বুড়িমারী-চ্যাংরাবান্ধা
ব্রিটিশ আমলে অকার্যকর রেলপথ ফের চালু হলে বাড়বে বাণিজ্য-রাজস্ব
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় জোন লালমনিরহাটের বুড়িমারী থেকে ভারতের মেখলিগঞ্জ-চ্যাংরাবান্ধা রেলপথে এখনও কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে রেল লাইনসহ নানা স্থাপনা। ব্রিটিশ আমল হতে এ পথে রেল যোগাযোগ চালু থাকলেও ১৯৬৫ সালে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের জের ধরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে রেলপথ বন্ধ করে দেয় ভারত। সেই থেকে অকার্যকর হয়ে পড়েছে এ রেলপথটি। পরিণতিতে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের পণ্য আনা- নেওয়া করতে হচ্ছে সড়ক পথে।
তবে স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, উভয় দেশের সরকার আলোচনা করে বুড়িমারী রেলস্টেশন-স্থলবন্দর হতে শূন্যরেখা হয়ে ভারতের চ্যাংরাবান্ধা শুল্ক স্টেশনের মধ্যবর্তী ৭৫০ মিটার রেল লাইন পুনঃস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। তাদের মতে এ রেলপথটি চালু হলে বাংলাদেশের সাথে ভারত, ভুটান ও নেপালের পরিবহন পথ কমে আসবে। এতে উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় কয়েকগুন বাড়বে।
ব্যবসায়ীসহ বুড়িমারী স্থলবন্দর ব্যবহারকারী পাসপোর্টধারী যাত্রী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী রেলস্টেশন থেকে ভারতের কোচবিহার রাজ্যের মেখলিগঞ্জ-চ্যাংরাবান্ধা রেলস্টেশনের দুরত্ব মাত্র ৭৫০ মিটার (সোয়া এক কিলোমিটার)। পুনঃসংযোগের মাধ্যমে এ রেলপথটি চালু হলে বুড়িমারী স্থলবন্দরের সাথে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হবে।
রেলওয়ে বিভাগ জানায়, সময়ের প্রয়োজনে পাটগ্রাম-বুড়িমারী থেকে ভারতের মেখলিগঞ্জ-চ্যাংরাবান্ধা রেলপথটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। রেলপথটির উন্নয়ন সাধন করে বুড়িমারী সেকশনে প্রয়োজনীয় ওয়াগন দিয়ে পণ্য পরিবহন করা হলে রেল বিভাগের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি ভারত, ভুটান ও নেপালের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও পর্যটক বা যাত্রী পরিবহন করা হলে দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভ’মিকা রাখা সম্ভব হবে।
সম্প্রতি বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে ওপারের ভারতীয় চ্যাংরাবান্ধা শুল্ক স্টেশনে রেলপথ সংযোগ নির্মাণের সম্ভাব্যতা নিয়ে স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাথে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পাটগ্রামের শহীদ আফজাল হোসেন মিলনায়তনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি রুহুল আমীন বাবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার, চীফ অপারেটিং সুপারিনটেন্ডেন্ট শহিদুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ফিরোজী, প্রধান যন্ত্রপ্রকৌশলী মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা, লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফীনুর মোহাম্মদ বক্তব্য রাখেন। পরে তারা বুড়িমারী রেলস্টেশন থেকে ভারতীয় চ্যাংরাবান্ধা শুল্ক স্টেশনের শুণ্য রেখা পযর্ন্ত রেলপথ সরেজমিনে পরিদর্শনও করে গেছেন।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী সওদাগর ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী হুমায়ুন কবির সওদাগর বলেন, রেলপথ সংযোগ হলে সবার উপকার হবে। যেখানে সড়কপথে ট্রাকে পণ্য পরিবহনে ব্যয় বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষ ও ভোক্তাদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সেখানে রেলের ওয়াগনে পণ্য পরিবহন করা হলে তিন ভাগের দুই ভাগ ব্যয় কমবে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা, আমদানি-রপ্তানিকারক সবাই লাভবান হবে। রাস্তাঘাট ভালো থাকবে-কমবে দুর্ঘটনা।
স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি রুহুল আমীন বাবুল বলেন, বুড়িমারী থেকে মাত্র সোয়া কিলোমিটার রেলপথ ভারতের চ্যাংরাবান্ধার সাথে সংযোগ দেওয়া হলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ীসহ সবার কল্যাণ হবে।
লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
ভারতের চ্যাংরাবান্ধা থেকে লালমনিরাটের হাতীবান্ধা পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েল গেজ করার প্রস্তাবও করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে ধাপে ধাপে রেলপথ সম্প্রারণ করার পরিকল্পনাও রয়েছে। রেলে পণ্য পরিবহন করা হলে নিঃসন্দেহে ভাড়া কম হবে, জনসাধারণ ও ব্যবসায়ীদের উপকার হবে। রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশন কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) কেফায়েত উল্যাহ মজুমদার বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বর্তমানে ট্রাকের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। এসব পণ্য যদি ট্রেনে আসে তাহলে লোডিং-আনলোডিংসহ পণ্য পরিবহন খরচ অনেকাংশে কমে আসবে।