ঢাকা | শুক্রবার
১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ময়লার ভাগাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি

যত্রতত্র পড়ে আছে মেডিকেল বর্জ্য

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল। চারপাশে ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। এখান থেকে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে জানালার পাশে বেডে থাকা রোগীরা বাইরে থেকে আসা দুর্গন্ধে অস্বস্তিতে থাকেন। সবার জন্যই এ পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ

হাসপতারে বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট স্থান আছে। এরপরও অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে : ডা. মো. রেজাউল করিম, পরিচালক, রমেক

রংপুর অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ অঞ্চলের রোগাক্রান্ত মানুষেরা এখানে চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে থাকার  স্বপ্ন দেখে। তবে বর্তমানে হাসপাতালের চারপাশে এমনকি বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনে গড়ে উঠা ময়লার ভাগাড় রোগীকে সুস্থ তো দুরে থাক আরো অসুস্থ করে দিচ্ছে। কাটাছেড়া আর মানুষের রক্ত মাংসের এসব ময়লার দুর্গন্ধে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হচ্ছেন। এমন অভিযোগ রংপুরের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সচেতন মানুষের। এখানেই শেষ নয়, হাসপতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের টয়লেটের অবস্থা আরও ভয়াবহ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে সেখান থেকেও ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ। নিয়মিত বাথরুম, টয়লেট পরিষ্কারের কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। একাধিক রোগী ও তার স্বজনরা অভিযোগ করেন, সপ্তাহে একদিন পরিষ্কার করা হয়। কেন এমনটি হচ্ছে এর কোনো সদুত্তর মেলেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। তবে রমেক পরিচালক ডা. মো. রেজাউল করিম আনন্দবাজারকে বলেছেন, তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিবেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল চত্বরসহ আশপাশে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে খাবারের উচ্ছিষ্টসহ নানা আবর্জনা। দীর্ঘ দিন ফেলে রাখা এসব আবর্জনা যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। সবখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা আবর্জনা আর নোংরা পরিবেশে হাসপাতাল যেন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন তারা ময়লার সরানোর কথা বলে হাসপাতালের কর্মচারিদের হাতে লাঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করায় হাসপাতালটি এক দিকে যেন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে অন্যদিকে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছে এ অঞ্চলের কোটি মানুষ।

এ হাসপাতালে প্রতিদিন অন্তত দেড় হাজার রোগী থাকেন। চিকিৎসক, নার্স, রোগীসহ হাসপাতালের যাবতীয় ময়লা আবর্জনা ও মেডিকেল বর্জ্য জমা হয় এখানে।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড, নতুন ভবনের সামনে, সাইকেল গ্যারেজের বিপরীতে, পূর্ব গেটের প্রবেশমুখসহ হাসপাতাল চত্বরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকাসহ সচেতনতার অভাবে সেখানে প্রতিনিয়ত খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলছেন রোগীর স্বজনরা। আর হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও ফেলছেন মেডিকেল বর্জ্যসহ নানা আবর্জনা।

এমন অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, দুর্গন্ধের কারণে হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশে  চলাফেরা কঠিন হয়ে পড়েছে। সুস্থ হতে এসে অনেকেই হাসপাতালের বাইরের নোংরা পরিবেশে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। দীর্ঘ দিনেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

স্থানীয় মামুন বলেন, এখানকার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। সবদিকেই দেখবেন শুধু ময়লা আবর্জনার স্তূপ। দীর্ঘদিন ধরে এসব আবর্জনা ও মেডিকেল বর্জ্য নিয়ম মেনে অপসারণ করা হচ্ছে না। এ কারণে কোনো আবর্জনার স্তূপ পঁচে সেখান থেকে তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।

নতুন ভবনের কাছে কথা হয় সালেহা খাতুন নামে এক নারীর সঙ্গে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক নিকট আত্মীয়কে দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, ভেতরের অবস্থা তেমন ভালো না। তবে মোটামুটি আগের চেয়ে গন্ধ কম। কিন্তু হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল। চারপাশে ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। এখান থেকে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে জানালার পাশে বেডে থাকা রোগীরা বাইরে থেকে আসা দুর্গন্ধে অস্বস্তিতে থাকেন। সবার জন্যই এ পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

যত্রতত্র আবর্জনা দেখে ক্ষুব্ধ বৃদ্ধ আহাদ আলী। তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, হাসপাতাল তো পরিষ্কার থাকবে, তবে এখানকার চিত্র আলাদা। ভেতরে টয়লেটের অবস্থা খারাপ। বাইরে বের হলে ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ। রাস্তায় একটু পর পর ডাস্টবিনের ব্যবস্থা থাকলেও হাসপাতালের ভেতর ময়লা ফেলার কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা আর মেডিকেল বর্জ্য পড়ে আছে।

সাধারণ মানুষ আর রোগীদের মতো হাসপাতালের চিকিৎসক, শিক্ষার্থীদেরও একই অভিযোগ। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার চুল্লি নেই। হাসপাতালের বর্জ্য সিটি কর্পোরেশনের গাড়িতে করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। ভুক্তভোগীরা স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, হাসপাতাল থেকে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি দুঃখজনক। তবে আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতার কারণে এটা বহু বছর ধরে হয়ে আসছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস্থা এ দিক থেকে বেশি নাজুক। নির্দিষ্ট একটি জায়গায় যদি মেডিকেল বর্জ্যসহ ময়লা-আবর্জনাগুলো ফেলার ব্যবস্থা করা হতো, আমরা এ স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচতে পারতাম। সবার সুস্থতার কথা চিন্তা করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চারপাশ দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রেজাউল করিমের দাবি, বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট স্থান আছে। এরপরও অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, পুরো হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের দায়িত্বে ঠিকাদার রয়েছে। হাসপাতালের ওয়ার্ড সার্বক্ষণিক পরিষ্কার থাকবে। বাইরে কোথাও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থাকার কথা নয়। তারপরও যদি নির্দিষ্ট স্থানে ছাড়া কোথাও বর্জ্য পড়ে থাকে, তা মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কর্তৃপক্ষের এমন দায়সারা বক্তব্যে ক্ষুদ্ধ হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা। তারা জানান, প্রতিটি বিভাগে লোকবল রয়েছে। শুধুমাত্র সঠিক নির্দেশনা ও মনিটরিংয়ের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ  হয়ে পড়ছে হাসপাতালটি।

সংবাদটি শেয়ার করুন