বুধবার, ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এক কিংবদন্তী চট্টলকন্যা কল্পনা দত্ত

বিপ্লবী কল্পনা দত্ত ১৯১৩ সালের ২৭ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের তাঁতঘর এলাকার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কল্পনা কলকাতার বেথুন কলেজে যোগদান করেন। ১২ বছর বয়সে ক্ষুদিরাম ও কানাইলাল দত্তের বিপ্লবী কীর্তি-কাহিনী স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানে তাকে আগ্রহী করে তোলে এবং তিনি ‘ছাত্রী সংঘ’-এ যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে পূর্ণেন্দু দস্তিদার তাকে মাস্টারদা সূর্যসেন পরিচালিত বিপ্লবী গোষ্ঠীতে যোগদানে আগ্রহী করে তোলেন।

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’ ঘটনার পর কল্পনা চট্টগ্রামে ফিরে আসেন এবং ১৯৩১ সালের মে মাসে সূর্যসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ইতিমধ্যে অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনন্ত সিংহ, গণেশ গোষ ও লোকনাথ বল সহ অনেক নেতা গ্রেফতার হয়ে বিচারাধীন ছিলেন। কলকাতা থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক দ্রব্যসমূহ কৌশলে বহন করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় কল্পনা দত্তকে। তিনি গোপনে উগ্র বিস্ফোরক ‘গান- কটন’ প্রস্তুত করেন এবং বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচারাধীন বিপ্লবীদের মুক্ত করার জন্য চট্টগ্রাম আদালত ভবনে এবং কারাগারে ডিনামাইট ফিউজ পেতে তা উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। কল্পনা দত্তের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায় এবং তার গতিবিধির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এসব বিধিনিষেধ সত্ত্বেও কল্পনা প্রায়ই সূর্যসেনের গ্রামে, এমনকি গভীর রাতেও যাতায়াত করতেন। এ সময় তিনি তার কমরেড প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের সঙ্গে নিয়মিত পিস্তল চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

১৯৩১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সূর্যসেন কল্পনা ও প্রীতিলতাকে চট্টগ্রামের ‘ইউরোপিয়ান ক্লাব’ আক্রমণ করার দায়িত্ব দেন। আক্রমণের মাত্র এক সপ্তাহ আগে বালকের ছদ্মবেশে আক্রমণস্থল জরিপ করতে গিয়ে তিনি গ্রেফতার হন। জেলে থাকাকালীন তিনি পাহাড়তলীর বিপ্লবী ঘটনা ও প্রীতিলতার বীরোচিত আত্মহত্যার ঘটনা জানতে পারেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সূর্যসেনের নির্দেশে তিনি আত্মগোপন করেন।

আরও পড়ুনঃ  শীতে শরীরের ব্যথা ভালো করতে যা করবেন

১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে পুলিশ তাদের গোপন আস্তানা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং সূর্যসেন গ্রেফতার হন, কিন্তু কল্পনা ও অপর নেতা মহেন্দ্র দত্ত পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ১৯৩৩ সালের ১৯ মে কল্পনা তার দলের অন্য কয়েকজন সহকর্মীসহ ধরা পড়েন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলার দ্বিতীয় বিচারপর্বে সূর্যসেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে ফাঁসি এবং কল্পনাকে যাবজ্জীবন কারাবাসের রায় প্রদান করা হয়।

১৯৩৯ সালে কারামুক্ত হওয়ার পর ১৯৪০ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি আবার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন সিপিআই কর্মী হিসেবে। ১৯৪৩ সালে তিনি সিপিআই নেতা পিসি জোসীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। চট্টগ্রামে ফিরে তিনি দলের কৃষক ও নারী ফ্রন্ট গঠন করেন। ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম থেকে বিধান সভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি পরাজিত হন। ১৯৪৭ সালের পর তিনি ভারতে চলে যান এবং সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। ১৯৯৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কল্পনা দত্ত দিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আনন্দবাজার/শাহী

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন