ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক দশকেই বদলে যাচ্ছে চেহারা

এক দশকেই বদলে যাচ্ছে চেহারা
  • রঙ ছড়াচ্ছে রংপুর
  • শিক্ষা, সংস্কৃতি, কর্মসংস্থান, অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়া
  • অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজও প্রক্রিয়াধীন

রঙ্গরসে ভরপুর তার নাম রংপুর। জমিদারি আমল থেকেই প্রকাশ পেয়েছে রংপুরের মানুষের সৌখিনতার নানা দিক। এ নিয়ে রচিত হয়েছে এখানকার আঞ্চলিক ভাষায় কত গান-গল্প। তারপরও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় রংপুরকে পিছিয়েপড়া বলা হয়। তবে সেই দিন আবারও ফিরছে। বিভাগ ও সিটি করপোরেশন হওয়ার এক দশকেই উন্নয়নের মহাসড়কে চলতে শুরু করেছে রংপুর। শিক্ষা, সংস্কৃতি, কর্মসংস্থান, অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়ায় এখন বদলে যাচ্ছে রংপুর। ২০১০ সালে রংপুরকে বিভাগ করা হয়। এর দুই বছরের মাথায় রংপুরে সিটি করপোরেশন করা হয়।  বিভাগ, সিটি করপোরেশন, মেট্রোপলিটন পুলিশ হওয়ার পর থেকে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করে এই রঙের রংপুরে।

যানজট এবং জনজটের কথা চিন্তা করে নগরীর বাইরে পশ্চিম প্রান্তে ১০তলা বিশিষ্ট রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তর নির্মাণের পর তা উদ্বোধনও করা হয়েছে। উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ কমপ্লেক্সটিতে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজি রংপুর রেঞ্জসহ ১০টি অফিসসহ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরিচালকের কার্যালয়, উপভূমি সংস্কার কমিশনারের কার্যালয়, কর্মচারি কল্যাণ বোর্ডের কার্যালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয়, পরিবার পরিকল্পনা পরিচালকের কার্যালয়, আঞ্চলিক হিসাবরক্ষণ অফিস, যুগ্ম নিবন্ধক সমবায় ও বিএসটিআই পরিচালকের কার্যালয়।

উত্তম বেতারপাড়া এলাকায় প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে র‌্যাব-১৩ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ কাজ চলছে। উত্তম এলাকায় রংপুর বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়েছে। এটিও উদ্বোধনের অপেক্ষায়। কিছুদিন আগে নির্মিত সিভিল সার্জন অফিসের নতুন ভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, পুলিশ লাইন্স ও পুলিশ হাসপাতালের দৃষ্টিনন্দন ভবন পথচারিদের মুগ্ধ করছে। এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭ তলা বিশিষ্ট ক্যানসার হাসপাতালের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এ ভবনের দুই তলা থাকবে আন্ডার গ্রাউন্ডে।

সেকাল থেকে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার উর্বর ভূমি হিসেবে পরিচিত রংপুর। সেই সাহিত্য-সংস্কৃতিখ্যাত পল্লী রংপুর টাউনহল চত্বরে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এ ভবনের অডিটরিয়ামে ৫০০ আসন রয়েছে। এছাড়া সর্বাধুনিক সাউন্ড সিস্টেমসহ নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এখানে। অচিরেই সেটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

শিক্ষার প্রসারের জন্য রংপুরের পীরগঞ্জে হয়েছে মেরিন একাডেমি। এখানে বাণিজ্যিক জাহাজের ক্যাডেট, ডেক অফিসার এবং মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। পীরগঞ্জ উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ফলির বিল এলাকায় এ মেরিন একাডেমিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির অধিভুক্ত হয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০১২ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। ১০ একর জমির ওপর একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, প্যারেড গ্রাউন্ড, ডরমেটরি ভবন, সাতটি আবাসিক ভবন, মসজিদ, অত্যাধুনিক জিমনেশিয়াম, সুইমিং পুল, পুকুরসহ ৩৫টি অবকাঠামোতে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে এ মেরিন একাডেমিতে।

এদিকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ, বঙ্গবন্ধু নভো থিয়েটার, তিস্তা সেচ প্রকল্প একনেকে পাশ হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজগুলো বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও পাল্টে যাবে। অনেক শিল্প উদ্যোক্তা প্লট কিনে অপেক্ষা করছেন গ্যাস সংযোগের। গ্যাস সংযোগ হলে এ অঞ্চলে শিল্পবিপ্লব হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী মহল। এছাড়া তারাগঞ্জে রংপুর পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, মিঠাপুকুরে ইকোপার্ক সংস্কার, পীরগাছায় কৃত্রিম মহিষ প্রজনন কেন্দ্রসহ বেশকিছু উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়কের ছয় লেনে উন্নতিকরণ কাজ চলছে। এ প্রকেল্পর রংপুর অংশের কাজ প্রায় শেষের পথে। ছয় লেন সড়কের কাজ শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব এক উন্নয়ন হবে। উত্তরবঙ্গে শিল্প কারখানার প্রসারসহ ভারত-নেপালের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটবে। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে রংপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ।

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই সর্বপ্রথম তিস্তার ভাঙনকবলিত এলাকা রংপুরের গঙ্গাচড়া থেকে মঙ্গা নামের শব্দটি দুর করে। রংপুরের অবকাঠামো, যোগাযোগ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়াসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই উন্নয়ন হয়েছে। যার কারণে ইতিধ্যেই রংপুরের রঙ ফিরতে শুরু করেছে। রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, রংপুরের উন্নয়নের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ট আন্তরিক। বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। যেগুলো চলমান রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলে রংপুরের দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, রংপুর সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকতার সঙ্গে বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। পুরনো ১৫ ওয়ার্ডে ড্রেন ও সড়কসহ বর্ধিত আরও ১৮ ওয়ার্ডে একযোগে সড়কের উন্নয়নে কাজ চলছে। সব কাজই প্রায় শেষের দিকে। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য জেলা থেকে পিছিয়েপড়া রংপুর এক দশকেই শিক্ষা, সংস্কৃতি, কর্মসংস্থান, অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে। রঙ ছড়াতে শুরু করেছে এক সময়ের রঙে ভরা রংপুর।

সংবাদটি শেয়ার করুন