ঢাকা | মঙ্গলবার
৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পোশাকখাতে সবুজায়ন নিয়ে গবেষণায় সিপিডি

বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮০ ভাগের আসে পোশাক খাত থেকে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে একটি উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে মধ্যম আয়ের দেশে হতে শিল্প খাতের নানান পর্যায়ে পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স বা সামঞ্জস্যতা সুনিশ্চিত করতে হবে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি), বাংলাদেশে অবস্থিত সুইডিশ দূতাবাসের সহযোগিতায় পরিবেশবান্ধব টেকসই ও জলবায়ু নিরপেক্ষ অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিকাশের লক্ষ্যে “বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক যাতে সবুজ শিল্পায়ন” নামে একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার অডিটোরিয়ামে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সেমিনারে এ ঘোষণা দেয় সংস্থাটি। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। এছাড়া বিজিএমইএ সভাপতি মো. ফারুক হোসেন ও বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমসহ বিভিন্ন সংগঠনের বক্তারা বক্তব্য রাখেন।

সিপিডি কর্মসূচিটির মাধ্যমে সবুজ শিল্পায়নের পথে বাধাগুলি বিশ্লেষণ করবে, বিদ্যমান আর্থিক কৌশলগুলি পর্যালোচনা করবে, সবুজ শিল্পায়নের জন্য উপযুক্ত সর্বোত্তম কর্মপন্থাগুলো চিহ্নিত করবে এবং কীভাবে এই শিল্পে সবুজায়নের মধ্য দিয়ে কারখানা, শ্রমিক, অর্থনীতি ও সমাজকে উপকৃত করার জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা যায় তা তুলে ধরবে।

ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ বলেন, ২০১৬ সালের পর দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য শ্রমমান সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক রীতি মেনে চলা, শিশু অধিকার, মানবাধিকারসহ কর্মপরিবেশের নিরাপত্তার মান নিশ্চিত করার চাপ বাড়বে। তাছাড়া শিল্পের সবুজায়ন করতে বিপুল বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দরকার হবে। ফলে এসব ক্ষেত্রে সরকারের নীতিসহায়তা ও বিনেয়োগের প্রয়োজনীয়তা বাড়বে। এসব ক্ষেত্রে সঠিক গাইডলাইন দেয়ার জন্য গবেষণা করবে সিপিডি।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে পারিবেশ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কিমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, শুধু পোশাক খাত নয় সব সেক্টরেই সবুজায়নে জোর দেয়া হবে। সরকারের শূণ্য নিঃসরণ অঙ্গিকারের অংশ হিসেবে ১২ মিলিয়ন ডলারের ১০ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ চুক্তি থেকে সরকার সরে এসেছে বলে জানায়ে সাবের হোসেন। এ সময় আগামী বাজেটে গ্রিন ফাইনেন্স হিসেবে সহায়তার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানান। সংসদীয় কমিটি সব শেয়রহোল্ডারদের সাথে নিয়ে সমানে কাজ করতে পারে বলেও জানান তিনি।

এ সময় সবুজ কারখানা থেকে প্রতিনিধি হিসেবে ডিবিএল গ্রুপের জাফরুল্লাহ বলেন, সরকার বা বিদেশি বায়ার কেউ সবুজ কারখানা করতে সহায়তা করেনি। এখন বায়াররা সঠিক দাম না দেয়ায় সবুজ কারখানার বিপুল বিনিয়োগ কাজে আসছে না। এ সময় গ্রিন ফ্যাক্টরি ফান্ড থেকে অর্থ সহায়তার দাবি জানান তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে শর্ত দেয়া হয় তাতে করে গ্রিন ফান্ড থেকে সহায়তা পাওয়া অসম্ভব বলে জানান পোশাক খাতের উদ্যোক্তা ফজলুল হক।

এ খাতের কর্মীদের প্রতিনিধি হিসেবে নাজমা আক্তার শ্রমিকদের বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। নাজমা আক্তার বলেন, কাজ করতে গেলে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শুধু অবকাঠামো উন্নত হলে হবে না, এখানে নারী শ্রমিকদের অধিকার ও তাদের সুরক্ষা বড় প্রশ্ন। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন কোনো আইন কিন্তু নেই। এটা করতে হবে। আইএলও কনভেনশনের ১৯০ আর্টিকেলকে বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের নারী শ্রমিকেরা ৪০ বছর বয়সের পর ফ্যাক্টরিতে থাকতে পারেন না। ফ্যাক্টরি ছেড়ে তারা কোথায় যায়, কী করছে সেটার কিন্তু খোঁজ রাখছি না। বাংলাদেশ জনবহুল দেশ হিসাবে শ্রমশক্তি বড় সম্পদ। দেশের আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারবে, সেখানে ৪০ এর পরে নারী শ্রমিক ঝরে যাচ্ছে।

গ্রিন ফ্যাক্টরির বেতন নিয়ে প্রশ্ন তুলে নাজমা বলেন, আমরা গ্রিন ফ্যাক্টরি, প্লাটিনাম ও গোল্ডের কথা বলি। কিন্তু আমাদের মূল কাঠামোই ঠিক নেই। অনেক গ্রিন ফ্যাক্টরি ঠিকমত বেতনও দেয় না। হয়ত ফ্যাক্টরির ইট-পাথর সুন্দর। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত ভেতরের সিস্টেমগুলো সুন্দর না হবে, ততক্ষণে কিন্তু সামনে এগোবে না। শ্রধু গ্রিন ফ্যাক্টরি দিয়ে শ্রমিক সংকট কাটানো যাবে না।

সেমিনারে বিজিএমইএ সভাপতি মো. ফারুক হোসেন বলেন, বাংলাদেশে সবুজ শিল্পায়ন বিষয়ে সিপিডি যে উদ্যোগটা নিয়েছে, সেটাকে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে স্বাগত জানাচ্ছি। বিজিএমইএ অনেক আগে থেকেই সবুজ শিল্পায়ন নিয়ে কাজ করছে। আরও কাজ করতে চাই। ইতোমধ্যে ১৫৭টি কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরি হয়েছে। তার মধ্যে ৪৭টি প্লাটিনাম ও ৯৪টি গোল্ড সার্টিফিকেট পেয়েছে। প্রতি মাসে গ্রিন হিসেবে সার্টিফিকেট পাচ্ছে। পরামর্শগুলো গ্রহণ করতে চাই। আমরাও দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে চাই। কোনো দুর্ঘটনা হলেই গার্মেন্টসের নাম আগে উচ্চারিত হচ্ছে। আমরা প্রমাণ করে দেখিয়েছি, আমরা কাজ করতে চাই। শুধু সমালোচনা না করে ভালো কাজগুলো ফোকাস করাও জরুরি। তাহলেই আমরা এগিয়ে যাব।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গ্রিন কারখানা বাংলাদেশে হয়েছে, তা কিন্তু আমাদের উদ্যোক্তারা নিজ উদ্যোগে করেছে। গ্রিন ইন্ডাস্ট্রিজ করে তারা কি সুবিধা পেয়েছে? ইটিপি স্থাপনে বিদেশ থেকে ক্যামিক্যাল আমদানিতে সরকার শুল্ক আরোপ করে কেন? এনবিআরকে বারবার বলেও এর সুরাহা পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি আমাদের গ্রিন ফ্যাক্টরিগুলো পৃথিবীর জন্য রোল মডেল।

সংবাদটি শেয়ার করুন