দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ১৬টি সমস্যার মধ্যে এক নম্বর হিসেবে দুর্নীতিকে চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীরা। যা ব্যবসা করার ক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। দ্বিতীয় সমস্যা হিসেবে অদক্ষ প্রশাসনের কথা বলেছেন তারা। আর তৃতীয় সমস্যা হিসেবে অর্থায়নের সীমিত সুযোগকে উল্লেখ করেছেন। ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) করা এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজস্ব কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের ফল প্রকাশ করে সিপিডি। ২০২১ সালে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ উদ্যোক্তা মতামত জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
সিপিডি জানায়, ব্যবসায় পরিবেশ জরিপের সময়কাল ছিল গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ফরিদপুর এলাকায় অবস্থিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১০টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। দেশের ৭৩টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছিল। যাদের মূলধন ছিল ১০ কোটি টাকার ওপর। কৃষি, সেবা ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের ব্যবসায়ীদের ওপর জরিপটি করা হয়।
ফলাফলে দেখা গেছে, ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল নড়ে না। ফলে তাদের ব্যবসায় প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো দুর্নীতি। আবার ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী অদক্ষ আমলাতন্ত্রকে দায়ী করেছেন। এছাড়া ৫৫ শতাংশ ব্যবসায়ী টাকা পাওয়ার সুযোগ সীমিত থাকার কথা বলেছেন। এরপরে আছে যথাক্রমে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ঘনঘন নীতিবদল। ২৮ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, করোনার প্রভাবে তাদের খরচ কমাতে হচ্ছে। ফলে খরচ কমাতে ও ব্যবসা সামলাতে তাদের শ্রমিক ছাঁটাই করতে হচ্ছে।
এর আগে ২০২০ সালেও ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে একটি জরিপ করেছিল সিপিডি। সেসময় ব্যবসা করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে উঠে এসেছিল অদক্ষ প্রশাসন। তখন ব্যবসায়ীরা দুর্নীতিকে দ্বিতীয় ও সীমিত অর্থের সুযোগকে তৃতীয় প্রতিবন্ধকতার কথা বলেছিল। এবারের জরিপে দুর্নীতি ১ নম্বর অবস্থানে উঠে এসেছে। এছাড়া আগামী ১০ বছরে দেশে নতুন কী কী ব্যবসা উঠে আসবে এরও জরিপে একটি ধারণা পাওয়া গেছে। এতে, ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ীরা বলছে, ডিজিটাল আর্থিকসেবা আরও বিকশিত হবে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে তাদের ব্যবসা পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে খারাপ যাচ্ছে। আবার কোনো ব্যবসা গুটিয়েও নিতে হয়েছে। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ছাঁটাই করাও হয়েছে। যার কারণে কিছু প্রতিষ্ঠান টিকে থাকা দায় হয়ে পড়ছে। তারা আরো বলেন, করোনা মহামারির কারণে তাদের ব্যবসা পুনরুদ্ধারে আরও ৩ বছর সময় লাগবে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দুর্নীতি, অদক্ষ প্রশাসন ও সীমিত অর্থের সুযোগ ব্যবসায়ীদের এখন মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ব্যবসার খরচ বাড়ছে। যার মূল প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের ওপর। এর কারণে সাধারণ মানুষ আজ এক প্রকার দিশেহারা হয়ে পড়ছে। তিনি আরো বলেন, এ ব্যাপারে খুব শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
সিপিডির আশঙ্কা করছে, মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইতোমধ্যে কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে ব্যবসায় দীর্ঘমেয়াদের লোকসানের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। সিপিডি বলছে, করোনার পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হচ্ছে এটা ঠিক, কিন্তু সেটা অন্তর্ভুক্তিমূলক হচ্ছে না। এ বিষয়টি সরকারের নীতিকাঠামোতে চিন্তা করতে হবে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বড় বড় ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি, অদক্ষ প্রশাসন ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা খুব একটা সমস্যা করছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়ছেন গ্রামীণ অঞ্চলে যারা ক্ষুদ্র, মাঝারি ও প্রান্তিকে ব্যবসা করছেন। ইতোমধ্যে তাদের অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়েছে।
আনন্দবাজার/শহক