ২৬ মার্চ ঢাকা- নিউ জলপাইগুড়ি রুটে উদ্বোধন করা হয় মিতালী এক্সপ্রেস। যা উদ্বোধনের পর আর চালুর সুযোগ হয়নি। এর আগে
২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে যাত্রা শুরু করে ” মৈত্রী এক্সপ্রেস”। ওই যাত্রার উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। দীর্ঘ ৪৩ বছর পর দুই দেশের মধ্যে এ ট্রেন যাত্রার সূচনা হয়েছিলো। আর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর খুলনা-কোলকাতা পথে “বন্ধন এক্সপ্রেস” চলাচলের সূচনা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কোলকাতার মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করেন।

জানা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমন শুরুর পর ২০২০ সালের ১৫ মার্চ থেকে এসকল ট্রেন বন্ধ রয়েছে। দুই বছর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় রেলওয়েকে ট্রেন চলাচল পূনরায় চালু করতে চিঠি দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশে ট্রেন চালুর বিষয়ে একমত জানিয়ে গত ১৪ মার্চ বাংলাদেশ রেলওয়ে চিঠি পাঠায় ভারত রেলওয়ে। এরপর থেকে শুরু হয় রেল চলাচলের প্রস্তুতি। রোববার (২০ মার্চ) সেই প্রস্তুতিরই অংশ হিসেবে বৈঠকে বসে আন্ত: মন্ত্রণালয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারতীয় হাইকমিশন সড়ক পথে ভিসা চালু করলে ট্রেন চালু করতে আর কোনো বাধা থাকবেনা। সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভ্রমন করা ব্যক্তিতে ভ্রমনের ৭২ ঘন্টা আগে কোভিড-১৯ পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। ৫ বছর পর্যন্ত শিশুদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার বাইরে রাখা হলেও বিশেষ নির্দেশনা নেই ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী যাত্রীদের ক্ষেত্রেও।

উল্লেখ্য, ঢাকা- কোলকাতা পথে চলাচল করা সম্পূর্ন শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মৈত্রী এক্সপ্রেস সপ্তাহে পাঁচদিন ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। মৈত্রির এসি কেবিনের ভাড়া প্রতি সিট ভ্রমন কর ৫০০ টাকাসহ ৩৫০৫ টাকা। আর এসি চেয়ার ভ্রমন করসহ ২৫০৫ টাকা। ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ৫০ শতাংশ ছাড় প্রযোজ্য হবে। তবে তা নির্ধারিত হবে পাসপোর্ট অনুযায়ী। আর খুলনা- ঢাকা রুটে সপ্তাহে দুইদিন চলে বন্ধন এক্সপ্রেস। এই ট্রেনে এক্সিকিউটিভ চেয়ার ও এসি চেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে। খুলনা-কোলকাতার এক্সিকিউটিভ চেয়ারের ভাড়া ভ্রমন কর সহ ২৫০৫ টাকা। এসি চেয়ার ভ্রমন করসহ ১৫০৫ টাকা। আর ঢাকা- জলপাইগুড়ি পথে মিতালী এক্সপ্রেস উদ্বোধন হয়ে এখন চলাচলের অপেক্ষায়। মিতালী এক্সপ্রেসের ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে

ভ্রমন করসহ এসি বার্থের ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে ৪ হাজার ৯০৫ টাকা, এসি সিটে ৩ হাজার ৮০৫ টাকা এবং এসি চেয়ারের ভাড়া ২ হাজার ৭০৫ টাকা। আর পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ভাড়া হবে মূল ভাড়ার ৫০ শতাংশ।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন