ঢাকা | রবিবার
২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাল গুদাম থেকে গুদামে

চাল গুদাম থেকে গুদামে

নওগাঁয় সরকারি ধান-চাল ক্রয়

  • লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশ ধান সংগ্রহ

উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডারখ্যাত জেলা নওগাঁয় আমন মৌসুমে সরকারি গুদামে ধান দিতে কৃষকের কোনো আগ্রহ না থাকায় ধান সংগ্রহ ব্যাহত হয়েছে। অপরদিকে চাল সংগ্রহ হয়েছে প্রায় শতভাগ। জেলায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ শতাংশ। ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও গত মাসের ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে সংগ্রহ কার্যক্রম। খাদ্য বিভাগের দাবি, ধান সংগ্রহ কম হলেও সরকারের মূল উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। অপরদিকে শতভাগ অর্জিত চালের মান নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। মিলারদের দেওয়া চালের মান খতিয়ে দেখতে খাদ্য বিভাগের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুম গত ২৫ নভেম্বর ২০২১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। ২৭ টাকা কেজি দরে ১০ হাজার ২৪৩ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে জেলার ১১টি উপজেলায় ১৯টি গুদামে শুরু হয়েছিল ধান সংগ্রহ কার্যক্রম। এর মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলায় ৫১৬ টন, রানীনগরে ৯৬৯, আত্রাইয়ে ৩৪৮, বদলগাছীতে ৭৪৪, মহাদেবপুরে ১ হাজার ৫০১, পত্নীতলায় ১ হাজার ৪১৪, ধামইরহাটে ১ হাজার ৫৬, সাপাহারে ৫০৯, পোরশায় ৮০৮, নিয়ামতপুরে ১ হাজার ৫৫৪ এবং মান্দায় ৮২৪ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যেখানে নির্ধারিত সময়ে অর্জন হয়েছে ৯৮ টন ধান। যা লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশের ও কম।

স্থানীয় কৃষকরা জানানা, সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে তা শুকনো ও পরিষ্কার করতে হয়। এতে অনেক সময় ব্যয় হয়। আবার গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ দিতে হয়। আবার ধান দিতে গেলে অনেক সময় হয়রানি করেন গুদামের কর্মকর্তারা। বর্তমানে খোলাবাজারে ধানের দাম বেশি। পাইকাররা বাড়িতে এসে ধান মেপে কিনে নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে সাপ্তাহিক হাটেও ধান বিক্রি হয়। সরকারি গুদামে ধান সরবরাহ না করে এ পদ্ধতিতেই তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এ কারণে তারা খাদ্য গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন। বর্তমানে সার কীটনাশকের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে। তাই খাদ্য গুদামে ধানের দাম আরো বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, সরকারি গুদামে যে মানের ধান নেয়া হয়, সেই মানের ধান উৎপাদন করতে আমাদের কৃষক অভ্যস্ত নন। আবার গুদামে ধান দিলে নগদ টাকা কৃষক পান না। অন্যদিকে খুচরা বাজারে দিলে নগদ টাকা পান। তাই কৃষক সরকারি গুদামে যেতে চায় না।

অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চালকল মালিক বলেন, কিছু মিলার সরকারি গুদামের চাল অপকৌশলে কিনে নিয়ে আবারো নগদ টাকায় গুদামে সরবরাহ করছেন। অনেক ক্ষেত্রে নতুন এবং পুরনো খারাপ চাল পুনরায় শর্টার করে গুদামে দেয়া হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, খাদ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মিলারদের অবৈধভাবে এ সুযোগ করে দেন। অসাধু মিলাররা তাদের বরাদ্দের দ্বিগুণ থেকে পাঁচ গুণ চাল গুদামে সরবরাহ করেছেন বলেও তারা জানান।

এ বিষয়ে জেলা সহকারি খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মোহাজের হাসান বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমন মৌসুমের নতুন চালই আমরা সংগ্রহ করছি। কোনো পুরনো চাল সংগ্রহ করা হয় না। পুরনো চালে গন্ধ থাকে। যা হাতে নিলেই বোঝা যায়। এরপরেও যদি কোন অসাধু মিলার ১শ’ বস্তা চালের মধ্যে ১০-১৫ বস্তা পুরাতন চাল দিয়ে দেয় সে ক্ষেতে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না।

নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) আলমগীর কবির জানান, গুদামে ধান দিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে অ্যাপে রেজিস্ট্রেশনকৃত কৃষকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক এলএসডি কর্মকর্তাদের যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে মাইকিং, লিফলেটসহ নানারকম প্রচার চালানো হয়েছে। তবে খোলাবাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষক গুদামে ধান দিতে আগ্রহ দেখাননি। তাই এ মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হয়েছে। তবে সরকারের ধান সংগ্রহের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, কৃষক যেন ন্যায্যমূল্য পায়। আর কৃষক তা পেয়েছে সে কারনেই এবার সরকারের মূল উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন