চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্যজট কমাতে চট্টগ্রাম কাস্টমসে এক কোটি ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ৩ জাপানি গাড়ি, ব্যবহৃত মেশিনারি, সিরামিকপণ্য, গার্মেন্টসপণ্য, জুতা, বোবিলোশনসহ ৬৩ লট পণ্য নিলামে তোলা হচ্ছে আগামী ২৩ জানুয়ারি। নিলাম শাখা জানায়, নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্যাটালগ ও দরপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন নিলামে অংশগ্রহণকারীরা (বিডার)।
আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে সরবরাহ নিতে হয়। এ সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। সর্বমোট ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে তোলার এ নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর ও কাস্টমস। এতে করে বন্দরের ইয়ার্ডে এসব কন্টেনার পড়ে থাকে। আমদানি পণ্য যথাসময়ে খালাস না নেওয়ায় বন্দরে প্রায়ই কন্টেনার জট লাগে। দিনের পর দিন কন্টেনার পড়ে থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো চার্জ পায় না। তাই বন্দরের জট কমাতে চট্টগ্রাম কাষ্টমস কর্তৃপক্ষ প্রতিমাসে নিয়মিত দুটি করে নিলাম আয়োজন করছে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, এবারের নিলামে তোলা জাপানের তৈরি ২০১৯ সালের রয়েল ব্লু কালারের নিশান এটলাস পিকআপ ভ্যানের মূল্য ধরা হয়েছে ৭১ লাখ ৯৮ হাজার ৩০৪ টাকা। জাপানের তৈরি ১৯৯৮ সালের টয়োটা ব্র্যান্ডের নেভি কালারের মাইক্রোবাসের দাম ধরা হয়েছে ২৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬২ টাকা। জাপানের তৈরি ২০০৩ সালের নিশান ব্র্যান্ডের সাদা কালারের মাইক্রোবাসের দাম ধরা হয়েছে ২১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৬ টাকা। এ দুটি গাড়ি ইতিপূর্বে ছয়বার নিলামে তোলা হয়েছিল কিন্তু উপযুক্ত মূল্য না পাওয়াতে গাড়ি দুটি বিক্রি হয়নি।
গাড়ি ছাড়াও নিলামে তোলা হচ্ছে প্যাকিং ম্যাটারিয়ালস, জেন্টস আন্ডারওয়্যার, সালফিউরিক এসিড, টেক্সটাইল কেমিক্যাল, ড্রাগন ফল, পেপার ট্যাগ, ল্যাবরেটরি সাপ্লাইস, হ্যান্ড সেনিটাইজার, গার্মেন্টস ফেব্রিক্স, সেলফ অ্যাটহেসিভ ট্যাপ, সিরামিক টাইলস, কনক্রিট ব্লক, মাইক্রোজেল পাউডার, জেনারেল মার্চেন্ডাইজ, বেবি লোশন, চশমা, প্লাস্টিক বাটন, শার্ট, অ্যাপ্রন, পলিব্যাগ, জুতা, পোলো শার্ট, নির্মাণ সামগ্রী, ফিসফিড, রসুন, তেঁতুল বিচি, ফ্যানের যন্ত্রাংশ, স্প্রে কোটিং, ডুপ্লেক্স পেপার, তৈরি পোশাক, করাতের ব্লেড, ব্যবহৃত মেশিনারি, এক্সেসরিজ, টিস্যু পেপার, আর্ট পেপার, মিডিয়াম পেপার।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখা জানায়, বিডাররা অফিস চলাকালীন চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখা এবং নিলাম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কে এম করপোরেশনের মাঝিরঘাটের অফিস থেকে ক্যাটালগ ও দরপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত শুল্ক আবগারি ও ভ্যাট কমিশনারেটের যুগ্ম-কমিশনারে (সদর) কার্যালয় থেকেও মূল্য পরিশোধ করে ক্যাটালগ ও দরপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। নিলামের দরপত্র ১৯ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি বেলা ২টার মধ্যে জমা দেয়া যাবে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তার (প্রশাসন) কার্যালয়ে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ও ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত শুল্ক আবগারী ও ভ্যাট কমিশনারেটের যুগ্ম-কমিশনারের (সদর) কার্যালয়ে। এরপর ২৩ জানুয়ারি বেলা আড়াইটায় বিডারদের উপস্থিতিতে দরপত্রের বাক্স খোলা হবে।
নিলাম সম্পন্ন হওয়ার পর সর্বোচ্চ দরদাতাদের অনুকূলে পণ্য বিক্রির অনুমোদন দিবেন নিলাম কমিটির সদস্যরা। নিলামে অংশগ্রহণ করতে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দরপত্রের সঙ্গে হালনাগাদ করা ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সনদ, টিআইএন সার্টিফিকেটের কপি দাখিল করতে হবে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং হালনাগাদ টিআইএন সার্টিফিকেটের কপি দাখিল করতে হবে। এছাড়া ক্যাটালগে উল্লেখিত শর্ত পূরণ করে নিলামে অংশ নেয়া যাবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপ-কমিশনার আলী রেজা হায়দার বলেন, নিলাম আমাদের রুটিন কার্যক্রমের একটি অংশ। পণ্যের জট কমাতে প্রতিমাসে দুটি করে নিলাম আয়োজন করা হয়। এবারের নিলামে ৩টি জাপানি গাড়িসহ ৬৩ লট বিভিন্ন ধরণের পণ্য তোলা হচ্ছে।
আনন্দবাজার/শহক