সিলেটের বাজার এখন শীতের টাটকা সবজিতে ভরপুর। ক্ষেত থেকে বাজার-সবখানেই সবজি। তবে বাজারে সবজির এত আধিক্য থাকলেও সিলেটে ভরা মৌসুমে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে শীতকালীন সব সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে শীতকালীন সবজির দামের এই চিত্র দেখা গেছে।
সিলেট নগরীর সবজির একমাত্র বড় আড়ৎ সোবহানীঘাট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, শসা, গাজর, পালংশাক, লালশাক, পুঁইশাক, টমেটো, কাঁচা মরিচ ও আলুসহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজির সমারোহ। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম সবজির হাট। কৃষকের এক হাত ঘুরে সবজি চলে যাচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে।
কৃষক ও পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোবহানীঘাটে শীতকালীন গোয়ালগাদ্দা শিম প্রতি কেজি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, খুচরো দাম ৩৫ টাকা। বিচিসহ শিম ৩২ টাকা, খুচরো ৫০ টাকা। সুনামগঞ্জী শিম (সাদা) ২০ টাকা, খুচরো ৪০ টাকা। কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা, খুচরো ৬০ টাকা। গাজর ২০ টাকা, খুচরো ৩৫। করলা ৫০ টাকা, খুচরো ৭০ টাকা। বাঁধাকপি (মাঝারি প্রতি পিস) ৩০ টাকা, খুচরো ২৫ টাকা। ফুলকপি (মাঝারি প্রতি পিস) ২৫ টাকা, খুচরো ৩০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, খুচরো ৩০ টাকা, নতুন আলু ১৬ টাকা, খুচরো ২০ টাকা। বেগুন ২৫ টাকা, খুচরো ৫০ টাকা, টমেটো ২০ টাকা, খুচরো ২৫ টাকা। শসা ৬০ টাকা, খুচরো ৭০ টাকা। শালগম ২০ টাকা, খুচরো ৪০ টাকা। শিমের বিচি ১০০-১১০ টাকা, খুচরো ১৩০ টাকা।
বাজারে ফরাসের বিচি বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৩৫ টাকা, খুচরো ৬০ টাকা। মাঝারি সাইজের লেবুর হালি ২০ টাকা, খুচরো ৩০ টাকা। লাল শাকের আটি ৫ টাকা, খুচরো ৮-১০ টাকা। পেঁপে ২০ টাকা, খুচরো ৩০ টাকা। পেঁয়াজের ফুল ২৫ টাকা, খুচরো ৩০ টাকা। লোভিয়া ৪০ টাকা, খুচরো ৫০। পুরোল বা তরি ৪০ টাকা, খুচরো ৫০ টাকা। মটরশুটি ৯০ টাকা, খুচরো ১০০ টাকা, কাঁচ কলা ২০ টাকা, খুচরো ৩০ টাকা হালি। মিষ্টি লাউ প্রতি (মাঝারি) পিস ৫০ টাকা, খুচরো ৬০ টাকা। নাগা মরিচের (বড়) হালি ২০ টাকা, খুচরো ৩০ টাকা ও মুকি ৫০ টাকা, খুচরো ৬০ টাকা। অথচ এক সপ্তাহ আগেও সিলেটে শীতকালীন প্রতিটি সবজির দাম কেজি প্রতি ১০-১৫ টাকা কম ছিলো।
সবজির দাম বাড়তি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সোবহানীঘাটে আড়তদার তোফাজ্জল হোসেন দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, এবার কয়েক দফায় পরিবহন বন্ধ থাকায় চারা সংকট সৃষ্টি হয়। সে জন্য শীতকালীন সবজির চাষ অন্য বছরের তুলনায় এমনিতেই কম হয়েছে। এ ছাড়া বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে কিছু সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এসব কারণে সবজির দাম অন্য বছরের তুলনায় বেশি। অন্যবছর এ সময় হাটে প্রতিদিন ৫০-এর বেশি ট্রাক সবজি আমদানি হতো। এবার আমদানি হচ্ছে গড়ে প্রতিদিন ৫ ট্রাক। সরবরাহের ঘাটতির কারণে শীতকালীন প্রায় সব শাকসবজির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। এ দাম আরও বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করেন আড়তদার তোফাজ্জল হোসেন।
তবে তোফাজ্জল হোসেন চাষ ও আমদানি কমের দাবি করলেও বাজার ঘুরে সবজির আধিক্যই দেখা গেছে। এর বাইরে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যও রয়েছে। তাদের কারণে দাম আরও বেড়ে যায়- এমনটি বলছেন খুচরো বিক্রেতা ও ভুক্তভোগীরা।
সিলেট নগরীর রিকাবীবাজারের সবজি ব্যবসায়ী শাহীন আহমদ আনন্দবাজারকে বলেন, গত এক সপ্তাহ থেকে সব রকমের সবজির দাম ঊর্ধ্বগতি। এখন পর্যন্ত দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং প্রতিদিন কেজিতে ২/৩ টাকা করে বাড়ছে। তবে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে বলে দৈনিক আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর সিলেট জেলার সহকারী পরিচালক আমিরুল ইসলাম মাসুদ। তিনি বলেন, বাজার যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেদিকে আমাদের নজরদারি রয়েছে। নিয়মিত অভিযানও পরিচালনা করা হচ্ছে।
আনন্দবাজার/শহক