বায়ুদূষণে সেরা গাজীপুর—
- দমবন্ধ ধুলাকে সঙ্গী করেই চলছে জীবন
- নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শহরবাসী
বায়ুদূষণের সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়াই করছেন রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুরের মানুষ। প্রধান সড়কগুলোয় উড়তে থাকা ধুলা রূপ নিয়েছে কুয়াশায়। মাস্ক নিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না ধুলা। নাকে-মুখে ঢুকে যাচ্ছে পথচারীদের। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশু-কিশোর আর রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে ভবনগুলো ঢেকে গেছে ধুলার আস্তরণে। দেখে মনে হয় যেন কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর। এমন এক দমবন্ধ ধুলাকে সঙ্গী করেই জীবন যাপন করতে হচ্ছে জেলাবাসীকে।
টঙ্গী থেকে গাজীপুর শহরের দিকে যতই এগোনো যায়, ততই ধুলার ঘনত্ব বাড়তে থাকে। ধুলার রাজপথে স্বচ্ছন্দে হাঁটাহাঁটির কোনো পরিবেশ নেই। পরিবেশ দূষণ রোধের বিধিমালা কিংবা পরিবেশ সংরক্ষণ নীতিমালার কোনো প্রয়োগ নেই, খোঁজও মেলেনি। এ কারণে নগরবাসী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ঝুঁকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। পরিবেশবিদরা বলছেন, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের নির্মাণকাজ, ভাঙাচোরা রাস্তা ও ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে গাজীপুরে ধুলার রাজ্যগড়ে উঠেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার মহাসড়কের ৩৩ কিলোমিটার জুড়ে ও শহরের ভেতরের বেশিরভাগ সড়কে চলছে নির্মাণকাজ। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিআরটি প্রকল্প, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সাসেক প্রকল্প এবং সিটি করপোরেশনের রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প চলমান থাকায় বায়ুদূষণ ঘটছে।
দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন হিসেবে গাজীপুরের আয়তন প্রায় ৩৩০ বর্গকিলোমিটার। এখানকার জনসংখ্যা ৩০ লাখ। শিল্পকারখানা আছে ১৮৮৬টি। দেশের সবচেয়ে হলেও এই সিটিতে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা খুবই কম। চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী, কড্ডা, নাওজোড়, কোনাবাড়ী এবং চন্দ্রায় পরিবেশ ও বায়ুদূষণের হার সবচেয়ে বেশি। শহরের প্রধান সড়কের দুই পাশের গাছের পাতায় ধুলার গভীর আস্তরণে উদ্ভিদের স্বাভাবিক শরীরি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মানদেহের জন্য ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড নিতে পারছে না এসব গাছপালা। সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য তৈরির পথও বন্ধের উপক্রম। যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে মানবদেহে। এমনটাই বলছেন পরিবেশবিদরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মাঝে মধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পানি ছিটানোর চিত্র কিছুটা দেখা গেলেও তা কার্যকরী নয়। মাত্রাতিরিক্ত ধুলাবালির কারণে পথচারী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাস্তায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে। সেই সঙ্গে পরনের পোশাক নিয়েই প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রতিদিন অন্তত এক থেকে দেড় শতাধিক মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। অথচ এক বছর আগেও এ সংখ্যা ছিল ৫০-৬০ জন।
পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুরের উপপরিচালক আবদুস সালাম সরকার বলেন, গাজীপুরে বায়ুদূষণের মূল কারণ ইটভাটা এবং সড়ক নির্মাণের চলমান কাজ। তবে ধুলাবালির দূষণ থেকে রক্ষায় পানি ছিটানোর তাগাদাসহ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সচেতন মহল বলছেন, সিটি করপোরেশনের নাগরিক সেবা অনেকটা দায়সাড়াভাবে চলছে। ধুলার রাজ্য থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে সিটি করপোরেশনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।
জনদুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব শর্তের মধ্যে থেকে নির্মাণকাজ করার কথা প্রতিষ্ঠানগুলো তা অনেক ক্ষেত্রেই মানছে না।