ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের অর্ধেকের কিছুটা কম শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকে। বাকি ৫৬টি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ রয়েছে অর্ধেকের বেশি। দেশের ৬১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণ রয়েছে মোট ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকা রয়েছে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকে। আর শীর্ষ ১০ ব্যাংকের দখলে রয়েছে ৬৩ হাজার কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৬২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে প্রতিবেদনে ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়নি। ব্যাংকগুলোর তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ থাকায় শীর্ষ ৫টি ব্যাংকের বেশি ঝুঁকি রয়েছে। খেলাপি ঋণের কারণে এসব ব্যাংকের মোটা অঙ্কের অর্থ প্রভিশন খাতে আটকে রয়েছে। এর বিপরীতে মূলধন ঘাটতিও রয়েছে। সব মিলে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিকভাবে মোট ঋণের ৩ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ হলেই ওই ব্যাংককে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খেলাপি ঋণ যেমন শীর্ষ ১০ ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি। তেমনই সম্পদের দিক থেকেও অন্য ১০টি ব্যাংক এগিয়ে রয়েছে। ব্যাংকিং খাতে মোট সম্পদের ৪৭ শতাংশই রয়েছে ১০ ব্যাংকের হাতে। বাকি ৫১ ব্যাংকের হাতে রয়েছে ৫৪ শতাংশ সম্পদ। শীর্ষ ৫ ব্যাংকের হাতে রয়েছে ৩২ শতাংশ সম্পদ। বাকি ৫৬ ব্যাংকের হাতে রয়েছে ৬৮ শতাংশ সম্পদ। ব্যাংকের সম্পদ বলতে ঋণকে বোঝায়।
গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে ৭টি ব্যাংকের। ১৫ শতাংশের বেশি থেকে ২০ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ রয়েছে ৫টি ব্যাংকের। ১০ শতাংশের বেশি থেকে ১৫ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ রয়েছে ৩টি ব্যাংকের। ৫ শতাংশের বেশি থেকে ১০ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ রয়েছে ১০টি ব্যাংকের। ৩ শতাংশের বেশি থেকে ৫ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ আছে ১৯টি ব্যাংকের। ২ শতাংশের বেশি থেকে ৩ শতাংশের কম খেলাপি রয়েছে ৮টি ব্যাংকের। ২ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ আছে ৯টি ব্যাংকের।
২ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক। মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে ৯০ শতাংশই দুই বছরের বেশি সময় ধরে খেলাপি হয়ে আছে। অর্থাৎ মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে ৯০ হাজার কোটি টাকাই আদায় অযোগ্য ঋণে পরিণত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মে কোনো খেলাপি ঋণ দুই বছরের বেশি সময় আদায় না হলে তাকে আদায় অযোগ্য ঋণ হিসাবে ধরা হয়।
মোট খেলাপির মধ্যে নতুন খেলাপি হয়েছে মাত্র সাড়ে ৬ শতাংশ ঋণ। অর্থাৎ ৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। খেলাপি হওয়ার পর ছয় মাস অতিক্রম হলে তাকে সন্দেহজনক ঋণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। খেলাপি হওয়ার পর সন্দেহজনক পর্যায়ে গেছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ ঋণ। অর্থাৎ ৪ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতে ঋণ ও আমানত বাড়লেও মূলধন কমেছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকিং খাতে মূলধন ছিল ৯ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তা কম হয়েছে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা মূলধন কমেছে। খেলাপি ঋণ বাড়ার ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বাড়ার কারণে ব্যাংকিং খাতে মূলধন কমেছে।
এদিকে নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণও বেড়েছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এ খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১০ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। ওই সময়ে মোট খেলাপি ঋণের হার ১৫ দশমিক ৪৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ।
আনন্দবাজার/শহক