দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে মৌলভিত্তিক ভালো কোম্পানির শেয়ার দর কদর বেড়েছে। সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৮০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। এ সময় ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ৪২৮ কোটি ৮৭ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৬ টাকার শেয়ার। সপ্তাহটিতে লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানি ১ হাজার ৯৬৭ কোটি ৮০ লাখ ৭১ হাজার টাকা বা ৩০ দশমিক ৬১ শতাংশ শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করেছে। লেনদেন সেরা বেক্সিমকো ও বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ৭৪৭ কোটি ৩৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়।
গেল সপ্তাহে টপটেন লেনদেনের শীর্ষে থাকা ‘এ’ ক্যাটাগরির বেক্সিমকো একাই ৪৫০ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার টাকার বা ৭ শতাংশ শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। লেনদেনের শীর্ষে থাকলেও কোম্পানির শেয়ার দরের পতন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) শেয়ার প্রতি দর দাঁড়িয়েছে ১৫১ দশমিক ১০ টাকা। আগের সপ্তাহে বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) শেয়ার প্রতি দর ছিল ১৫৩ দশমিক ৫০ টাকা। সপ্তাহটিতে কোম্পানির শেয়ার প্রতি দর পতন হয়েছে ২ দশমিক ৪০ টাকা বা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ সময় কোম্পানিটির ২ কোটি ৯৭ লাখ ২৭ হাজার ৩৫২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিটি পরিশোধিত মূলধন ৮৭৬ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার। শেয়ার সংখ্যা ৮৭ কোটি ৬৩ লাখ ১৮ হাজার ৮৭৯টি।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা ‘এ’ ক্যাটাগরির বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ২৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকার বা ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি শেয়ার প্রতি দর দাঁড়িয়েছে ১৩৪ দশমিক ৮০ টাকা। আগের সপ্তাহে ২৭ জানুয়ারি শেয়ার প্রতি দর ছিল ১৩১ দশমিক ৩০ টাকা। সপ্তাহটিতে কোম্পানির শেয়ার প্রতি দর উত্থান হয়েছে ৩ দশমিক ৫০ টাকা বা ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এসময় কোম্পানিটির ২ কোটি ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬০৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিটি পরিশোধিত মূলধন ১৫২ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার। শেয়ার সংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৪০টি। সপ্তাহটিতে লেনদেনে শীর্ষে থাকা কোম্পানি দুটি মোট ৭৪৭ কোটি ৩৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার ‘বি’ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো বিধায় নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। আবার যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘জেড’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া ‘এন’ ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো ‘এন’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।
ডিএসইর সূত্রে জানা যায়, গেল সপ্তাহে টপটেন গেইনার তালিকায় ৩০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারের অবস্থান করেছে। টপটেন লুজারে অবস্থান করেছে ৫০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া টপটেন লেনদেনে ৮০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারের দাপট ছিল। অপরদিকে, টপটেন গেইনারে ৩০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরি এবং ৪০ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরি শেয়ার অবস্থান করেছে। লুজারে ৫০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ারের অবস্থান করেছে। এছাড়া টপটেন লেনদেনে ১০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরি এবং ১০ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ারের অবস্থান করেছে। এই ধরনের চিত্রকে সবাই স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হচ্ছে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টারা।
ডিএসইর সূত্র মতে, ‘গত সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৬ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৬ দশমিক ৮০ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও কমেছে দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৬ শতাংশ।’
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহ শেষে পিই রেশিও অবস্থান করেছে ব্যাংক খাতের ৮ দশমিক ১০ পয়েন্টে, জ্বালানি শক্তি খাতের ১২ পয়েন্টে, বিবিধ খাতের ১৫ দশমিক ১১ পয়েন্টে, টেলিযোগাযোগ খাতের ১৭ দশমিক ৭০ পয়েন্টে, ওষুধ রসায়ন খাতের ১৮ দশমিক ৪০ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতের ১৯ দশমিক ৫০ পয়েন্টে, সাধারণ বীমা খাতের ২০ দশমিক ৮০ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতের ২০ দশমিক ৯০ পয়েন্টে, সিরামিক খাতের ২২ দশমিক ৮০ পয়েন্টে, নন ব্যাংকি আর্থিক খাতের ২৪ দশমিক ১০ পয়েন্টে, সেবা আবাসন খাতের ২৫ দশমিক ৮০ পয়েন্টে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ৩১ দশমিক ৫০ পয়েন্ট এবং খাদ্য আনুষঙ্গিক খাতের ৩২ পয়েন্টে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিই ধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানান বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে। মানে পিই হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত খাতগুলোর পিই রেশিও ৪০ পয়েন্টের মধ্যে রয়েছে।
গেল সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮৪টির শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। সপ্তাহটিতে ‘এন’ ক্যাটাগরির ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি ছিল। সপ্তাহটিতে লেনদেনে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৫৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ বৃদ্ধির মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন গেইনারে শীর্ষে উঠে আসে। গেল সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৬৬টির শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে।
সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির শমরিতা হাসপাতাল শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে কম ছিল। লেনদেন মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ১৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এই কমার মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন লুজারের শীর্ষে উঠে আসে। এ ছাড়া সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির বেক্সিমকোর শেয়ার অর্থের পরিমাণে লেনদেন শীর্ষে উঠে আসে। দ্বিতীয় অবস্থানে ওঠে এসেছে ‘এ’ ক্যাটাগরির বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের শেয়ার। সপ্তাহটিতে কোম্পানি দুটি মোট ৭৪৭ কোটি ৩৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়। এ মাধ্যমে কোম্পানি দুই ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে।
গেল সপ্তাহে টপটেন গেইনারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিডি থাই ফুড (এন ক্যাটাগরি) ৫৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস (বি ক্যাটাগরি) ৩৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, ইয়াকিন পলিমার (বি ক্যাটাগরি) ২৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ, ন্যাশনাল পলিমার (এ ক্যাটাগরির) ২২ দশমিক ৬৫ শতাংশ, একমি পেস্টিসাইড (এন ক্যাটাগরি) ১৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংক (এন ক্যাটাগরি) ১৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, কাট্রালি টেক্সটাইল (এ ক্যাটাগরির) ১২ দশমিক ৯৩ শতাংশ, রুপালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স (এ ক্যাটাগরির) ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স (বি ক্যাটাগরি) ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে।
ওই সপ্তাহে টপটেন লুজারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে হামিদ ফেব্রিক্স (বি ক্যাটাগরি) ১২ দশমিক ৩৬ শতাংশ, আইসিবি (এ ক্যাটাগরির) ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস (এ ক্যাটাগরির) ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, মালেক স্পিনিং (এ ক্যাটাগরির) ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স (এ ক্যাটাগরির) ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ, সিমটেক্স (বি ক্যাটাগরি) ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ, দেশ গার্মেন্টস (বি ক্যাটাগরি) ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ, একটিভ ফাইন (বি ক্যাটাগরি) ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সাফকো স্পিনিং (বি ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ করে শেয়ার দর কমেছে।
এছাড়া টপটেন লেনদেনে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক (এন ক্যাটাগরি) ১৮৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা (এ ক্যাটাগরির) ১৭৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, লার্ফাজ-হোল্ডসিম (এ ক্যাটাগরির) ১৭৭ কোটি টাকা, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস (বি ক্যাটাগরি) ১৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, আরএকে সিরামিক (এ ক্যাটাগরির) ১৪৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, কুইন সাউর্থ টেক্সটাইল (এ ক্যাটাগরির) ১৩১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, ন্যাশনাল পরিমাল (এ ক্যাটাগরির) ১২৪ কোটি ৯৮ লাখ এবং পাওয়ার গ্রিড (এ ক্যাটাগরির) ১১৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়।
আনন্দবাজার/শহক