ঢাকা | সোমবার
৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুষ্টিয়ার সংস্কৃতি অঙ্গনে প্রাণের ছোঁয়া

কুষ্টিয়ার সংস্কৃতি অঙ্গনে প্রাণের ছোঁয়া

শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করা জেলার নাম কুষ্টিয়া। এ জেলায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহর তীর্থভূমি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত এ কুষ্টিয়া, বিষাদ সিন্ধুর রচয়িতা সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন, এ উপমহাদেশের গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিণাথ, স্বদেশী আন্দোলনের নেতা বাঘা যতিন, নীলকর আন্দোলনের পথিকৃৎ জমিদার প্যারী সুন্দরী, অবিভক্ত ভারতের প্রধান বিচারপতি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. রাধা বিনোদ পালসহ অসংখ্য গুণীজনের পীঠস্থান হিসেবে কুষ্টিয়াকে করেছে বিখ্যাত ও আকর্ষণীয়। পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান এ জেলায় পর্যটকদের আগমন লেগেই থাকেই।

প্রাচীন ঐতিহ্য পদ্মা গড়াই বিধৌত কুষ্টিয়ার বিস্তীর্ণ জনপদজুড়ে এখন বাউলের একতারার সুর মূর্ছনার পরিবর্তে করোনার হানায় হাহাকার ধ্বনিত হয়েছিলো কয়েক বছর। করোনা যেন বদলে দিয়েছে লালন-রবীন্দ্র শহরের আসল রূপ মাধুর্য।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কুষ্টিয়ায় লালন, বাউল, পদ্মাপুরান, নসিমন, ভাসান গানের শিল্পীর সংখ্যা ২ হাজারেরও অধিক। যাদের অধিকাংশেরই আয়ের উৎস সংস্কৃতি। তবে করোনার কারণে সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে অধিকাংশ শিল্পীই মানবেতর জীবনযাপন করছিলো। অনেকে পেশা পরিবর্তন করে রিকশা, অটো এবং ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছে। এ অবস্থার উত্তোরণ ঘটিয়ে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায় কুষ্টিয়ার শিল্পীদের।

কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে করোনাকালীন প্রণোদনার জন্য ১ হাজার শিল্পীর তালিকা পাঠানো হয়েছিলো। এদের মধ্যে ৫০০ জনকে এককালীন নগদ অর্থ প্রনোদনা দিয়ে সহযোগিতা করেছিলো।

আমরা চেষ্টা করেছিলোম সংস্কৃতি অঙ্গনের এ জেলায় যাতে করে সংষ্কৃতি চর্চা একেবারেই থমকে না যায়। এজন্য আমরা অনলাইন প্লাটফর্মে অনেক সফল প্রোগ্রাম করতে সক্ষম হয়েছি। জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার লালন একাডেমির এডহক কমিটির পরিচালক সেলিম হক বলেন, বাউলরা একমাত্র সংগীতের ওপরই নির্ভরশীল। তাদের দৈনন্দিন আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবাই পথে বসেছিলো। অনেকেউ প্রণোদনা পেয়েছে। এখন আবার সুদিন ফিরে এসেছে। গান গেয়ে সংসার চালাচ্ছে লালনের শিল্পীরা।

কুষ্টিয়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহিন সরকার বলেন, কুষ্টিয়ায় সংস্কৃতি কর্মকাণ্ড করোনাকারীন সময়ে বন্ধ থাকার ফলে যারা নাটক, নৃত্য, সংগীতের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিলো। কেউ কেউ সরকারি প্রণোদনা পেয়েছিলো। কেউ কেউ পেশাও বদলে ফেলেছে। আবার যারা সংগীত পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো তারা এ পেশায় আবার ফিরে এসেছে।

কুষ্টিয়া নৃত্য রং একাডেমির পরিচালক মাহাবুব শাহরিয়া বাদল বলেন, কুষ্টিয়ার স্থবির সংস্কৃতি কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি এর শিল্পীদের অবস্থাও স্থবির এবং করুণ। অনেকদিন মানবেতর জীবনযাপন করেছে শিল্পীরা। আবার কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে।

পদ্মাপুরান গানের শিল্পী মিরাজুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন এলাকায় মনবাসনা পুরণ কিংবা সর্পদংশন থেকে মুক্তি পেতে এ পদ্মাপুরান গানের আসর বসানো হয়ে থাকে। তবে করোনাকালীন কোনো গানের আয়োজন না থাকায় আমরা বিপদে পড়েছিলাম। অন্য কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছিলাম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,  শিল্পী সমাজের মাঝে সরকারি প্রণোদনা ভাতা পাওয়ার কথা থাকলেও তারা এ পদ্মাপুরানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কোনো ভাতা কিংবা সহযোগীতা পায়নি। বর্তমানে এখন আমরা বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠান করতে পারছি বলে ভালো লাগছে।

কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সুজন রহমান বলেন, করোনাকালীন সময়ে শিল্প সংস্কৃতি চর্চা থেমে গেলেও আমরা শিল্পকলা একাডেমীর মাধ্যমে কিছু কিছু সংগঠনকে উজ্জীবিত রাখার চেষ্টা করেছিলাম মাত্র। এই দুই বছরে ১২০টি ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম হয়েছে। এর মধ্যেও শিল্পীরা তাদের সম্মানী পেয়ে এ সংস্কৃতি চর্চা ধরে রেখেছিলেন। এসব অনলাইন প্লাটফর্মের মধ্যে ছিলো বটতলা কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মূল্যবোধের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,  নদী কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিল্পের শহর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,  তৃণমুল মানুষের জন্য শিল্প,  জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মাদকাসক্তের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নিয়মিত যাত্রা উৎসব পালন করে আসা সহ স্বল্প ব্যয়ে নাটক নির্মাণসহ করোনার বিরুদ্ধে শিল্প শীর্ষক নিয়মিত সাপ্তাহিক অনলাইন আয়োজন অব্যহত ছিলো। নতুন ভবন নির্মানকে কেন্দ্র করে শিল্পীরা নিজেরা নতুন পরিবেশ মেলে ধরতে কাজ করে যাচ্ছে বলেও যোগ করেন তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন