সানলাইফ ইন্সুরেন্সের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করেছেন বগুড়া জেলা দায়রা জজ আদালত। ইসলামী আ’সান বীমা প্রকল্পে গ্রাহকের তিন লাখ ৩৩ হাজার টাকার বীমা দাবি পরিশোধ না করার মামলায় এ গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করা হয়। আসামিরা হলেন, কোম্পানিটির সাবেক পরিচালক ও মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শহিদুল ইসলাম, সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আসলাম রেজা, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) রবিউল আলম, বগুড়া অফিসের জুনিয়র অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম শান্ত ও হিসাব রক্ষক আলমগীর হোসেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ইসলামী আ’সান বীমা প্রকল্পের তিন লাখ ৩৩ হাজার টাকা বীমা দাবি পরিশোধ না করায় সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুধ্যে বগুড়া জেলা দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। আমমি আদালতে ৪০৬, ৪২০, ৫০৬ ও ৩৪ ধারায় করা মামলা নং ১২০০/সি। ২০২০ সালে সেলিনা বেগম নামে এক গ্রাহক বাদি হয়ে মামলাটি করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ১১ জানুয়ারি কোম্পানিটির পরিচালচকসহ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করা হয়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পাঁচ থেকে ছয় বছর পরও তাদের বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করছে না কোম্পানিটি। তাই বাধ্য হয়ে মামলা দায়ের করতে হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বছরের পর বছর ধর্ণা দিয়েও গ্রাহকরা বীমার টাকা আদায় করতে পারছেন না। উল্টো গ্রেফতারি পরওয়ানা হওয়া মামলা তুলে নিতে গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে কোম্পানিটির বগুড়া জেলার আইনজীবী খন্দকার মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলার গাবতলী এলাকার মাঠকর্মী মমতাজ বেগম দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, বছরের পর বছর বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়েও গ্রাহকের টাকা তুলতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে একাধিক গ্রাহক একত্রিত হয়ে মামলা করার কথা জানান। পরে সেলিনা বেগম নামে এক গ্রাহক বাদি হয়ে সানলাইফের বিরুদ্ধে তিন লাখ ৩৩ হাজার টাকা প্রতারণার মামলা করেন। মামলায় গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি হওয়ার পর সানলাইফের আইনজীবী খন্দকার মিজানুর রহমান আমাকে ফোন দিয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দেন। আমি মামলা না তোলায় তিনি চেক দেয়ার অফার করেন। আগে চেক পরে মামলা তুলে নেয়া হবে বলে জানিয়ে দেই তাকে। কিন্তু তিনি আমাকে হুমকি দিয়েই যাচ্ছেন।
হুমকির অভিযোগের বিষয়ে আইনজীবী খন্দকার মিজানুর রহমান দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি কাউকে কোনো হুমকি দিইনি। তবে মমতাজ বেগমকে মামলা তুলে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, তাকে চেক দেয়ার বিনিময়ে মামলা তুলে নেয়ার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি চেক নিতে রাজি না। উনি নগদ টাকা নিতে চান। কিন্তু কোম্পানির নগদ টাকা দেয়ার কোনো সিস্টেম নেই।
মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে মিজানুর রহমান বলেন, মমতাজ দুর্নীতি পরায়ণ একজন কর্মী ছিলেন। যখন আমাদের কোম্পানিতে ছিলেন তখন তিনি গ্রাহককে ভুয়া চেক দিয়ে প্রতারণা করেছেন। তাই তিনি এখন চেক নিতে চাচ্ছেন না। আমরা এর আগেও তাকে গ্রাহকদের জন্য চেক দিয়েছি। কিন্তু তিনি তা রিসিভ করেননি। যার মেয়াদ এখন শেষ হয়ে গেছে। আমরা আবার নতুন চেক দেয়ারও অফার করেছি কিন্তু তিনি তা নিতেও রাজি নন। কেন চেক নিচ্ছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুয়েকটা চেকে একাউন্ট নাম্বার ভুল ছিলো তাই তিনি নেননি। আমরা ঠিক করে দিবো বলেছি তাতেও তিনি রাজি হননি। তবে মমতাজ বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কীভাবে তিনি এমন মিথ্যে অভিযোগ করতে পারেন তা আমার বোধগম্য নয়। আমাকে চেক দেয়া হয়েছিলো। পরে চেকে ভুল থাকায় সংশোধন করে দিতে ফেরৎ পাঠিয়েছিলাম। আজ পর্যন্ত সেগুলো ফেরৎ পাইনি।
এ বিষয়ে সানলাইফ ইন্সরেন্সের পরিচালক ও মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, গ্রাহক বীমা দাবির টাকা বুঝে না পেলে মামলা করতেই পারেন। এটা তাদের ন্যায্য অধিকার। তবে আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহকের বীমা দাবি পরিশোধ করতে। এত বছরে এত চেষ্টার পরও কেন গ্রাহকের সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কিছু সমস্যা রয়েছে যে কারণে সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা সমস্যা সমাধানে ত্রুটি করছি না।
জানতে চাইলে বীমা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক শাকিল আখতার দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অনেকগুলো অভিযোগ রয়েছে। আমরা গ্রাহকের সমস্যা সমাধানে একাধিন নোটিশ দিয়েছি। তারা নোটিশের জবাবে সমাধান করছে বলে আমাদের জানিয়েছে। তবে আমরা খোঁজ-খবর রাখছি। প্রত্যেকটি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মামলার বাদী সেলিনা বেগম বলেন, তারা আমাদের ১৯ জনকে চেক দিয়েছিল। তবে প্রত্যেকের চেকেই একেকটা ভুল ছিলো। কারও নামে ভুল, কারও একাউন্ট নাম্বারে ভুল, আবার কারও বা টাকার অংকে ভুল। ভুলগুলো ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত তা বুঝতে পারিনি। পরে সেগুলো সংশোধনের জন্য ফেরৎ পাঠানো হয়। তবে তা আর সংশোধন হয়ে ফেরৎ আসেনি। তাই বাধ্য হয়ে মামলা করেছি। এখন গ্রেফতারি পরওয়ানা হওয়ার পর মীমাংসার জন্য আমাদের ডাকা হচ্ছে। মামলা তুলে নিতে বার বার চাপ দেয়া হচ্ছে। মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত মামলা তুলবো না।
আনন্দবাজার/শহক