ঢাকা | বুধবার
১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাস্তুহারা ৪ হাজার পরিবার

র ভাঙনের দশ বছর

তিস্তার ভাঙনের দশ বছর

ঠেকানো যাচ্ছে না তিস্তার ভাঙন। সারা বছরই ভাঙছে তিস্তার তীর। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ভাঙন ঠেকানোর অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস ও বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, গত দশ বছরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নদী ভাঙনে বাস্তুহারা হয়েছে ৪ হাজার পরিবার, ৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি এবং দেড়শ কিমি রাস্তাঘাট।

উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, শান্তিরাম ও কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তানদী। প্রতিবছর বন্যার সময় গড়ে তিস্তার ভাঙনে কমপক্ষে ৩০০ হতে ৪০০ পরিবার নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। বাস্তুহারা অনেক পরিবার জেলার বাহিরে গিয়ে আবার অনেকে চরের মধ্যে বসতবাড়ি গড়ে তুলছে। আজ থেকে বিশ বছর আগে যাদের জমি-জিরাত নদীগর্ভে বিলিন হয়েছিল, সে সমস্ত পরিবারের বসতভিটা ও জমি জিরাত এখন জেগে উঠেছে। তারা অনেকে পুনরায় চরে ফিরে এসে বাপ দাদার বসতভিটা এবং জমিতে নানাবিধ ফসলের চাষাবাদ করে সংসার পরিচালনা করছে।

স্বাধীনতার ৫১ বছর অতিক্রম হলেও আজ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে তিস্তা নদী খনন, ড্রেজিং, সংস্কার, সংরক্ষণ করা হয়নি। শুধুমাত্র বন্যা আসলে অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পলি জমে বর্তমানে তিস্তানদী আবাদী জমিতে পরিণত হয়েছে। হাজারও হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে বাহারি ফসল। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে অসংখ্য শাখা ও নালায় পরিনত হয়েছে। সে কারণে ভাঙনের তীব্রতা বেডে গেছে।

উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের নিজাম খাঁ গ্রামের আকবর আলী জানান, আজ থেকে ৪০ বছর আগে তার পিতা নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এ গ্রামে এসে বসবাস শুরু করে। বর্তমানে চর এলাকায় তার বাপ দাদার ৩০ বিঘা জমি জেগে উঠেছে। ওই সমস্ত জমিতে এখন নানাবিধ ফসল চাষাবাদ করছেন তারা। তার দাবি স্থায়ীভাবে নদী খনন এবং ড্রেজিং করলে শাখা ও নালা নদী সমূহ বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি জেগে উঠা জমি আর কখনো ভাঙবে না।

কাপাশিয়া ইউনিয়নের বাদামের চর গ্রামের মোন্তাজ আলী জানান, উপজেলায় ১৬টি ইউনিয়ন ছিল। তিস্তার ভাঙনে উপজেলার ভূ-খন্ড হতে একটি ইউনিয়ন বিলুপ্ত হয়ে গেছে আজ থেকে ৩৫ বছর আগে। বর্তমানে ১৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। তিনি বলেন, নদী ভাঙনের কষ্ট সেই জানে, নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে যার বসতবাড়ি। মোন্তাজ আলী জানান, তার বয়স এখন ৬০ বছর। এ পর্যন্ত তার বসতবাড়ি ১৮ বার ভাঙনের শিকার হয়েছে।

উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি জানান, ২০২১ সালের ভাঙন গত বিশ বছরের ভাঙনকে হার মানিয়েছে। তার দাবি হরিপুর ইউনিয়নসহ ৮টি ইউনিয়নে গত বছর ৮শ’ পরিবার, ১ হাজার হেক্টর জমি, ৫০ কিলোমিটার রাস্তা, ১০টি কালভাট, ৫টি ব্রিজ, ১টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ২টি স্কুল ও ৩টি মসজিদ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বর্তমানেও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, তিস্তার চরাঞ্চল এখন কৃষিতে সম্ভাবনাময়। চরাঞ্চলের আবাদি জমি এবং চরবাসি রক্ষা করতে হলে স্থায়ীভাবে নদী খনন, ড্রেজিং, সংরক্ষণ, শাসন করতে হবে। তা না হলে ভাঙনের হাত থেকে চরবাসিকে রক্ষা করা যাবে না।

উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোহাম্মদ আল মারুফ জানান, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে তিস্তানদী প্রবাহিত। প্রতিবছর বন্যার সময় নদীভাঙনে অনেক পরিবার নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে। পাশাপাশি আবাদি জমি, রাস্তাঘাট ভাঙনের শিকার হয়। নদী ভরে গিয়ে অসংখ্যক শাখানদী এবং নালায় পরিণত হয়েছে। সে কারণে গোটা বছর নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদী খনন করে গতিপথ পরিবর্তন করে দিলে ভাঙনের প্রকোপ অনেকটা কমে আসবে। উপজেলা পরিষদ ভবনটিও তিস্তার শাখা নদীর ধারে অবস্থিত। তিনি বলেন উপজেলা পরিষদটি রক্ষায় ৫০০ মিটার লম্বা একটি বাঁধ নির্মাণের মেঘা প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, তিস্তায় প্রতিবছর কমবেশি বেশ কিছু সংখ্যক পরিবার বাস্তহারা হচ্ছে। নদী খনন, ড্রেজিং,শাসন ও সংরক্ষণ করা বড় প্রকল্পের  প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন।

গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানান, তিস্তার ভাঙন নিয়ে জাতীয় সংসদে বেশ কয়েকবার জনগুরুত্বপুর্ণ নোটিশ দিয়ে কথা বলেছি। পানি সম্পদ মন্ত্রীকে মহোদয়কে কয়েকবার ভাঙন কবলিত এলাকায় নিয়ে গিয়াছিলাম। গত বছর প্রায় ৫ কোটি টাকার জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ভাঙন কবলিত এলাকায় ফেলা হয়েছে। তিস্তা রক্ষায় সরকারের ৪শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শুরু হলে হয়তো কিছুটা ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন