ঢাকা | শুক্রবার
২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুঁজি হারানোর শঙ্কা

পুঁজি হারানোর শঙ্কা

রাজশাহীতে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। সম্প্রতি সময়ে রাজশাহীতে করোনা সংক্রামণের হার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ। এমন ভয়ানক সংক্রমণের কারণে ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ওমিক্রনের কারণে সান্ধ্যকালীন বিধিনিষেধের মধ্যে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাত ৮টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত দোকান, শপিংমহল বন্ধ থাকছে।

রাজশাহী বিভাগে শনিবার সকাল ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৮৯১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। নমুনা পরীক্ষায় বিভাগের আট জেলায় তারা শনাক্ত হন। বিভাগীয় সহকারী স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. নাজমা আক্তার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ডা. নাজমা জানান, রাজশাহীতে ৩৭৭ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪৬ জন, নওগাঁয় ৩৯ জন, নাটোরে ৬৩ জন, জয়পুরহাটে ৪৫ জন, বগুড়ায় ১৩৬ জন, সিরাজগঞ্জে ৩৫ জন এবং পাবনায় ১৫০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হন। ওই ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে করোনা পজিটিভ অবস্থায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ২২৫ জন।
রবিবার রাজশাহীর দুইটি ল্যাবে আরও ২১৫ জনের শরীরে মিলেছে ভাইরাসটি। যা নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে করোনা সংক্রমণের হার ৫৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে শুরু হয়েছে রাতের বিধিনিষেধ। রাত ৮টার পর যেন শহরে কোন দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা না থাকে তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদারকি করা হচ্ছে। শনিবারই এ বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। রাজশাহী মহানগর ছাড়াও জেলার ৯ উপজেলায় শুরু হয়েছে এই বিধিনিষেধ।

এর আগে শুক্রবার জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলের স্বাক্ষর করা এ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি শনিবার প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজশাহীর সকল বিপণিবিতান, শপিংমল, বিনোদন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁসহ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শনিবার থেকে রাত ৮টার মধ্যে আবশ্যিকভাবে বন্ধ থাকবে।

বৃহস্পতিবার জেলা করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ গণবিজ্ঞপ্তি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এটির প্রচারে শুক্রবার রাতে শহরে মাইকিং করে পুলিশ।

এরপর শনিবার রাত ৮টা থেকে নগরীতে পুলিশকে আবারও হ্যান্ড মাইক হাতে দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দিতে দেখা যায়। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতও বিষয়টি তদারকি করছিল। নগরীর সাহেববাজার এলাকায় রাত ৮টার পরও দোকানপাট বন্ধ না করায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রাজশাহী জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, শনিবার রাজশাহী জেলায় ৯টি মামলায় ৯ জনের কাছ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। করোনা সচেতনতায় বিতরণ করা হয়েছে ৭৭ পিস মাস্ক। করোনা নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের কার্যক্রম চলবে।

রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দোকান খোলা রেখে চা-বিস্কুট, পান বিক্রি করে যে লাভ হয় তাই দিয়েই সংসার চালাতাম। আগের লকডাউনে পুঁজি শেষ। আবার নতুন করে ঋণ নিয়ে শুরু করা। কিস্তি আছে কিস্তি দেই।

ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন আরো বলেন, শীতের সন্ধ্যায় দোকানে বেচাকেনা জমে। কিন্তু এই সময়টাতেই বিধিনিষেধ। বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, সংক্রমণের তুলনায় এখন পর্যন্ত মৃত্যুহার অনেক কম। কিন্তু জেলায় সংক্রমণের হার অনেক বেশি, এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। আমরা খুবই উদ্বেগের সঙ্গেই বিষয়টাকে নিয়েছি এবং মনিটরিং করছি। সে জন্য দিনের বেলায় সরকারের অন্যান্য বিধিনিষেধের পাশাপাশি রাতের জন্য স্থানীয়ভাবে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ, আমরা চাই না লকডাউনের মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন