মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কারও কাম্য নয়

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনো রাষ্ট্রের জন্যই কাম্য হতে পারে না। বিদেশি রাষ্ট্রের দেয়া স্যাংশন নয়, বরং দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত হলেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বন্ধ করা সম্ভব।

গতকাল বুধবার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত “বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড : বেহাল গণতন্ত্র, প্রশ্নবিদ্ধ আইনের শাসন” শীর্ষক ওয়েবিনারে আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সিজিএসের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, গণঅধিকার পরিষদ- এর আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ)র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)র নির্বাহী কমিটির মহাসচিব মো. নূর খান।

শাজাহান খান এমপি বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কারও কাম্য নয়, তারপরও ঘটনাগুলো ঘটছে। যা নিন্দনীয়, অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, আমেরিকার মতো গণতান্ত্রিক দেশেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এভাবে পৃথিবীর অনেক দেশেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, যা কখনই সমর্থনযোগ্য নয়।

শাজাহান খান বলেন, জনগণের শান্তির জন্য সন্ত্রাসীদের দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য প্রয়োজন হয়। কারণ, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ সাক্ষী দিতে চায় না, ফলে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। তবে হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক নাকি অরাজনৈতিক সেটা বিবেচনায় আনতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুনঃ  নিউইয়র্কে পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা খুন

জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার দায়ভার রাজনীতিবিদদেরই নিতে হবে, বিশেষত যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন। রাজনীতির মধ্যে যে সমস্যা রয়েছে তা রাজনীতির মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে।

জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের জন্ম গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষা নিয়ে। নানাবিধ কারণে দেশে গণতন্ত্র বিকশিত হচ্ছে না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে বিচারিক প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড। সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক অপরাধীর আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার আছে।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই তিন বছরে ৫৯২ জন ব্যক্তি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজার জেলায়।

মো. নূর খান বলেন, গত তিন বছরে ৫৯০ টির মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মেজর সিনহার হত্যার বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিনহার পরিবার সঠিক বিচার পেয়েছে কারণ, এতে মেজর সিনহার পেশাগত সহকর্মীদের প্রতিক্রিয়া ছিল। প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দেশের প্রচলিত আইনে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এম শফিউল্লাহ বলেন, মানবাধিকার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি একদিনে গড়ে ওঠেনি। এর জন্য প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই দায়ী। বিএনপি অপারেশন ক্লিনহার্ট দিয়ে যেটা শুরু করেছিল, আওয়ামী লীগ সেটার সমালোচনা করলেও ক্ষমতায় আসার পর এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

আনন্দবাজার/ টি এস পি

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন