সরকার রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের আরও বেশি সুবিধা দিতে নতুন বিমা প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনা করছে। আগামী ডিসেম্বর বিদ্যমান বিমা পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তারা এই সুবিধার আওতায় আসবেন। নতুন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা করপোরেশন। প্রকল্পের আওতায় থাকা একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিমা অঙ্ক পাবেন। আগে যা ছিল ৪ লাখ টাকা।
শুধু তাই নয়, বিমার মেয়াদও বিদ্যমান দুই বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর পর্যন্ত করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিমার আওতায় থাকা রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের মৃত্যু, আহত কিংবা অঙ্গহানি হলে তারা বিমা সহায়তা পাবেন। একই সঙ্গে কমানো হবে প্রিমিয়ামও। বিদ্যমান এককালীন প্রিমিয়াম ৪৯০ টাকা থেকে কমিয়ে নতুন পরিকল্পনায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করা হবে।
প্রবাসী কর্মীদের প্রদত্ত বিমা সুবিধা নিয়ে পর্যালোচনায় গত ১২ এপ্রিল আয়োজিত এক সভার পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ জুলাই নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে জীবন বীমা কর্পোরেশন। সেই সভায় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল), প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিগত ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশগামী বাংলাদেশিদের বিমা সুবিধায় আনার নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনার তিনবছর পর ২০১৯ সালে প্রবাসীকর্মীদের জন্য বিমা স্কিমের উদ্বোধন করেন।
তথ্যমতে, প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রায় ৬ লাখ কর্মী বিদেশে যান। সেই ২০১৯ সালে বিমা স্কিম চালু হওয়ার পর থেকে প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে ৪৯০ টাকা প্রিমিয়াম পাচ্ছে জীবন বীমা কর্পোরেশন। মূলত, প্রবাসী কর্মীদের বড় অংশই বয়সে তরুণ। সে কারণে বিমা দাবির পরিমাণ খুবই কম থাকায় প্রবাসী কর্মী বিমা পরিকল্পনা থেকে প্রতিবছর বড় অঙ্কের মুনাফা করছে জীবন বীমা কর্পোরেশন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এক পরিসংখ্যানে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, এই সময়ে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ কর্মীর প্রিমিয়াম হিসাবে কর্পোরেশন পেয়েছে ৫৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। যার বিপরীতে মাত্র ১০৩ প্রবাসী কর্মীর ২ কোটি ৭২ লাখ টাকা বিমা দাবি পরিশোধ করতে হয়েছে। বাকি প্রায় ৫০ কোটি টাকাই জীবন বিমার মুনাফা।
জীবন বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেছেন, প্রবাসীরা এখন দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের ভালো সুবিধা দিতেই নতুন বিমা পরিকল্পনা করা হয়েছে।
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (আরএমএমআরইউ) ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেছেন, সরকার প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণের কথা বিবেচনা করেই তাদের বিমার প্রিমিয়াম কমানোসহ মেয়াদ ও বিমার অঙ্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তবে প্রবাসী কর্মীরা যাতে এর সুফল পান, সেজন্য এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমা সুবিধা পাওয়ার প্রক্রিয়া বা বিমা দাবি করার প্রক্রিয়া অনেক সহজ করতে হবে, যাতে প্রবাসী কর্মী বা তার পরিবার খুব সহজে হয়রানিমুক্তভাবে বিমা সুবিধা পেতে পারে। প্রবাসী কর্মী যখন প্রিমিয়াম পরিশোধ করেন, তখন এই বীমার ওপর তার অধিকার জন্মায়। তাই ন্যূনতম প্রিমিয়াম নেওয়া যৌক্তিক।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসী কর্মীরা কী কী সমস্যার মোকাবিলা করছেন, সেগুলো চিহ্নিত করতে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রবাসীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকিং খাতের একটি প্রতিনিধি দল বিদেশের প্রধান কর্মবাজারগুলোত সফর করবে।
এছাড়া প্রবাসীরা দেশে আসা ও বিদেশে থাকার সময় সেবা, আইনগত সহায়তা দেওয়া, দেশে এলে ঋণের ব্যবস্থা করা, যাওয়ার সময় ঋণ সেবা চলমান রয়েছে। এই বিষয়গুলো কীভাবে আরও কার্যকর করা যায়, সেটা নিয়েও কাজ করা হচ্ছে।