চারিদিকে শুরু হয়ে গেছে শীতের আমেজ। শীতকালেই শরীরের নানা ব্যথা বেড়ে যায়। শরীরের পিঠ, কাঁধ, হাঁটু, মাথাসহ গাঁটের ব্যথা হলে অনেকে প্যারাসিটামল বা এ জাতীয় ওষুধ সেবন করে থাকেন যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তাপমাত্রা কমলে জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির রক্তনালীগুলো অনেক সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। সেই সাথে রক্তের তাপমাত্রাও কমে যায়। যার ফলে জয়েন্টগুলো শক্ত হয়ে ফুলে ওঠে। আর তখনই ব্যথা বেড়ে যায়। এছাড়াও ঠান্ডার সময় গায়ে অনেক গরম পোশাক চাপানো থাকায় কারণে শরীরে রক্ত সঞ্চালনের বেগ কম থাকে। এতে ত্বকে বেশি ব্যথা অনুভূত হয়।
মেথি ভেজানো পানি খান- শরীরের যে কোনও ব্যথার উপশম হয় মেথিতে। আগের রাতে এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে ভালো করে ছেঁকে নিয়ে সেই পানি খেলে ব্যথা কমে যাবে।
লবণ পানি দিয়ে সেঁক নিন- এককাপ পানিতে অল্প পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম সালফেট মিশিয়ে গরম করে নিন। এরপর ওই পানিতে কাপড় ডুবিয়ে সেঁক দিতে থাকুন। সপ্তাহে ৩/৪ করলে ভালো উপকার পাবেন।
হলুদ- এক গ্লাস পানি নিয়ে ওই পানিতে হলুদ আর আদা ফুটিয়ে নিন। পানি ফুটে আধ কাপ হলে নামিয়ে নিন। এবার ছেঁকে নিয়ে মধু মিশিয়ে দিনে ২ বার খেলেই কমবে ব্যথা। তবে সাকা শীত খেতে পারলে সুস্থ থাকবেন।
এক কোয়া রসুন- রসুনের মধ্যে রয়েছে ব্যথানাশক উপাদান সালফার। এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে পেশী ও গাঁটের ব্যথা ও ফোলা ভাব কমাতে অনেক উপকারী। এজন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১ কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়া ভালো। এছাড়া আক্রান্ত জায়গায় রসুন-তেল গরম করে নিয়মিত মালিশ করতে পারেন।
ঠান্ডা- গরম সেঁক- হট ওয়াটার ব্যাগ থাকলে ভালো। না থাকলে একবার ঠান্ডা পানিতে, একবার গরম পানিতে পা ডোবান। এরকম ১৫ মিনিট করুন। হট ওয়াটার ব্যাগ থাকলে ৩০ মিনিট সেঁক দিন। এইভাবে সেঁক দিলে গাঁটের ব্যথার সমস্যা কমবে।
কফি পান- এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, কফি পানে ব্যায়ামজনিত ব্যথা দূর হয়। নিয়মিত ২০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন পান করলে মাথাব্যথা, মাইগ্রেইনের ব্যথা অনেক কমে, তবে সেটা অল্প সময়ের জন্যে নয়।
গাজরের জুস- গাজরের থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুবই কার্যকরী। তাই গাজরের জুস বানিয়ে ওর মধ্যে পাতিলেবুর রস দিয়ে খান। খালি পেটে প্রতিদিন সকালে খেলে উপকার পাবেন।
তিলের বীজ- তিল বীজও ব্যথা সারাতে ভালো কাজ করে। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, যা মাথা ব্যথা ও মাংস পেশীর ব্যথা অনায়াসে দূর করতে সহায়তা করে।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ও আদা- অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের সাথে আদার রস মিশিয়ে খান। প্রয়োজনে সামান্য মধু যোগ করতে পারেন। সারা বছর খেলে ব্যথা কমবেই। অ্যাপেল সিডার ভিনিগার কিন্তু হালকা গরম পানিই খেতে হয়।
মরিচের গুঁড়া ও নারিকেল তেলের মিশ্রণ- চিকিৎসকদের মতে, গাঁটের ব্যথা কমাতে ক্যাপসাইসিন খুবই কার্যকরী। লাল মরিচে মিলবে এই ক্যাপসাইসিন। আধ-কাপ নারকেল তেলে দু’চামচ মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে ব্যথার স্থানে ২০ মিনিট ধরে মালিশ করার পর হালকা গরম স্থানটা ভাল করে পরিষ্কার করে ফেলুন। দিনে অন্তত ৩/৪ বার এই ভাবে মালিশ করলে গাঁটের ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।
পুদিনা পাতার রস- পুদিনা পাতায় মেনথল নামে একটি উপাদান আছে, যা ধনুষ্টংকার রোগ প্রতিরোধ করতে খুবই কার্যকরী। এছাড়া, এর তেল পায়ের কজ্বি ও গোড়ালীতে মালিশে ব্যথা উপশম হয়। এমনকি মাথা ব্যথায় পুদিনা পাতা কপালে ঘষলেও ব্যথা অনেকটা কমে যায়।
আনন্দবাজার/এইচ এস কে