করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’। এ ধরনের বিস্তার নিয়ে উদ্বিগ্ন গোটা বিশ্ব। যার ফলে এখনই বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আর এর প্রভাব বাংলাদেশেও কিছুটা পড়েছে। ফলে শুধু স্বাস্থ্য খাতই নয়, এর প্রভাব দেশের অর্থনীতির ওপরও পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা এ ব্যাপারে সতর্ক করছেন সরকারকে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ভাইরাসটির বিস্তার রোধে নতুন করে স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে সরকার। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় থাকা অর্থনীতি নতুন করে আতঙ্ক ছড়ানো ওমিক্রনের প্রভাবে কি আবারও হোঁচট খাবে, নাকি ধাক্কা সামলে সামনের দিকে আগাবে- এ বিষয়ে আলোচনা চলছে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে।
বিশেষ করে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি ব্যাংক খাত কোন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে বেশি আলোচনা চলছে। এসব নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কথা বলেছেন বিশিষ্ট ব্যাংকারদের অনেকেই। তাদের আলোচনা থেকে জানা যাচ্ছে, ওমিক্রনে কিছুটা শঙ্কা দেখা দিলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করছেন তারা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সরকার এর শুরু থেকেই এ বিষয়ে ভালো পদক্ষেপ নিচ্ছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষও আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ধাক্কা সামাল দিতে না দিতেই নতুন ওমিক্রনের কারণে সাধারণ মানুষ কিছুটা চিন্তিত। তবে, এ বিষয়ে সাধারণ মানুষ আগের চেয়ে বেশি সচেতন। কারণ দেশে যখন করোনাভাইরাস আসে- তখন এ ব্যাপারে মানুষ কিছু জানতো না। পরে সাধারণ মানুষ অনেক সচেতন হয়ে পড়ে। যার কারণে করোনার ধাক্কা তেমন লাগেনি। ফলে ওমিক্রনের ধাক্কাও সামাল দিতে পারবে সরকার।
তবে ওমিক্রনের ধাক্কা সামলাতে হলে আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই মনে করছেন তারা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই চললে দেশে এর প্রভাব তেমন পড়বে না বলেও মনে করছেন তারা। ওমিক্রনের জন্য লকডাউন দিলে কোনো সুফল বয়ে আনবে না বলেও তারা মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁও শাখার ডাচ বাংলা ব্যাংকের ম্যানেজার বলেন, করোনার আরেকটি উপসর্গ হচ্ছে ওমিক্রন। সরকার নতুন এ ভেরিয়েন্টের বিস্তার রোধে ইতোমধ্যে কিছু বিধিনিষেধ দিয়েছে। আমি মনে করি, এটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা মেনে চলা কঠিন কিছু নয়। এটি মানলে আমাদের অর্থনীতি খুব সুন্দরভাবে এগিয়ে নিতে পারব।
ব্যাংক খাতে ওমিক্রনের কেমন প্রভাব পড়তে পারে এ ব্যাপারে ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, গত দুই বছর ঋণ শোধ না করেও কেউ খেলাপি হননি। তবে, আস্তে আস্তে বিভিন্ন ছাড় বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদন বলে দেবে ব্যাংক খাত আসলে কোন অবস্থায় আছে। এছাড়া বিভিন্ন ছাড়ের কারণে পরিচালনা মুনাফা বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, অনেক ব্যবসায়ীর ঋণ পরিশোধের ইচ্ছা আছে কিন্তু দিতে পারছেন না। আবার অনেকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা আছে কিন্তু ইচ্ছা নেই। এ ক্ষেত্রে ঋণের টাকা ফেরত আনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের বিভিন্ন সেক্টর সহযোগিতা করবে এমনটাই প্রত্যাশা। দুই বছর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। তবে, কোনো ব্যবসায়ী যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যাংক অবশ্যই এ বিষয় দেখবে।
বর্তমানে আমাদের অর্থনীতি অন্য সব দেশের চেয়ে অনেক চাঙা’ বলে মনে করছেন অনেক ব্যাংকার। তারা বলছেন, বিধিনিষেধের কারণে দু-একটি খাত হয়তো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তবে সার্বিকভাবে খুব একটা ক্ষতি হবে না। যেভাবে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে, এটা পরিপালন করা সহজ। এর মধ্যে কাজ করা তেমন কঠিন নয়।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বক্তব্য হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্ক হয়ে চললে আশা করা যায় ওমিক্রন মোকাবিলা করা সম্ভব। এছাড়া করোনা আমাদের জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে মনে করেই জীবন-জীবিকা একসঙ্গে চালাতে হবে বলে মনে করছেন তিনি।
আনন্দবাজার/শহক