ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পেঁয়াজের সঙ্গে বেড়েছে আরো এক ডজন পণ্যের দাম

দীর্ঘ তিন মাস ধরে পেঁয়াজের বাজার নজিরবিহীন অস্থিরতা বিরাজ করছে। পুরো জাতি যখন পেঁয়াজ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছে। ঠিক এই সময়ের মধ্যে নীরবে বেড়ে গেছে আরো এক ডজন পণ্যের দাম।

পেঁয়াজের সঙ্গে বেড়েছে চাল, তেল, ডিম, আদা, রসুন, ময়দা, মরিচ, হলুদ, মসলা, চিনিসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দর। এ সময়ে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিটি ক্ষেত্রেই কারসাজি করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।

দেশজুড়ে যখন পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বগতি। আর এই সুযোগে যৌক্তিক কারণ ছাড়াই অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা তুলছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এসব নিত্যপণ্য কিনতে নিয়মিত বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা।

বর্তমানে বাজারে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু এর পরও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছে অসাধু চক্র। সপ্তাহের ব্যবধানে মসলা পণ্য এলাচের দাম কেজিতে ৬০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়, অথচ টিসিবির তথ্যানুযায়ী আগের সপ্তাহে এর দাম ছিল ২ হাজার ৪০০ টাকা।

খুচরা চালের বাজারে এখন মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা, নাজিরশাইল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, আটাশ ৪০ টাকা, ঊনত্রিশ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, স্বর্ণা চাল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায়। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও মিনিকেট চালের দাম ছিল ৪১ থেকে ৪২ টাকা, নাজির ৫০ থেকে ৫২ টাকা, আটাশ ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা, ঊনত্রিশ ৩২ থেকে ৩৩ টাকা, স্বর্ণা চাল ২৬ থেকে ২৭ টাকা।

নিত্যপ্রয়োজনীয় মসলা পণ্যগুলোর মধ্যে শুকনা মরিচের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫৫ টাকা এবং হলুদের দাম বেড়েছে ৩৫ টাকা। চলতি সপ্তাহে প্রতি কেজি শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ৩২০ টাকায়, যা দু’সপ্তাহ আগে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা ছিল। এখন হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকায়, যা আগে ছিল ১৬০ থেকে ২০০ টাকা।

গতকাল প্রতি কেজি চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা ও দেশি রসুন ১৭০ থেকে ২০০ টাকা। দেশি পুরনো আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও নতুন আদা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং আমদানি করা আদায় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোলায়মান খান বলেন, যে কোম্পানিতে চাকরি করি তার অবস্থাই এখন ভালো না। গত তিন বছর ইনক্রিমেন্ট নেই। একই বেতনে চাকরি করছি। অথচ এ সময়ে সংসার খরচ বেড়ে গেছে প্রায় ৫০ পার্সেন্ট। লেখাপড়ার খরচ, বাসাভাড়া, চিকিৎসা ব্যয়, গ্যাস-বিদুতের বিলসহ বেড়েছে সবই । তার ওপর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম তো আকাশছোঁয়া।

তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে সব ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। তবে গ্রামের অবস্থাও তো ভালো না। সেখানে আরো অরাজকতা চলছে। খারাপ মানুষ এবং অসাধূ উপার্জনকারী ছাড়া সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকাই এখন দায় হয়ে পড়েছে।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দু-একটি ছাড়া অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যর দাম বৃদ্ধির যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এ ক্ষেত্রে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা দেখে অতিমুনাফার সুযোগ নিচ্ছে অন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা।

ক্যাব সভাপতি বলেন, পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের অসহযোগিতার কারণে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এটি দেখে অন্য ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। এক কথায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। এটি কঠোরভাবে সরকারের দমন করা উচিত।

 

আনন্দবাজার/এম.কে

সংবাদটি শেয়ার করুন