ঢাকা | মঙ্গলবার
১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে সবজি

নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে সবজি

সবজির মৌসুমেও সবজির বাজার চড়া। এবারের শীত মৌসুমজুড়ে সারাদেশের বাজারগুলোতে সবজির দাম বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। শীত বিদায় নেয়ার সময় হলেও দাম কমার নাম নেই সবজি বাজারে। এ নিয়ে মানুষের মাঝে অসন্তোষের শেষ নেই। তবে মুরগির দাম রয়েছে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। ফলে সাধারণ মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের এ উপাদান নিয়ে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে ভোক্তাদের মাঝে।

গতকাল বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের প্রধান পাইকারী বাজার পার্কবাজার ঘুরে বাজার দরের এমন চিত্র পাওয়া গেছে। তবে পাইকারী বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারের সবজির বিক্রয় মূল্যে বড় পার্থক্য দেখা গেছে। এতে উৎপাদনকারী ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের চেয়েও বড় অংকের লাভ গুনছেন খুচরা বিক্রেতারা। ফলে ভোক্তাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে সবজির বাজার।

সরেজমিনে টাঙ্গাইলের একমাত্র পাইকারী বাজার ‘পার্কবাজার’, শহরের ছয়আনী বাজার, সিটি বাজার, তাঁতপল্লী হিসেবে খ্যাত পাথরাইল বাজার, বৈল্লা বাজার, বাসাইল বাজার, মহেশখালীসহ জেলার মফস্বল এলাকার খুচরা বাজারের তথ্যে মিশ্র খবর পাওয়া গেছে। এখানে নিরামিষ সবজির দাম বাড়লেও স্বস্তির মধ্যে আছে মুরগির বাজার। তবে লাগামহীনভাবেভাবে বাড়ছে খাসি ও গরুর মাংসের দর। শীতের শেষ মৌসুমে শিমের বাজার থাকার কথা প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকা। অথচ বর্তমানে শিমের পাইকারী মূল্য প্রতি কেজি ৩৬ টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৬০ টাকা। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে পাইকারী ৩২ টাকা কেজি। খুচরা বিক্রি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বর্তমানে কাঁচামরিচের দাম থাকার কথা ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি।

বেগুনের দাম থাকার কথা ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি। অথচ বেগুনের পাইকারী দাম প্রতি কেজি ৪০ টাকা। খুচরা বিক্রি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বড় আকারের বাঁধাকপির দাম থাকার কথা ১৫ থেকে ২০ টাকা। পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। প্রতিটি ফুলকপির দাম হওয়ার কথা ১০ থেকে ১৫ টাকা। যা এবার পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৩৫টাকা। খুচরা বিক্রি ৪০ থেকে ৫৫ টাকা। করলার কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি কুমড়ার দাম থাকার কথা ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি। অথচ পাইকারী বিক্রি ২০ টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫টাকা। শসা ও চিচিঙ্গার দাম আরও চড়া। চিচিঙ্গার পাইকারী দাম কেজি প্রতি ৫০টাকা। খুচরা মূল্য ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

শসার পাইকারী মূল্য ৬০ টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। লেবুর পাইকারী মূল্য কেজি প্রতি ৩৬ টাকা। খুচরা বিক্রি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, এই সময়ে মুলার দাম থাকার কথা ১০টাকা কেজি বা হালি। অথচ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, লাউয়ের বাজার আরও চড়া। আকারভেদে প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৩০ টাকা। গোল আলু জাত বেধে প্রতি কেজি পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৮/১০ টাকা। যা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৫/৩০টাকা। শীতকালীন সবজির আমদানি বাড়লেও দামে কোনো প্রকার প্রভাব পড়ছে না এসব সবজির।

তবে দামে স্বস্তির মধ্যে রয়েছে আদা, রসুন, টমেটো ও পেঁয়াজ। রসুনের পাইকারী মূল্য কেজি প্রতি ২২ টাকা, খুচরা ৫০ টাকা, পেয়াজ ২৬ টাকা, খুচরা ৪০ টাকা, আদা ৩০ টাকা কেজি, খুচরা ৫০ থেকে ৬০ টাকা। টমেটোর পাইকারী মূল্য প্রতি কেজি ২০ টাকা, খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ব্রকলির দামও স্বস্তিতে। কেজি প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। ধনিয়া পাতার দাম কমেছে সর্বোচ্চ। পাইকারী বিক্রি হচ্ছে প্রতি ৬ টাকা কেজি। তবে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫টাকা আটি। যা প্রতি কেজির খুচরা বিক্রয় মূল্য দাড়ায় ৫০টাকা।

সবজি ব্যবসায়ী ছানোয়ার মোল্লা আনন্দবাজারকে বলেন, বেশি দামে পাইকারি বাজার থেকে আমাদের সবজি কিনে আনতে হয়। তাই কিছু লাভ করে বিক্রি করতে হয়। বেশি দামে কেনায় বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। চলতি মৌসুমে সবজির দাম না কমার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সঠিক কোন তথ্য দিতে পারেনি ।

সবজির দাম অস্বস্তিতে থাকলেও আমিষ এসেছে স্বস্তিতে। বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা যা কদিন আগেও ছিল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি। যা কদিন আগেও ছিল ৩০০ টাকা কেজি। দেশী মুরগির দাম বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি। যা কদিন আগে ছিল ৪৫০ টাকা কেজি। তবে বেড়েছে গরু ও খাসির মাংসের মূল্য। গরুর মাংস ৫২০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৮০ টাকা কেজি। তবে শিগগিরই প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় গরুর মাংস হবে বলে মনে করেন মাংস ব্যবসায়ী মো. আছলাম মিয়। তিনি বললেন, করোনাকালে অনুষ্ঠান কম হওয়ায় এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের চাপ বেড়ে গেছে। ফলে গরুর মাংসের দামও বেড়েছে। এছাড়া গরুর দাম বাড়ার কারণেও মাংসের দাম বেড়েছে। খাসির মাংস বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা কেজি। যা আগে ছিল ৮শ থেকে সাড়ে আটশ’ টাকা কেজি।

এদিকে মাছের দামও অনেকটাই বেড়েছে। ৯৫ টাকা কেজির পাঙ্গাস পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ১২০/৩০ টাকা কেজি। যা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি। ফিডের দাম বাড়ায় মাছের দাম বেড়েছে বলে জানালেন মাছ ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন। ৩০০ গ্রাম ইলিশের কেজি পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা কেজি। যার খুচরা বিক্রয় মূল্য প্রতি কেজি ৬০০ টাকা। অন্যান্য মাছের দামও সমহারে বেড়েছে।

এসব বাজারে লেয়ার মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা। সোনালি (কক) মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। এছাড়া বাজারে ভোজ্যতেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা। বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায় । খোলা আটা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। দেশি ডালের কেজি ১৩০ টাকা। মোটা ডাউল ৫৫/৬০ টাকা থেকে বেড়ে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০টাকা। তবে চাউল-২৯ বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি।

পাইকারী বিক্রেতারা জানান, মোকাম থেকে বেশি দামে সবজি কেনার কারণে বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। কিন্তু উৎপাদন এলাকার সাথে পাইকারী বাজারেরও বড় তফাৎ এমন অভিযোগও রয়েছে। এদিকে খুচরা বিক্রেতারা জানান, সবজি একটা কাঁচামাল। বিক্রি করার সময় অনেক সবজি নষ্ট হয়। খুচরা বিক্রি করতে গিয়ে সবজির ঘাটতি হয়। ফলে পাইকারারী বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে একটু বেশি মূল্যে বিক্রি করতে হয়।

তবে সাধারাণ ক্রেতাদের দাবি, বৃষ্টি, শীত বা কোন দুর্যোগ এলেই পণ্যেও দাম বাড়িয়ে দেয় একটি সিন্ডিকেট। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে ক্রেতাদের জিম্মি হয়ে পড়ে। এদিকে উৎপাদনের পর থেকে খুচরা বিক্রি পর্যন্ত হাতবদল হতে প্রতিটি ধাপে-ধাপে সিন্ডিকেটের কারণে সবজির দাম চড়া হয়। এতে প্রান্তিক কৃষকেরা লোকসানের মুখে পড়ে। ভোক্তাদেও অধিক মাশুল দিতে হয়।

কৃষিবিদ শাকিল আহম্মেদ শুভ জানান, মাঘের বৃষ্টি মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষি উৎপাদনের ব্যাঘাত ঘটবে। এছাড়া সবজির চরম ক্ষতি হচ্ছে। মরিচ, টমেটো, আলুসহ বিভিন্ন সবজির গাছ পচে যাচ্ছে। সবজি গাছে ব্যাকটরিয়া-ভাইরাসে আক্রমণ করে। কিছু সবজি গাছ মারা যাচ্ছে। কিছু সবজির উৎপাদন কমে যাচ্ছে। উৎপাদন কমে গেলে বৃষ্টির পর সবজির বাজার আরও চড়া হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন