ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মরিচ্চাপে পলি অপসারণে ব্যয় ৩০ কোটি

মরিচ্চাপে পলি অপসারণে ব্যয় ৩০ কোটি
  • দুর হবে পার্শ্ববর্তী বিলগুলোর জলাবদ্ধতা

ফিংড়ি কুলিয়া আলিপুর সোবনালী ও বুধহাটা এ পাঁচটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের স্থায়ী পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা হবে এ খনন কাজের মধ্য দিয়ে। সেই সঙ্গে চিংড়ি চাষি ও কৃষকের অভূতপূর্ণ উপকার হবে : আবুল খায়ের, নির্বাহী প্রকৌশলী, সাতক্ষীরা-১, পানি উন্নয়ন বোর্ড

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী ইছামতি ও কালিন্দী নদী থেকে জন্ম হয় ঐতিহ্যবাহী মরিচ্চাপ নদীর। নদীটি সদরের ৪টি ও আশাশুনি উপজেলার ১টি ইউনিয়ন এর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে আশাশুনির খোলপেটুয়া নদীতে গিয়ে মিশেছে। দীর্ঘ বছর ধরে উজান থেকে বয়ে আনা পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীটির পার্শ্ববর্তী বিলগুলোতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে নদীর পলি অপসারণে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, মরিচ্চাপ নদীর দু’পাশের ইউনিয়নগুলো হচ্ছে, ফিংড়ী, আলিপুর, শোভনালী ও আশাশুনি উপজেলার বুধাটা ইউনিয়ন। ইউনিয়নের চর বালিথা, ফয়জুল্লাপুর, জোড়দিয়া, গোবরদাড়ী, কুলটিয়া, কুলিয়া ইউনিয়নের বহেরা, বালিয়াডাঙ্গা, খাসখামার, দত্তডাঙ্গা, কামারপাড়া, কুলতলী, সুবর্ণ বাদ, নুনেখোলা, রঘুনাথপুর, রামনগর, টিকেট হিজলডাঙ্গা, গোবিন্দপুর, পারগাভা, শশাডাঙ্গা, গোবরদাড়ী, আন্দোলপোতা, শিমুলিয়া ও দেও মারি। এ সকল গ্রামের অতিগুরুত্বপূর্ণ বিল হচ্ছে টিকেট বিল। এ এলাকার মানুষের প্রধান জীবিকা মৎস্যচাষ এবং কৃষি। অল্প কিছু মানুষ চাকুরি করে। সাদাসোনা বলে খ্যাত চিংড়ির অধিকাংশ এ এলাকা থেকে উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলবর্তী সাতক্ষীরা জেলার দক্ষিণে আশাশুনি উপজেলা। পার্শ্ববর্তী বুধহাটা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নটি একটি জনবহুল ও ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়ন। বুধহাটার সর্বদক্ষিণে প্রবাহিত নদী মরিচ্চাপ নদীটি মানুষের রুটি-রুজির জন্য ভূমিকা রাখে।

মরিচ্চাপ নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রতি বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে বয়ে আনা পলি নদীর পানি নদীর দুকুল ছাপিয়ে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার চিংড়ি ও ফসল নষ্ট করে দেয়। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী বিলগুলোতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা সদরের ভোমরা কুলিয়া ফিংড়ী শোভনালী ও আশাশুনির বোধহাটা ইউনিয়ন সমূহের উপর দিয়ে বয়ে চলা নদীটি খনন করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।

 যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি দরপত্র আহ্বান করেন। সাতক্ষীরার ঐতিহ্যপূর্ণ ও অতীব গুরুত্বপূর্ণ নদী খননের দরপত্রটি ৩০ কোটি টাকা মূল্যে গোলাম রব্বানী কনস্ট্রাকশন লিমিটেড রামপুরা ঢাকা দায়িত্ব পায়। ২ ডিসেম্বর ২০২১ সালে কাজটি শুরু হয়ে চলবে নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত। এরই মধ্যে কাজটি সমাপ্ত করার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা-১ এর বাবু দিপংকর কুমার দাস (এস.ডি.ই) জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ সমাপ্ত করার সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও তারা বর্ষা মৌসুমের আগেই কাজটি সমাপ্ত করতে চায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, মরিচ্চাপ নদীর উৎসমুখ ইছামতি কালিন্দী নদী। সদরের বাকাল ব্রিজ থেকে খননকাজ শুরু হয়ে আশাশুনির নৈকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত মোট কুড়ি কিলোমিটার খনন কাজ চলমান থাকবে। খননকৃত নদীটির দু’ধারে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে যার উচ্চতা হবে ২ মিটার, নদী খননের শুরু থেকে ক্রমশ চওড়া হয়ে ৬৪ থেকে ১৩৭ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। গভীরতা হবে নদীর সমতল থেকে ১০থেকে ১২ ফুট। তিনি আরো বলেন, ফিংড়ি কুলিয়া আলিপুর সোবনালী ও বুধহাটা এ পাঁচটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের স্থায়ী পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হবে এ খনন কাজের মধ্য দিয়ে। সেই সঙ্গে চিংড়ি চাষি ও কৃষকের অভূতপূর্ণ উপকার হবে।

মরিচ্চাপ নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৭ কিমি.। এর মধ্যে ২০ কিলোমিটার খননে পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা-১ তদারকি করলেও বাকি ১৭ কিমি. খনন কাজের তদারকি দায়িত্বে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা-২।

সংবাদটি শেয়ার করুন