ঢাকা | সোমবার
৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাচ্ছে পাখির কলকাকলি

হারিয়ে যাচ্ছে পাখির কলকাকলি

পরিবেশ-প্রতিবেশ—

কালের আবর্তে গ্রাম বাংলার প্রকৃতি সবুজ লীলাভূমি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে পাখি। এক সময় পাখির কলকাকলীতে গ্রাম বাংলার মানুষের ঘুম ভাঙলেও গ্রাম বাংলায় এখন আর আগের মত পাখির ডাক শোনা যায় না। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে পাখির আবাসস্থল ধংস, বিভিন্ন কৌশুলে পাখি শিকার ও ফসলের ক্ষেতে প্রয়োগ করা কীটনাশকের প্রভাবে এসব পাখি আজ বিলুপ্ত প্রায়।

বিশেষ করে জাতীয় পাখি দোয়েল, ঘুঘু, বাওয়াই, শালিক, টুনটুনি, কাঠ ঠোকরা, ফ্যসকে, কুকিল, ডাউক, ক্যাসকেচি, বাবুই, মাছরাঙ্গা, বটর, টেইটেরা, গোমড়া ও প্যাঁচাসহ আরো অনেক পাখিকে আর দেখা যায় না। শোনা যায় না এসব পাখির মধুর ডাক। সেই সাথে গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত বসন্তে যে পাখি ‘বউ কথা কও’ বলে গ্রামের প্রতিটি মানুষকে মাতিয়ে তুলত সেই পাখির দেখা আর পাওয়া যায় না।

আগে রাতের ঘুম ভাঙ্গত পাখির কলতানে অথচ এখন যান্তিক যুগে জাগতে হয় যানবাহন ও মাইকের শব্দে। রাতের প্রতিটি প্রহরে ডাকত পাখি কিন্তু এখন প্রহর জানার আর কোন উপায় নাই। বর্তমান প্রজন্ম চিনেনা এসব পাখি। এসব পাখির ডাকও শোনেনি কোনদিন। ফলে শিশু কিশোরদের কাছে দিন দিন হয়ে যাচ্ছে এসব পাখি ইতিহাস।

এমনকি আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল সেটিয় আজ বই অথবা ছবিতে দেখে পরিচিত হয় শিশু কিশোররা। কখনো দেখেনি মুক্ত আকাশে উরন্তএ পাখি। শোনেনি এ পাখির  ডাক। শহরের কয়েকটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে অধ্যয়নরত একাধীক ছাত্র-ছাত্রীকে জিজ্ঞাস করা হলে তারা বলে দোয়েল পাখি কখনো আকাশে উড়তে বা তার ডাক শোনেনি। তারা বইয়ের পাতায় অংকিত ছবি দেখে জাতীয় পাখি দোয়েল চিনেছে।

জানা যায়, কৃষকরা এখন বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে সব সময় কীটনাশক ঔষধ প্রয়োগ করে। এতে করে পাখির খাদ্য ফড়িং, ফুতি, প্রজাতপতি, মশা, লেদা পোকা, গোয়ালীসহ বিভিন্ন প্রকার কীট পতঙ্গ মরে যায় বা আক্রান্ত হয়। পাখিরা কীটনাশক দ্বারা বিষাক্ত এসব পোকামাকড় খেয়ে মারা যাচ্ছে দিনের পর দিন। এ কারণে দেশীয় পাখি কালের অবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। 

উপজেলার শালবাড়ী গ্রামের ৭০ বছর বয়সের কৃষক কাশেম আলী জানান, আমরা আগে জমিতে ঔষধ দেই নাই। তখন দিনভর ফসলের মাঠে নাচানাচি করত হরেক রকমের পাখি। পাখির যন্ত্রনায় দিনভর মাঠে ফসল পহরা দিতে হত আবার আধাপাকা অবস্থায় ফসল ঘরে তুলতে হত। আজ সেসব পাখি আর দেখা যায় না। তাদের ডাকও শুনতে পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশ সংবিধাণে পাখি শিকারের বিষয়ে একটি আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রায়োগ না থাকায় অনেকে অবলীলায় পাখি শিকার করছে। প্রকৃতি থেকে পাখি হারিয়ে যাওয়ার এটিও একটি অন্যতম কারন বলে মনে করছেন অনেকেই। মূলত পাখি যে শুধু পরিবেশের ভারসাম্যই রক্ষা করে তা নয়, প্রকৃতির সৌন্দর্যও বাড়ায়। তাই পাখি শিকার বন্ধের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহে পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলা সকলের কর্তব্য। এ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি পরিবেশ বান্ধব সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসাতে হবে। তাহলেই হয়তো আবার মানুষের ঘুম ভাঙ্গবে পাখির কলকাকলীতে।

সংবাদটি শেয়ার করুন