ঢাকা | মঙ্গলবার
৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চরম খাদ্যসংকটের শঙ্কায় বিশ্ব

চরম খাদ্যসংকটের শঙ্কায় বিশ্ব

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ–

  • কমবে রেমিট্যান্স, বাড়বে শরণার্থী
  • দেশে দেশে দেখা দেবে জ্বালানি সংকট
  • নিম্নআয়ের দেশে হতাশায় ফেলবে প্রবৃদ্ধি

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে অর্থনৈতিক তেমন প্রভাব পড়বে না বলে পশ্চিমাদের ভবিষ্যৎ বাণী মিথ্যা প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব শুরু হয়েছে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের দেশগুলোতে খাদ্যঘাটতি দেখা দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব ব্যাংক।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ন্যায়সঙ্গত প্রবৃদ্ধি, অর্থ ও প্রতিষ্ঠান) ইন্দারমিট গ্রিল এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এই সংঘাত অব্যাহত থাকলে উচ্চমূল্যসহ নিম্ন আয়ের দেশগুলো মারাত্মক খাদ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে। এমনকি কমে যাবে রেমিট্যান্সও। সংকট দেখা দেবে বৈশ্বিক জ্বালানির।

বিজ্ঞপ্তিতে ইন্দারমিট গ্রিল জানান, কিছু উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ খাদ্যের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার মুষ্টিমেয় অর্থনীতির দেশে আমদানি করা গমের ৭৫ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করে দেশ দুটি। সংঘাতের কারণে এই দেশগুলো রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে শস্য এবং বীজ উৎপাদন আমদানি করতে পারছে না। খাদ্য পরিবহনও ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য সরবরাহে ব্যাঘাতের পাশাপাশি খাদ্যের উচ্চমূল্য, ক্ষুধা ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণ হতে পারে।

জ্বালানি সংকট

রাশিয়া বিশ্বের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের বাজারেও একটি প্রধান নিয়ামক। দেশটি প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজারের এক-চতুর্থাংশ, কয়লার ১৮ শতাংশ, প্লাটিনামের ১৪ শতাংশ এবং অপরিশোধিত তেলের ১১ শতাংশ অবদান রাখে। যুদ্ধে এই পণ্যগুলো সরবরাহে বিরাট প্রভাব পড়েছে। এটি বৈশ্বিক অর্থনীতিরও ব্যাপক প্রবৃদ্ধিও কমিয়ে দেবে। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশনা থেকে অনুমান করা হয়েছে যে তেল-মূল্যের ১০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। এটা চলতে থাকলে পণ্য-আমদানিকারী উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশে প্রবৃদ্ধি হতাশাজনকভাবে কমবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতসহ নানা কারণে গত ছয় মাসে তেলের দাম ১০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। যদি এটি স্থায়ী হয় তবে চীন, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও তুরস্কের মতো তেল আমদানিকারক দেশগুলোতেও প্রবৃদ্ধি কমবে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ২ শতাংশ, তুরস্ক ২ থেকে ৩ শতাংশ এবং চীন ও ইন্দোনেশিয়া ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু সংঘাতের কারণে দেশগুলো প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবে না।

উদ্বাস্তু বাড়ছে, রেমিট্যান্সে ভাটা

সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ২০ লাখের বেশি মানুষ ইউক্রেন থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছেন। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে বৃহত্তম গণ-অভিবাসন। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারে আশঙ্কা হচ্ছে শিগগির শরণার্থীর সংখ্যা ৪০ লাখে উন্নীত হবে। বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে মেনে নেওয়া কঠিন। অর্থায়ন ও পরিষেবা সরবরাহের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

অর্থনৈতিক মন্দা পূর্ব ইউরোপের সীমা ছেড়ে অন্যান্য দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়বে। এতে রেমিট্যান্সের ওপর প্রভাব ফেলবে। উদাহরণস্বরূপ মধ্যএশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ রাশিয়া থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল- কিছু ক্ষেত্রে, এই রেমিট্যান্স দেশের জিডিপির ১০ শতাংশের মতো।

সংবাদটি শেয়ার করুন