বিদায়ি সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর পুঁজিবাজার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচকসহ (ডিএসইএক্স ও সিএএসপিআই) মূলধন কমেছে। এই সময় লেনদেনসহ বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। গেল সপ্তাহে দুই পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ১ হাজার ৭৭৯ হাজার ৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিএসইর ৭২০ কোটি ২৩ টাকা এবং সিএসইর ১ হাজার ৫৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
বছরের শুরুর প্রথম তিন সপ্তাহ (১৫ কার্যদিবস) পুঁজিবাজারে মূলধনের চমক থাকলেও বিদায়ি দুই সপ্তাহে পতনে নেমে এসেছে। বছরের প্রথম তিন সপ্তাহে কারণবিহীন বেড়ে উঠেছে পুঁজিবাজার মূলধন। হঠাৎ করেই গেল দুই সপ্তাহে মূলধন কমতে দেখা গেছে। তাল মিলিয়ে বছর শুরুর তিন সপ্তাহে লেনদেন উত্থানে চমক থাকলে বিদায়ি দুই সপ্তাহে লেনদেন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
পুঁজিবাজারে মূলধন বাড়া-কমা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে অতিরিক্ত বৃদ্ধি যেমন ভালো লক্ষ্মণ না, তেমনি কমাও নয়। সব ক্ষেত্রেই বাড়া-কমার একটা সীমা থাকে। যখন সেই সীমা অতিক্রম করে, সেই ক্ষেত্রে সবার মনে অনেকগুলোর প্রশ্ন তৈরি হয়। এসব প্রশ্নের পরিষ্কার ও যৌক্তিক জবাব জানা থাকলে, সেটা অন্য কথা। না জানা থাকলে সেই ক্ষেত্রে বিজ্ঞরা বিযয়টি ভালো চোখে দেখে না।
চলতি বছরের শুরুর প্রথম ১৫ কার্যদিবস পুঁজিবাজরের দুই স্টকের মূলধন বেড়েছিল ৪৭ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। মূলধনের এ ধরনের বৃদ্ধিকে বাঁকা চোখে দেখেছিলেন অনেকেই। এই বৃদ্ধির কারণে নানান ধরনের প্রশ্ন জন্ম দিয়েছিলো। অনেকেই মনে করেছিলেন পুঁজিবাজারে থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে খারাপ চক্রদের নতুন কৌশল। এসব কারণে অনেকেই নতুন করে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত ছিলেন। বিরত থাকার পর গত দুই সপ্তাহ বা ১০ কার্যদিবস পুঁজিবাজরের দুই স্টকের মূলধন কমেছে ৬ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পুঁজিবাজরে মূলধন এ ধরনের কমা স্বাভাবিক নিয়মে হয়েছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকে পুঁজিবাজারে দেখা যাচ্ছে সূচকসহ লেনদেন উত্থান ক্ষেত্রে চমক। কেন দেখাচ্ছে তার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। হতে পারে গত বছরের শেষদিকের মন্দা পুঁজিবাজার থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে সব ধরনের বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে তারাই নতুন বছরে পুঁজিবাজার উত্থান ঝলক ছিল। তাই বছরের শুরুর প্রথম তিন সপ্তাহে পুঁজিবাজার উত্থান ছিল। তবে উত্থানের একটা লাগাম থাকে। সেটা অস্বাভাবিক উত্থান-পতন হাত থেকে রক্ষা করে। সেই ধারায় গত দুই সপ্তাহে পুঁজিবাজারে উত্থানের পথ কিছুটা বাধা হয়েছে। এসময় পুঁজিবাজারে অতি দামে শেয়ার ক্রয় করা থেকে বিরত সহ লোকসানে শেয়ার বিক্রয় না করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
পুঁজিবাজার ওভার-ভ্যালুড হয়ে পড়েছে অনেকের এমন মন্তব্যে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘ডিএসইর পুঁজিবাজার মুলধন ৩ লাখ কোটি টাকা থেকে সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকায় ওপরে উন্নীত হয়েছে। অনেকে এই বাজারকে ওভার-ভ্যালুড বলে মনে করছেন, যা ঠিক নয়।’
ঢাকা ও চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই) সূত্র মতে, গত বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) লেনদেন শেষে ডিএসইর পুঁজিবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬২ হাজার ১৮২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। দুই সপ্তাহে আগে বা ২০ জানুয়ারি মূলধন ছিল ৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে ডিএসইর পুঁজিবাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ৫২ কোটি ৫০ লাখ। গত বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) লেনদেন শেষে সিএসইর পুঁজিবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯১ হাজার ৬৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ২০ জানুয়ারি মূলধন ছিল ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে সিএসইর পুঁজিবাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ৭৮৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে (ডিএসই ও সিএসই) মূলধন কমেছে ৬ হাজার ৮৩৬ কোটি ৮ লাখ টাকা।
এদিকে, বিদায়ী সপ্তাহে উভয় পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২৩ দশমিক ৫২ পয়েন্টে। আর ডিএসই৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৯২ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে। এছাড়া শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৪ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫০৪ দশমিক ২৫ পয়েন্টে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১০ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৫৭৬ দশমিক ২৮ পয়েন্টে। সিএসই ৫০ সূচক ১ দশমিক ৬০ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স সূচক ৯ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৫১৯ দশমিক ৬১ পয়েন্টে, ১২ হাজার ৩৬৬ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২৮০ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই৩০ সূচক ১৫ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৪১ দশমিক ৮২ পয়েন্টে।
গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ৪২৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ৬ হাজার ১৪৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ২৭৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অপরদিক গেল সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৩৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ১৭৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৫৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
গেল সপ্তাহে দুই পুঁজিবাজারে ৬৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। এই সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৯২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৮৪টির, দর কমেছে ১৬৬টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৮টির কোম্পানির। লেদনের হয়নি চার কোম্পানির শেয়ার। সপ্তাহে সিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৪৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৬২টির, দর কমেছে ১৫৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির কোম্পানির।
গেল সপ্তাহে ডিএসইতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৪ হাজার ৭৫৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। ওই সময় ‘বি’ক্যাটাগরির ১ হাজার ১১৫ কোটি ৫৩ লাখ ৭১ হাজার টাকা, ‘এন’ ক্যাটাগরির ৩০৩ কোটি ৪৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির ৫৭ কোটি ৭৮ লাখ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। ওই সপ্তাহে সিএসইতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ১৩০ কোটি ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার ১৫১ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। ওই সময় ‘বি’ ক্যাটাগরির ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ৪২ হাজার ৩৯৭ টাকা, ‘এন’ ক্যাটাগরির ৪৮ কোটি ৮৭ লাখ ৩ হাজার ৪৩৭ টাকা ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির ১ কোটি ৮০ লাখ ২৬ হাজার ৫৭ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে।
আনন্দবাজার/শহক